
কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আয়োজিত তিন দিনের আন্তর্জাতিক স্টেকহোল্ডার সংলাপ থেকে প্রাপ্ত সুপারিশসমূহ আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) অধিবেশনের ফাঁকে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিতব্য উচ্চপর্যায়ের রোহিঙ্গা সম্মেলনে উপস্থাপন করা হবে। এ তথ্য জানান পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম।
তিনি বলেন, “এই সংলাপ মূলত সেপ্টেম্বরের সম্মেলনের প্রস্তুতিমূলক ধাপ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে। এর বিশেষ তাৎপর্য হলো রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সরাসরি অংশগ্রহণ। তারা তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা, হতাশা ও ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা তুলে ধরবেন। এই মতামত ও আলোচনা নিউইয়র্ক সম্মেলনের আলোচনায় প্রতিফলিত হবে।”
সংলাপের কাঠামো চারটি থিম্যাটিক অধিবেশনের ওপর ভিত্তি করে সাজানো হয়েছে:
১. মানবিক সহায়তা ও চলমান তহবিল সংকট মোকাবিলা
২. রাখাইন রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি ও প্রত্যাবাসনের জন্য আস্থা গড়ে তোলা
৩. ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ
৪. টেকসই ও সময়োপযোগী সমাধানের দীর্ঘমেয়াদি কৌশল
পররাষ্ট্র সচিব জানান, সংলাপ শেষে একটি ‘চেয়ার’স সামারি’ তৈরি করা হবে, যা আলোচনার মূল সারমর্ম ও সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করবে এবং নিউইয়র্ক সম্মেলনের গুরুত্বপূর্ণ আউটপুট ডকুমেন্ট হিসেবে কাজ করবে।
মানবিক সহায়তার জরুরি প্রয়োজনীয়তার প্রসঙ্গে সিয়াম বলেন, “সহায়তা না পেলে মানবিক দুর্যোগ সৃষ্টি হবে। আমরা নতুন উৎস থেকেও আর্থিক সহায়তা পাওয়ার চেষ্টা করছি।”
রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের বিষয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের প্রচেষ্টা চলমান, তবে এটি কেবল দেশের ওপর নির্ভরশীল নয়; মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ ও আস্থা গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “রোহিঙ্গা সংকট এখন আঞ্চলিক নয়, বৈশ্বিক দায়িত্বে পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।”
সংলাপের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সমন্বিত প্রচেষ্টা জোরদারের আহ্বান জানাবেন।
‘স্টেকহোল্ডারস’ ডায়ালগ: টেকঅ্যাওয়ে টু দ্য হাই-লেভেল কনফারেন্স অন দ্য রোহিঙ্গা সিচুয়েশন’ শীর্ষক এই সংলাপে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, জাতিসংঘ ও বৈশ্বিক সংস্থার প্রতিনিধি এবং রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন।
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানের পর বাংলাদেশে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। এর পর থেকে সংকট নিরসনে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছে।
পাঠকের মন্তব্য