দুবাইয়ের মরুভূমির বুকে যখন আলোর ঝলকানি আর দর্শকদের গর্জন একাকার, তখনই ইতিহাস রচিত হলো এশিয়া কাপ ২০২৫-এ। বাংলাদেশকে হারিয়ে পাকিস্তান উঠে গেল ফাইনালে, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত। চার দশকেরও বেশি সময় পর ক্রিকেট দুনিয়া দেখতে যাচ্ছে ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল—এক মহারণ, যার প্রতিটি মুহূর্তে থাকবে কোটি মানুষের হৃদস্পন্দনের স্রোত।
ম্যাচের গল্প
দুপুরে পাকিস্তানের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল, খুব একটা বড় রান হবে না। একের পর এক উইকেট হারিয়ে তারা থমকে যায়। তবুও মোহাম্মদ হারিস ও নাওয়াজ কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। শেষ পর্যন্ত ১৩৫ রানে থামে তাদের ইনিংস।
বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য তাড়া করা কঠিন ছিল না। বিশেষ করে ইনিংসের প্রথম দশ ওভারেই পাঁচটি ছক্কা মেরে তারা ম্যাচের গতি নিজেদের দিকে টেনে আনে। কিন্তু এখানেই ঘটলো আসল বিপর্যয়। ছক্কার নেশায় একের পর এক ভুল শট, ফিল্ডারদের হাতে সহজ ক্যাচ, আর রান তোলার তাড়াহুড়ো—সবকিছু মিলে ধ্বংস হয়ে গেল ব্যাটিং লাইনআপ।
সর্বোচ্চ ৩০ রান আসে শামীম হোসেনের ব্যাট থেকে। কিন্তু বাকিদের দায়িত্বহীন ব্যাটিংয়ে হারের গ্লানি ঘিরে ধরে দলকে। শেষ পর্যন্ত মাত্র ১২৪ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।
পাকিস্তানের উল্লাস
এই জয় শুধু পাকিস্তানের ফাইনালে ওঠাই নয়, বরং তাদের মানসিক শক্তি ও দলীয় ঐক্যের প্রতীক। অধিনায়ক সালমান আগা ম্যাচ শেষে বলেন,
“আমরা জানতাম ব্যাটিং আমাদের শক্তি নয় আজ। তাই বোলিং ও ফিল্ডিংয়েই চাপ তৈরি করতে হবে। পুরো দলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই আমাদের জেতালো।”
শাহীন শাহ আফ্রিদি ছিলেন ম্যাচের নায়ক। বল হাতে শুরুতেই বাংলাদেশকে চাপে ফেলে দেন, আবার ব্যাট হাতেও ছোট্ট কিন্তু কার্যকরী ইনিংস খেলেন। পুরস্কার গ্রহণের সময় তিনি বলেন,
“এটা আমার পরিবারকে উৎসর্গ করছি। ভারতের বিপক্ষে আমরা প্রস্তুত, ওটা হবে আলাদা লড়াই।”
বাংলাদেশের হতাশা
অন্যদিকে বাংলাদেশ শিবিরে নেমে আসে গভীর হতাশা। আপাতকালীন অধিনায়ক জাকের আলি স্পষ্ট জানিয়ে দেন,
“আমরা আসলে ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ হয়েছি। ভারতের বিপক্ষে যেমন হয়েছিল, আজও তাই ঘটলো। আমাদের বোলাররা ভালো করেছে, কিন্তু ব্যাটিংয়ের ব্যর্থতাই হারের মূল।”
ক্রিকেট বিশ্লেষক সৈয়দ আবিদ হুসেইন সামি আরও তীব্র সমালোচনা করে বলেন,
“বাংলাদেশের ব্যাটিং ছিল জঘন্য। শুধু ছক্কা মারার চেষ্টা মানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা নয়। মিডল অর্ডারে স্থিরতা না থাকলে কোনো দল জিততে পারে না।”
আরেক বিশ্লেষক উদয় সিনা মনে করেন, “ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা থাকতেই পারে। কিন্তু মাঠে নামলে অন্তত মাথা খাটিয়ে খেলতে হবে। সেই পরিকল্পনার অভাবেই হেরেছে বাংলাদেশ।”
সমর্থকদের আবেগ
বাংলাদেশি ক্রিকেট সমর্থকদের হতাশা সীমাহীন। অনেকেই বলেন, ম্যাচ জেতার মতো পরিস্থিতি ছিল, কিন্তু দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিং সবকিছু শেষ করে দিয়েছে। কারও কারও মতে, এশিয়া কাপে আবারও প্রমাণ হলো, বাংলাদেশ এখনো বড় ম্যাচ সামলানোর মানসিক দৃঢ়তা গড়ে তুলতে পারেনি।
অন্যদিকে পাকিস্তানি সমর্থকরা উল্লাসে মেতে উঠেছে। তাদের জন্য ফাইনালে ভারতকে পাওয়া একধরনের স্বপ্নের মতো। দুবাইয়ের গ্যালারিতে পাকিস্তানি দর্শকরা হাত নেড়ে চিৎকার করছিলেন—“মৌকা মৌকা, এবার ভারতকে হারাবো।”
ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল: এক ঐতিহাসিক মহারণ
ফাইনালে ভারত বনাম পাকিস্তান—এটি শুধু একটি ক্রিকেট ম্যাচ নয়, বরং দুই জাতির আবেগ, ইতিহাস, রাজনীতি, এবং মানুষের সম্পর্কের প্রতিচ্ছবি। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ম্যাচে জয়-পরাজয় মাঠের বাইরের কূটনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।
এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তান এর আগে কখনো ফাইনালে মুখোমুখি হয়নি। এবার তাই বিশ্বজুড়ে দৃষ্টি থাকবে সেই মহারণে। দুবাইয়ের গ্যালারিতে দর্শকের ঢল নামবে, আর কোটি কোটি মানুষ টিভির পর্দায় চোখ রাখবে।
পাঠকের মন্তব্য