জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) এক নারী শিক্ষার্থীকে রাজধানী পরিবহনের বাসের হেলপারের ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগে উত্তাল হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক-সংলগ্ন ডেইরি গেট এলাকা থেকে রাজধানী পরিবহনের ২৫টি বাস আটক করেন।
ঘটনার সূচনা
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হালিমা আক্তার, বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ অনুযায়ী—
-
টিউশনি শেষে সাভার থানা স্ট্যান্ড থেকে রাজধানী পরিবহনের একটি বাসে উঠতে গেলে হেলপার তাকে উঠতে বাধা দেন।
-
পরে তিনি জোর করে উঠলেও বাস চালক ও হেলপার অশোভন গালিগালাজ শুরু করেন।
-
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে নামার সময় হেলপার ইচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কা দিলে হালিমা রাস্তায় পড়ে মারাত্মকভাবে আহত হন।
প্রথমে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হয়, পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন।
সহপাঠীদের ক্ষোভ
হালিমার এক সহপাঠী আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন—
“ডেইরি গেটের মতো কোলাহলপূর্ণ এলাকায় এভাবে একজন শিক্ষার্থীকে ধাক্কা দিতে পারে— এটা কখনো কল্পনাও করিনি। আমাদের নিরাপত্তা কি তবে এতটাই অরক্ষিত?”
অন্য এক শিক্ষার্থী জানান,
???? “যে হেলপার আপুকে ধাক্কা দিয়েছে তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
???? পরিবহন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে— শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভবিষ্যতে আর এমন আচরণ করবে না।
???? একই সঙ্গে হালিমার চিকিৎসার সম্পূর্ণ খরচ বহন করতে হবে।”
রাজধানী পরিবহনের অবস্থান
রাজধানী পরিবহনের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান—
“আমাদের একটি বাসের হেলপারের সঙ্গে এ ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। শিক্ষার্থীরা কয়েকটি বাস আটকে রেখেছে। আমরা জড়িত হেলপারকে শনাক্তের চেষ্টা করছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক রাশিদুল আলম বলেন—
“ঘটনাটি অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। একজন মানুষকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। আগামীকাল বাস মালিকপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবেন। আমরা আলোচনা করে কার্যকর ব্যবস্থা নেব।”
মানবিক বিপর্যয়ের প্রতিচ্ছবি
এ ঘটনা শুধু একটি শিক্ষার্থীকে আহত করেনি, বরং পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ও মর্যাদাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
-
শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, সড়কে নারীদের নিরাপত্তা এখনো নিশ্চিত হয়নি।
-
প্রতিদিন হাজারো শিক্ষার্থী ঢাকায়-সাভারে টিউশনি ও অন্যান্য কাজের জন্য যাতায়াত করে।
-
এমন ঘটনায় নারীরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছেন।
শিক্ষার্থীদের দাবি, এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হলে ভবিষ্যতে তারা আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।
উপসংহার
জাবি শিক্ষার্থী হালিমা আক্তারের সঙ্গে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা বাংলাদেশের নারী নিরাপত্তা, শিক্ষার্থী অধিকার ও গণপরিবহনে শৃঙ্খলার অভাবের একটি স্পষ্ট প্রমাণ।
এখন প্রশ্ন একটাই— দোষীরা কি সত্যিই শাস্তি পাবে? নাকি আবারও দায়িত্ব এড়িয়ে যাবে পরিবহন কর্তৃপক্ষ?
এই ঘটনার সঠিক বিচার নিশ্চিত করা শুধু একজন শিক্ষার্থীর জন্য নয়, বরং বাংলাদেশের সব নারী যাত্রী ও তরুণ শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার জন্য জরুরি।
পাঠকের মন্তব্য