বর্তমান ব্যবসায় প্রতিযোগিতা দিন দিন বেড়েই চলেছে, আর এর সাথে বেড়েছে বিক্রয় ও গ্রাহক উন্নয়নে প্রযুক্তির উপর নির্ভরতা। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্রাহক সেবা প্রদান অপরিহার্য। আগে এই কাজের জন্য প্রচুর মানবসম্পদ প্রয়োজন হতো, কিন্তু এখন AI-ভিত্তিক চ্যাটবটের মাধ্যমে অনেক কম সময় ও খরচে এই সেবা দেওয়া সম্ভব। চ্যাটবট সার্বক্ষণিক গ্রাহক সেবা প্রদান করে, ফলে গ্রাহক ধরে রাখা সহজ হয়। তবে সফল হতে হলে জানতে হবে চ্যাটবটের সঠিক ব্যবহার ও এর সীমাবদ্ধতা। সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে লাভবান হওয়া সম্ভব, আর ভুল ব্যবহারে ক্ষতির ঝুঁকিও রয়েছে।
চ্যাটবট মূলত এক ধরনের ডিজিটাল সহকারী, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা ওয়েবসাইটে যুক্ত করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রাহকের প্রশ্নের উত্তর ও সেবা প্রদান করা যায়। সারা বিশ্বে এর জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়ছে। যেমন, দারাজের একটি রিপোর্টে দেখা গেছে, চ্যাটবট ব্যবহার করে তারা গ্রাহক সেবা প্রদানের গড় সময় ৬০% এর বেশি কমিয়ে এনেছে। আবার Business Insider–এর তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৭০% গ্রাহক দ্রুত সেবা পাওয়ার জন্য চ্যাটবট ব্যবহারে আগ্রহী।
বিক্রয় বৃদ্ধিতে চ্যাটবটের নানা ব্যবহার রয়েছে। প্রথমত, এটি দ্রুত কনভারসেশন ও লিড জেনারেশন করে, কাঙ্ক্ষিত গ্রাহকের সাথে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ স্থাপন ও প্রয়োজন অনুযায়ী পণ্য বা সেবা প্রস্তাব করে। দ্বিতীয়ত, ২৪/৭ সেবা প্রদানের মাধ্যমে গ্রাহক যেকোনো সময় তথ্য ও সহায়তা পেতে পারে। তৃতীয়ত, গ্রাহকের পছন্দ অনুযায়ী আপসেল ও ক্রস-সেল কৌশল প্রয়োগ করে। এছাড়া, এটি সাধারণ প্রশ্নের উত্তর (FAQ) দেয়, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ইন্টিগ্রেশন করে সেবা দেয়, এবং অফার ও ডিসকাউন্ট সম্পর্কিত তথ্য সরবরাহ করে গ্রাহককে কেনার সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে।
অর্থনৈতিক দিক থেকেও চ্যাটবট লাভজনক। আগে বিপুল সংখ্যক মানবসম্পদ দিয়ে যে কাজ করা হতো, এখন চ্যাটবট তা দ্রুত ও কম খরচে করতে পারে। Juniper Research (2023)–এর তথ্য অনুযায়ী, চ্যাটবট ব্যবহারে অপারেশনাল খরচ গড়ে ৩০% পর্যন্ত কমে যায়, যা ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসার জন্য বিশেষভাবে উপকারী। তাছাড়া, চ্যাটবট ব্যবহার করা ব্যবসার লিড কনভার্সন রেট ২০% এরও বেশি।
তবে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। প্রযুক্তিগত বা ভাষাগত জটিলতার কারণে চ্যাটবট অনেক সময় বাংলা-ইংরেজি মিশ্রিত ভাষা বুঝতে পারে না। এছাড়া, মানুষের মতো আবেগময় সংযোগ তৈরি করতে না পারায় কিছু গ্রাহক অসন্তুষ্ট হতে পারে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা প্রায়ই প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাবে চ্যাটবট সঠিকভাবে ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়।
সব মিলিয়ে বলা যায়, সঠিক পরিকল্পনা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতার সাথে চ্যাটবট ব্যবহার করলে বিক্রয় বৃদ্ধি, গ্রাহক সেবা উন্নয়ন এবং খরচ কমানোর ক্ষেত্রে এটি একটি কার্যকর হাতিয়ার। তবে ভুল ব্যবহারে গ্রাহকের আস্থা হারানোর ঝুঁকি থাকে। তাই চ্যাটবট ব্যবহারের আগে এর খরচ, সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা ভালোভাবে জেনে নিয়ে উপযুক্ত কৌশল প্রয়োগ করাই সাফল্যের চাবিকাঠি।
পাঠকের মন্তব্য