ই-বাংলাদেশ ডেস্ক
বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে আর্থিক খাতে এক নতুন পরিবর্তনের ঢেউ বইছে। মিলেনিয়ালস (Millennials) ও জেন-জেড (Gen Z) প্রজন্ম এখন বিনিয়োগকে শুধু লাভের উদ্দেশ্যে নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, টেকসই উন্নয়ন ও সামাজিক দায়বদ্ধতার হাতিয়ার হিসেবে দেখছে।
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট
গবেষণায় দেখা গেছে, ৭০% এর বেশি মিলেনিয়ালস ও জেন-জেড টেকসই বিনিয়োগ (Sustainable Finance) এবং ESG বিনিয়োগ (Environmental, Social, Governance) এ আগ্রহী। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বৈশ্বিক টেকসই বিনিয়োগ সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর বড় অংশ এসেছে এই তরুণ প্রজন্মের দাবির কারণে।
বাংলাদেশে টেকসই ফাইন্যান্সের উত্থান
বাংলাদেশের মধ্যম বয়স মাত্র ২৭ বছর। অর্থাৎ এই প্রজন্মই মূল কর্মশক্তি ও উদীয়মান বিনিয়োগকারী। জলবায়ু ঝুঁকির কারণে গ্রিন ইনভেস্টমেন্ট বাংলাদেশে কেবল সামাজিক দায়বদ্ধতা নয়, বরং টিকে থাকার প্রশ্নে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১১ সালে সবুজ ব্যাংকিং নীতি এবং ২০২০ সালে সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স নীতি চালু করেছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, শক্তি দক্ষতা ও পরিবেশবান্ধব শিল্পে বিনিয়োগে উৎসাহ দিচ্ছে এসব নীতি।
বিনিয়োগ সংস্কৃতির পরিবর্তন
আগে বাংলাদেশে জমি, সঞ্চয়পত্র ও স্বর্ণই ছিল প্রধান সঞ্চয়ের মাধ্যম। এখন তরুণ প্রজন্ম ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে।
bKash, Nagad, Upay তরুণদের ডিজিটাল ফাইন্যান্সে অভ্যস্ত করেছে।
ব্যাংকগুলো সবুজ আমানত স্কিম চালু করছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ESG গাইডলাইন দিয়েছে।
এসব উদ্যোগ টেকসই বিনিয়োগের ভিত্তি গড়ে দিচ্ছে।
বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা ও বাংলাদেশের সুযোগ
Green Bond বিশ্বে এখন ২ ট্রিলিয়ন ডলারের বাজার। বাংলাদেশ ২০২১ সালে প্রথম গ্রিন বন্ড ফ্রেমওয়ার্ক চালু করেছে।
Greenwashing এড়ানো জরুরি—তরুণ বিনিয়োগকারীরা স্বচ্ছতা ও নির্ভরযোগ্য ডেটা ছাড়া বিনিয়োগে আগ্রহী নয়।
কেন মিলেনিয়ালস ও জেন-জেড গুরুত্বপূর্ণ
তারা নতুন বিনিয়োগ চাহিদা তৈরি করছে।
তাদের কাছে লাভ ও টেকসই উন্নয়ন সমান গুরুত্বপূর্ণ।
তারা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন পণ্য উদ্ভাবনে বাধ্য করছে।
ভবিষ্যতের করণীয়
স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করতে হবে কোন বিনিয়োগ “সবুজ” বা “টেকসই”।
ডিজিটাল ইনভেস্টর এডুকেশন বাড়াতে হবে।
স্বচ্ছ ও প্রযুক্তিনির্ভর বিনিয়োগ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে হবে।
উপসংহার
বাংলাদেশে মিলেনিয়ালস ও জেন-জেড বিনিয়োগকারীরা আগামী দশকে টেকসই ফাইন্যান্সের মূল চালিকাশক্তি হবে। তারা চাইছে এমন এক আর্থিক খাত যেখানে গ্রিন ইনভেস্টমেন্ট, জলবায়ু সহনশীলতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা সমানভাবে গুরুত্ব পাবে।
যদি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখনই তাদের এই চাহিদা পূরণে এগিয়ে আসে, তবে তারা কেবল নতুন প্রজন্মের আস্থা অর্জন করবে না, বরং বাংলাদেশের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।