• হোম > ওমেন এন্টারপ্রেনার | ফিচার > নারী দিবসের ভাবনায় আসুক সমাজ বদলের অংগিকার।

নারী দিবসের ভাবনায় আসুক সমাজ বদলের অংগিকার।

  • রবিবার, ৮ মার্চ ২০২০, ১৩:১৬
  • ৮৯৭

---
বাবার ডাকে ভোর ভোর উঠে পড়েছে ছোট্ট ছেলে। বাবার সঙ্গে তৈরি করছে চা-ব্রেকফাস্ট, মায়ের জন্য। রান্না থেকে ঘর গোছানো, কাপড় ইস্ত্রি— নারী দিবসে সব কাজেই মাকে সাহায্য করছে। কিন্তু ওই একটা দিন। পরের দিন থেকে আবার যে কে সে-ই!

নারী দিবস উপলক্ষে তৈরি এই বিজ্ঞাপন আদতে ঘোর বাস্তব। ওই একটি দিন সাড়ম্বরে পালন করেন অনেকেই। সোশ্যাল মিডিয়া ছেয়ে যায় পোস্টে, মহিলা-চালিত ট্রেনের ভিডিয়ো দিয়ে টুইটারে প্রচার চালান রেলমন্ত্রী, নিজের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট মেয়েদের হাতে দেন প্রধানমন্ত্রীও। আর বাকি ৩৬৪ দিন? মা-বোন-স্ত্রী বা মহিলা সহকর্মীরা কেমন আছেন, খোঁজ নিতে মনে থাকে না কারও।

বাঁশদ্রোণীর বছর তেইশের শোভন মুখোপাধ্যায় অবশ্য ব্যতিক্রম। কলকাতার গণ শৌচাগারে স্যানিটারি ন্যাপকিন রাখতে চেয়ে তিন বছর ধরে কাজ করছেন তিনি। দক্ষিণ কলকাতার কিছু গণ শৌচালয়ে ইতিমধ্যেই প্যাড রাখা ও ভেন্ডিং মেশিন বসানোর কাজ করেছেন। ইচ্ছে, সারা শহরে ১০০টি গণ শৌচালয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ভেন্ডিং মেশিন বসানো। কিন্তু এই ভাবনা কেন? ‘কলকাতার প্যাডম্যান’ শোভন বলছেন, ‘‘রাস্তায় এক বান্ধবীর ঋতুস্রাব শুরু হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছিল। সেই ঘটনা আমাকে ভাবিয়ে তোলে। মনে হয়েছিল, রাস্তার শৌচালয়ে প্যাড রাখলে সুবিধা হবে।’’ সেই শুরু। ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতা এবং প্যাড নিয়ে সামাজিক ছুঁতমার্গ কাটাতেও প্রচার চালাচ্ছেন শোভন। নারী দিবসের লোক দেখানো দরদ নয়, বরং বিভিন্ন সময়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে মহিলাদের সচেতন করাই লক্ষ্য শোভনের।

২০১৪-এ রাষ্ট্রপুঞ্জের বার্ষিক অধিবেশনে মেয়েদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য পুরুষদের ডাক দিয়ে অভিনেত্রী এমা ওয়াটসন শুরু করেছিলেন ‘হি ফর শি’ প্রচার। লিঙ্গ-বৈষম্য রোধে কাজ করা অতহর আমির খানকে সেই পুরুষদের দলে ফেলা যায় অনায়াসেই। ২০১৫-র আইএএস পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থানাধিকারী, কাশ্মীরের অনন্তনাগের যুবক অতহর আমির রাজস্থানের ভীলওয়াড়া জেলার বদনোর এলাকায় সাব-ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে আসার পরেই বদলাতে থাকে অনেক কিছু।

কেমন আছেন বদনোরের মহিলারা? অতহর আমির বলছেন, ‘‘এখানে উপার্জন করা মহিলার সংখ্যা প্রায় নেই-ই। নারী-শিক্ষার হার খুব কম। বাল্যবিবাহের কারণে অনেক কিশোরী স্কুলছুট। বিয়ের পরে আত্মহত্যাও করে অনেক কিশোরী। খরচ কমাতে বড় দিদির সঙ্গে ছোট বোনের বিয়ে দেওয়া বা পরিবারের কেউ মারা গেলে গ্রামে মৃত্যু-ভোজ দিতে হবে বলে বাড়ির কোনও ছোট মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেওয়া— এমনও হয়।’’ তাই প্রশাসক হিসেবে এসে মহিলাদের স্বার্থে এই প্রথাকেই রুখে দিতে চেয়েছেন অতহর আমির। মেয়েদের শিক্ষিত করে তুলে, সর্বস্তরে প্রচার এবং গ্রামে গ্রামে খবর দেওয়ার লোক রেখে গত এক বছর এটাই তাঁর পাখির চোখ। ‘‘শতাব্দীপ্রাচীন এই প্রথা বন্ধ করতে সময় তো লাগবেই।

তবে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে’’— প্রত্যয়ী অতহর।

সাংবাদিক হিসেবে অ্যাসিড-আক্রান্তদের লড়াই কাছ থেকে দেখেছিলেন অধুনা দিল্লিবাসী অলোক দীক্ষিত। দেখেছিলেন, কী ভাবে এক লহমায় ‘শেষ’ হয় আক্রান্তদের জীবন। তাই এক দিন চাকরি ছেড়ে সেই মেয়েদের পাশে দাঁড়ান অলোক। ‘‘আমাদের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার লক্ষ্য, অ্যাসিড-হামলার খবর পেলে বাড়ি গিয়ে আক্রান্তের পাশে দাঁড়ানো। তাঁকে সর্বতো ভাবে সাহায্য করা।’’ রোজগারের পথ খুলে দিতে আগরা এবং লখনউয়ে অলোক চালু করেছেন কাফেটেরিয়া, যা চালান অ্যাসিড-আক্রান্ত মহিলারাই। এই অ্যাসিড-শাপের থেকে মুক্তি কি সম্ভব? অলোকের জবাব, ‘‘এ দেশে অ্যাসিড-হামলা কিন্তু শুধু মেয়েদের উপরেই হয় না। তাই এই অপরাধ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত থামছি না।’’

দিবস পালনের দেখনদারিতে নয়। বরং বছরভর জীবনযুদ্ধে ভরসা থাকুন ওঁরা।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/801 ,   Print Date & Time: Saturday, 7 June 2025, 08:04:17 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh