রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার অভিযোগে ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধির হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন,
“ভারত বিপুল পরিমাণ রাশিয়ান তেল কিনছে এবং তা থেকে বিশাল মুনাফা করছে। রাশিয়ার যুদ্ধযন্ত্রের কারণে ইউক্রেনে কত মানুষ মারা যাচ্ছে, তারা তা পরোয়া করে না।”
এই পরিস্থিতিতে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন,
“এই কারণেই আমি ভারতীয় পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে প্রদেয় শুল্ক উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াবো।”
তবে তিনি কত শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধি হবে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানাননি।
বর্তমানে ভারতীয় পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর রয়েছে, যা এই সপ্তাহেই ২৫ শতাংশে উন্নীত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।
নয়াদিল্লির কড়া প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের ঘোষণার পরই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রন্ধীর জয়স্বাল বলেন,
“ভারতকে লক্ষ্যবস্তু করা অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য।”
তিনি আরও বলেন,
“যেকোনো বড় অর্থনীতির দেশের মতো ভারতও জাতীয় স্বার্থ ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে।”
ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের তিন বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো শান্তিচুক্তির কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ অবস্থায় মস্কোর বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞার ইঙ্গিও দিয়েছেন ট্রাম্প। চলতি সপ্তাহেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ-এর বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরোপীয় দেশগুলো রুশ তেল আমদানি কমিয়ে দেওয়ায় ভারত হয়ে ওঠে রাশিয়ার অন্যতম প্রধান তেল ক্রেতা। এতে একদিকে ভারত অর্থ সাশ্রয় করতে সক্ষম হয়েছে, অন্যদিকে রাশিয়াও পেয়েছে বিকল্প বাজার।
তবে নয়াদিল্লি জানিয়েছে, রাশিয়ার প্রতি এই ঝোঁক ছিল ব্যবহারিক এবং বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত, কারণ ইউরোপীয় দেশগুলো বিকল্প উৎসে ঝুঁকে পড়েছিল, এবং ভারতও তেলের চাহিদা মেটাতে রুশ তেলের দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হয়েছিল।
বাণিজ্যিক সম্পর্কের গুরুত্ব
বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারত এখনো রপ্তানিতে বড় অর্থনৈতিক শক্তি নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রই ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার, যার ওপর শুল্ক বৃদ্ধির মতো সিদ্ধান্ত দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে ভারতীয় রপ্তানি খাত বড় ধাক্কা খাবে এবং দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়বে।
পাঠকের মন্তব্য