আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে পুলিশের জন্য অন্তত ৪০,০০০ বডি-ওয়ার্ন ক্যামেরা (বডিক্যাম) ক্রয়ের পরিকল্পনা নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই ডিভাইসগুলো নির্বাচনের সময় পুলিশের দায়িত্বপালনে স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শনিবার ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে এই পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী এবং ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, ৪০,০০০ বডিক্যাম ক্রয়ের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তিনি বলেন, এসব ক্যামেরা দেশের এক হাজারেরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করবে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও জানান, অক্টোবর মাসের মধ্যে ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যাতে পুলিশ সদস্যরা নির্বাচনের আগে এর মূল বৈশিষ্ট্য, বিশেষত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সক্ষমতা সম্পর্কে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নিতে পারেন।
সরকার ইতোমধ্যেই জার্মানি, চীন ও থাইল্যান্ডের তিনটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ক্যামেরা সরবরাহ নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, নির্বাচন চলাকালে পুলিশ কর্মকর্তা ও কনস্টেবলরা দায়িত্ব পালনের সময় বুকের সঙ্গে এই বডিক্যাম ডিভাইস ব্যবহার করবেন, যা ঘটনাস্থলে তাৎক্ষণিক রেকর্ডিং ও প্রমাণ সংরক্ষণে সহায়ক হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকে কর্মকর্তাদের দ্রুত ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পাশাপাশি হাজার হাজার পুলিশ সদস্যের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, “যে কোনো মূল্যে আমাদের সব ভোটকেন্দ্রে পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। দেশের ইতিহাসে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।”
এছাড়া বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী আসন্ন নির্বাচনের জন্য একটি ‘ইলেকশন অ্যাপ’ চালুর পরিকল্পনার কথা জানান। এই অ্যাপটিতে প্রার্থীদের বিস্তারিত তথ্য, ভোটকেন্দ্রের সর্বশেষ আপডেট এবং অভিযোগ জমা দেওয়ার জন্য ইন্টারঅ্যাকটিভ সুবিধা থাকবে।
প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দেন, অ্যাপটির উদ্বোধন যেন দ্রুত সম্পন্ন হয় এবং দেশের ১০ কোটিরও বেশি ভোটারের জন্য এটি সহজে ব্যবহারযোগ্য হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনকে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ও স্বচ্ছ করতে এই অ্যাপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পাঠকের মন্তব্য