ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটাতে মধ্যস্থতা করছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন ইঙ্গিত দিয়েছে, যেকোনো শান্তিচুক্তির জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়কেই কিছু ভূখণ্ড ছাড়তে হতে পারে। তবে এই সম্ভাব্য সমঝোতার খবর পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ ও ভয়ের জন্ম দিয়েছে।
আগামী ১৫ আগস্ট আলাস্কা সম্মেলনে ইউক্রেনের ভূখণ্ড নিয়ে সম্ভাব্য চুক্তি আলোচনা হবে। দোনেৎস্কের স্লোভিয়ানস্ক শহর—যেখানে মাত্র কয়েক মাইল দূরেই তীব্র যুদ্ধ চলছে—সেখানে মানুষ দিন কাটাচ্ছেন অনিশ্চয়তায়। শহরের লবণাক্ত হ্রদ কিছুটা শান্তি এনে দিলেও, স্থানীয়রা ভয় পাচ্ছেন চুক্তির ফলে এই এলাকা রাশিয়ার দখলে চলে যেতে পারে।
স্থানীয় সাংবাদিক মিখাইলো সিএনএনকে বলেন, “আমরা অনেকেই এখানেই থাকতে চাই, কিন্তু হয়তো এই জায়গা ছেড়ে যেতে হবে।” তার মতে, ট্রাম্প-পুতিন আলোচনায় স্থানীয়দের মতামত উপেক্ষিত হলে চুক্তির বাস্তবায়ন ব্যর্থ হতে পারে।
দুই বছর আগে ল্যান্ডমাইনে আহত ল্যুডমিলার মতে, আন্তর্জাতিক কূটনীতি প্রায়শই লোকদেখানো হয়। “তারা চিন্তা করে এক, বলে আরেক, আর করে অন্য কিছু,” বলেন তিনি।
২০১৪ সালে রাশিয়া-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দখলে যাওয়া স্লোভিয়ানস্ক পরে ইউক্রেন পুনর্দখল করে। কিন্তু এখন আবার দখল হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সদ্যজাত সন্তানকে কোলে নিয়ে স্থানীয় নারী তাইসিয়া বলেন, “যদি শহরটি রাশিয়ার হাতে যায়, আমরা কিছুই করতে পারব না—শুধু ঘরবাড়ি ছেড়ে যেতে হবে।”
যুদ্ধের ভয়াবহতা প্রতিদিনই ধাওয়া করছে স্থানীয়দের। রুশ ড্রোন ও গোলাবর্ষণ নিয়মিত চলছে। যুদ্ধ থেকে বাঁচতে কিয়েভে গিয়ে সোফিয়া লামেখোভা তার পরিবারসহ বিমান হামলায় নিহত হন। তার মা নাতালিয়া বলেন, “যেখানে বাঁচতে গিয়েছিল, সেখানে গিয়েই যুদ্ধ তাদের ধরেছে।”
ক্রামাতোরস্ক রেলস্টেশনে দেখা যায়, কেউ প্রিয়জনকে স্বাগত জানাচ্ছেন, কেউ যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা স্বজনকে বিদায় দিচ্ছেন। সৈনিক স্বামীকে দুই দিনের ছুটিতে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তেতিয়ানা। ভূখণ্ড বা রাজনীতি নিয়ে তার কোনো আগ্রহ নেই—তিনি শুধু চান স্বামী জীবিত বাড়ি ফিরে আসুক।
যুদ্ধের অনিশ্চয়তার মাঝেও স্লোভিয়ানস্কের মানুষ টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে আলাস্কা সম্মেলনের সম্ভাব্য প্রস্তাব তাদের ভবিষ্যৎকে আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে।
পাঠকের মন্তব্য