• হোম > ফিচার > অর্থ পাচারে ‘এগিয়ে যাচ্ছে’ বাংলাদেশ

অর্থ পাচারে ‘এগিয়ে যাচ্ছে’ বাংলাদেশ

  • শুক্রবার, ৬ মার্চ ২০২০, ০৪:২৬
  • ১৩৪৭

---

অধিকাংশ অর্থনৈতিক সূচকে পিছিয়ে পড়লেও অবৈধভাবে অর্থ পাচারে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ৷ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) সর্বশেষ প্রতিবেদন সে কথাই বলছে৷

অর্থ পাচারে ‘এগিয়ে যাচ্ছে’ বাংলাদেশ

অধিকাংশ অর্থনৈতিক সূচকে পিছিয়ে পড়লেও অবৈধভাবে অর্থ পাচারে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ৷ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) সর্বশেষ প্রতিবেদন সে কথাই বলছে৷

জিএফআই-এর প্রতিবেদন বলছে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে এক হাজার ১৫১ কোটি ডলার বা ৯৮ হাজার কোটি টাকা৷ ২০১৪ সালে ৯১১ কোটি ডলার বা ৭২ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা ৷ আর ২০১৩ সালে বাংলাদেশ থেকে ৯৬৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার বা ৭৬ হাজার ৩৬১ কোটি ৪০ লাখ টাকা পাচার হয়েছে৷

সব মিলিয়ে ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৯৬৬ কোটি ডলার বা সাত লাখ চার হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা- যা বাংলাদেশের চলতি বাজেটের (২০১৯-২০২০) প্রায় দুইটির সমান৷

তবে বাংলাদেশ থেকে ২০১৫ সালের পর কী পরিমাণ  অর্থ পাচার হয়েছে  তা প্রকাশ করতে পারেনি জিএফআই৷ কারণ হিসেবে তারা বলছে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিশ্বের অন্যান্য দেশ তথ্য দিলেও বাংলাদেশ ২০১৬ ও ২০১৭ সালের কোনো তথ্য দেয়নি৷ তাই অন্যান্য দেশের ব্যাপারে ২০১৭ সালের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন করা হলেও বাংলাদেশের জন্য ২০১৫ সালের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে৷

জিএফআই বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের দুটি প্রধান উপায় চিহ্নিত করেছে৷ এগুলো হচ্ছে, পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে মূল্য বেশি দেখানো (ওভার ইনভয়েসিং) এবং রফতানিতে মূল্য কম দেখানো (আন্ডার ইনভয়েসিং)৷ সংস্থাটি বলছে বাংলাদেশের মোট বাণিজ্যের প্রায় ১৯ শতাংশই কোনো না কোনোভাবে পাচার হচ্ছে৷

পাচার আরো বেশি হয়

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জান বলেন, ‘‘২০১৫ সালের পর তথ্য দেয়া না হলেও বাংলাদেশ থেকে যে অর্থ পাচার বাড়ছে তা আমরা নানা ভাবেই দেখেছি৷ আর জিএফআই যে পরিমাণ অর্থ পাচারের কথা বলছে সেটা মোট পাচারের ৭০ ভাগ৷ তারা বাণিজ্যের আড়ালে পাচারের কথা বলছে৷ আরো ৩০ ভাগ অর্থ হুন্ডিসহ নানা উপায়ে পাচার হয়৷’’

তিনি বলেন, ‘‘আমরাও এনিয়ে কাজ করেছি৷ আর তাতে দেখেছি বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিরা বছরে ৩.৫ বিলিয়ন ডলার পাচার করছে৷ আর বাংলাদেশের যারা মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে কর্মরত আছেন সেখানে অবৈধভাবে ভিসা কিনতে আরো এক বিলিয়ন ডলারের মতো পাচার হয়৷’’

বিআইডিএস-এর অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদও মনে করেন, বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার অনেক বেড়ে গেছে৷ আর এটা বন্ধ করতে সরকারের দিক থেকে কোনো কার্যকর প্রক্রিয়া তাঁর চোখে পড়ছেনা৷ তিনি বলেন, ‘‘পাচার হওয়া টাকার বড় অংশ কালো টাকা৷ শুধু কর না দেয়া টাকা নয়৷ অতি কালো টাকাও আছে৷ মাদক ব্যবসা, ঘুস, দুর্নীতির টাকা৷ তাই টাকা পাচার বেড়ে যাওয়া মানে হলো দেশে ঘুস, দুর্নীতি বেড়ে যাওয়া৷ অবৈধ আয় বেড়ে যাওয়া৷”

তিনি বলেন, ‘‘টাকা পাচারের যে বাণিজ্যিক পন্থা তার মধ্যেই কালো টাকা ঢুকিয়ে দেয়া হয়৷’’

পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা সম্ভব?

পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা এখন সম্ভব বলে মনে করেন ড. ইফতেখারুজ্জামান৷ এটা কঠিন হলেও এখন আর অসম্ভব নয়৷ তিনি বলেন, ‘‘যেসব দেশে পাচার হয়েছে এবং যেসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পাচার হয়েছে সেটা চিহ্নিত করতে পারলে ওইসব দেশে যোগাযোগ করে আইনগতভাবে এখন ওই অর্থ ফেরত আনা যায়৷ কিন্তু বড় বিষয় হলো, অর্থ পাচার বন্ধ করা৷ বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, এনবিআর, দুদক, অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস চাইলে এটা করতে পারে৷ তারা টাকা ফেরত আনায়ও উদ্যোগ নিতে পারে৷ কিন্তু যারা পাচারের সাথে জড়িত তারা বড় বড় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি৷ তাঁরা ক্ষমতা কাঠামোয় আছেন৷ ফলে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়না৷’’

কালো অর্থনীতি বড় হবে

ড. নাজনীন বলেন, ‘‘সাধারণভাবে চিকিৎসা ও শিক্ষার কাজে বিদেশে টাকা পাঠানোর লিমিট কম থাকায় কিছু টাকা পাচার হয়৷ এটা নিয়ন্ত্রণ করা যায় লিমিট বাড়িয়ে৷ তবে যাদের বিদেশে ব্যবসা আছে তারা টাকাটা দেশেই আনেনা৷ তারা হয়তো দেশের বাইরে একটি নিরাপদ আশ্রয় গড়ে তুলতে চান৷ আর বড় অংশ হলো দেশের টাকা বিদেশে পাঠানো৷ ফলে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷’’

তাঁর মতে, ‘‘এই পাচার বন্ধ করা না গেলে কালো অর্থনীতি বড় হবে৷ দেশে বেআইনি এবং অবৈধ ব্যবসা বাড়বে৷ বাড়বে ঘুস, দুর্নীতি৷’’

সংখ্যায় বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচার

এক হাজার কোটি ডলার

শুধুমাত্র ২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে এই পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি’ (জিএফআই)৷ বাংলাদেশি মুদ্রায় সেটি প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকার সমান৷

তিনটি পদ্মা সেতু

সবশেষ হিসেব অনুযায়ী, পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২৮ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা৷ অর্থাৎ শুধু ২০১৪ সালে যে পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে তা দিয়ে প্রায় তিনটি পদ্মা সেতু বানানো যেত৷

প্রতিবছর বাড়ছে

জিএফআই-এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচারের পরিমাণ প্রায় প্রতিবছরই বাড়ছে৷ ২০০৪ সালে প্রায় ৩৩৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার পাচার হয়েছিল

গড়

জিএফআই-এর কাছে ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের হিসেব আছে৷ এতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে গড়ে প্রতিবছর ৫৫৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার পাচার হয়েছে৷

শিক্ষা বাজেটের তিন গুণ

গতবছরের জুনে বাংলাদেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ’ বা সিপিডি জানায়, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে, তা শিক্ষা বাজেটের ৩ দশমিক ৬ গুণ এবং স্বাস্থ্য বাজেটের ৮ দশমিক ২ গুণ৷ জিএফআই-এর হিসেবে ২০১৩ সালে পাচার হয়েছে ৯৬৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার৷

জাতিসংঘের তথ্য

ইউএনডিপির এক প্রতিবেদন বলেছে, ১৯৭০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে প্রতিবছর গড়ে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে৷ সব মিলিয়ে এই ৪০ বছরে যে অর্থ পাচার হয়েছে তার পরিমাণ ২০১০ সালে বাংলাদেশের মোট জিডিপির (১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি) ৩০ দশমিক ৪ শতাংশ বলে জানায় জাতিসংঘের এই সংস্থা৷

অর্থপাচারের পন্থা

সারা বিশ্বেই আমদানি-রপ্তানির লেনদেনে ইচ্ছে করে ভুল মূল্য উপস্থাপনের মাধ্যমে (ট্রেড মিস প্রাইসিং) অর্থপাচার হয়ে থাকে৷ বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচারের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই কৌশল অবলম্বন করা হয়৷

পাচার রোধে ব্যবস্থা

বাংলাদেশ সরকারের তিনটি সংস্থা অর্থ পাচার রোধে কাজ করছে৷ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্তর্ভুক্ত ‘বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট’ এবং দুর্নীতি দমন কমিশন৷

সূত্র: DW


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/780 ,   Print Date & Time: Wednesday, 26 November 2025, 09:33:48 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh