বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত এলাকায় স্থাপিত ল্যান্ডমাইনে গুরুতর আহত একটি হাতিকে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন বন বিভাগের কর্মীরা। এ ঘটনায় অন্তত ১৫ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী হাতির আক্রমণে আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম শনিবার (১৬ আগস্ট) সকালে গণমাধ্যমকে জানান, গুরুতর আহত তিনজনকে বিজিবির হেলিকপ্টারে করে দ্রুত ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। তাদের মধ্যে রয়েছেন— কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের রাজারকুল রেঞ্জ কর্মকর্তা আলী নেওয়াজ, দুলাহাজরা সাফারি পার্কের পশু চিকিৎসক হাতেম সাজ্জাদ জুলকারনাইন এবং গাজীপুর সাফারি পার্কের পশু চিকিৎসক মো. মোস্তাফিজুর রহমান। বর্তমানে তারা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন আছেন।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম জানান, ৩ আগস্ট নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে ল্যান্ডমাইনের বিস্ফোরণে হাতিটির সামনের ডান পা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিস্ফোরণে হাতিটির পায়ের তালু ও নখ উড়ে যায় এবং প্রচণ্ড যন্ত্রণায় সে খোঁড়াতে খোঁড়াতে চলাফেরা করছে। পাশাপাশি রক্তক্ষরণ ও পানিশূন্যতায় হাতিটি ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে।
তিনি আরও জানান, শুক্রবার (১৫ আগস্ট) দুপুরে বন বিভাগের ১৫ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল আহত হাতিটির চিকিৎসার জন্য রামু উপজেলার দারিয়ারদিঘি সংরক্ষিত বনের ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় হঠাৎ পেছন দিক থেকে হাতিটি তীব্র আক্রমণ চালায়। বনকর্মীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সবাইকে আহত করে। এমনকি হাতিটি বন রক্ষীদের একটি সরকারি অস্ত্র কেড়ে নিয়ে বনভূমির ভেতরে ছুড়ে ফেলে দেয়। পরে দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর সেটি উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আহত হাতিটি বর্তমানে খাবার সংগ্রহেও সমস্যায় পড়ছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা ও নিবিড় পরিচর্যা ছাড়া এ হাতির জীবন রক্ষা করা সম্ভব নয়।
নুরুল ইসলাম বলেন, “আমরা মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে প্রাণীটিকে বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। বনকর্মীরা নিজের জীবন বাজি রেখে আহত হাতিটির পাশে দাঁড়িয়েছেন। এ ঘটনাই প্রমাণ করে মানুষ ও প্রাণীর সহাবস্থান টিকিয়ে রাখতে আমাদের লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে।”
পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বলছে, সীমান্তে ল্যান্ডমাইনের বিস্ফোরণে শুধু মানুষ নয়, বন্যপ্রাণীর জীবনও মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়ছে। আহত হাতিটির চিকিৎসা নিশ্চিত করার পাশাপাশি এ ধরনের ঘটনা যাতে পুনরায় না ঘটে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তারা।
পাঠকের মন্তব্য