• হোম > এক্সক্লুসিভ | দক্ষিণ আমেরিকা | রাজনীতি > প্রশান্ত কিশোর: যার হাত ধরে নরেন্দ্র মোদীর উত্থান

প্রশান্ত কিশোর: যার হাত ধরে নরেন্দ্র মোদীর উত্থান

  • শুক্রবার, ৬ মার্চ ২০২০, ০৪:০৭
  • ৬৬৪

প্রশান্ত কিশোর
আমরা যদি কখনো অসুস্থ বোধ করি, তাহলে সবার আগে কার কাছে যাই? নিশ্চয়ই চিকিৎসকের কাছে। কারণ তারাই একমাত্র আমাদের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সঠিক উপায় বাতলে দিতে পারেন। এ তো গেলো মানুষের কথা। এবার রাজনীতির দিকে দিকে নজর দেওয়া যাক। রাজনৈতিক দলগুলো যখন অসুস্থ হয়, তখন তারা কোথায় যায়? রাজনৈতিক দলের অসুস্থতা মানে হচ্ছে তারা যখন ব্যর্থতার মধ্যে দিয়ে যায়। এই প্রশ্নের উত্তর হতে পারে কোনো উপদেষ্টা। বাস্তবিক অর্থেই প্রতিটি রাজনৈতিক দল প্রধানের বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা থাকেন, যাদের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন দলীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল সময়ের ব্যবধানে খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে গেছে এবং যাচ্ছে। আর তারা প্রায় সকলেই একজন চিকিৎসকের কাছে গেছেন। আর তিনি হলেন প্রশান্ত কিশোর। যিনি প্রকৌশলী থেকে রাজনীতির ডাক্তার বনে গেছেন।

১৯৭৭ সালে বিহারের রোহতাস জেলার কোরান গ্রামে জন্ম নেওয়া প্রশান্ত কিশোর বর্তমানে ভারতীয় রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত নাম। আর সেটা তার পেশা নির্বাচনী কৌশলীর জন্যই। ক্যারিয়ারের শুরুতে তিনি জনস্বাস্থ্য কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। আর এই কাজের মাধ্যমেই তিনি ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের নজর কাড়েন। ২০০০ সালের মাঝামাঝিতে জাতিসংঘের কর্মকর্তা হিসেবে আফ্রিকায় নিয়োগ পান। সেখানে সাত বছর চাকরি করে ২০০৭ সালে দেশে ফেরেন। তখন একবার ভারতীয় রাজনীতিতে নিজেকে জড়ানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। কিন্তু ২০১২ ও ২০১৪ সালে মোদীর সাফল্যের প্রধান কারিগর ছিলেন প্রশান্ত কিশোর। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি যেখানেই হাত দিয়েছেন সেখানেই সোনা ফলেছে। আর এজন্যই তার বুদ্ধি-পরামর্শ নেওয়ার জন্য ভারতের বড় বড় রাজনীতিবিদরা হন্যে হয়ে ছুটছেন।

যেভাবে প্রশান্ত কিশোরের উত্থান
২০০৭ সালে প্রশান্ত কিশোর কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক রাহুল গান্ধীর সাথে দেখা করেন। তখন তিনি রাহুল গান্ধীর হাতে তার ‘সোশ্যাল সেক্টর ব্লুপ্রিন্ট’ নামে তার একটি পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। তার চিন্তা-ভাবনা ছিল বেশ বড়। ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আমূল বদলে দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক তাকে হতাশ করেন। রাহুল গান্ধী তখন প্রশান্ত কিশোরকে তার নিজ আসন অমেঠিতে একটি ভালো মানের হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রস্তাব দেন। কিন্তু রাহুলের সেই প্রস্তাবকে নাকচ করেন প্রশান্ত। এরপর তিনি আবারো আফ্রিকায় জাতিসংঘের চাকরিতে ফিরে যান।

২০১০ সালে প্রশান্ত কিশোর আফ্রিকার চাঁদে ইউনিসেফের সোশ্যাল পলিসি অ্যান্ড প্লানিংয়ের প্রধান হিসেবে নিয়োজিত থাকাকালীন একটি রিপোর্ট হাতে পান। ইউনিসেফের পরিকল্পনা কমিশনের রিপোর্টে ভারতের পিছিয়ে পড়া রাজ্যগুলোর স্বাস্থ্য সূচকের বেহাল দশা উঠে আসে। এই বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বরাবর চিঠি লেখেন। সেই চিঠিতে তিনি ভারতের অনেক উন্নত রাজ্যেরও খারাপ অবস্থা তুলে ধরেন। কিন্তু তার এই চিঠি প্রধানমন্ত্রীর নিকট গুরুত্ব পায়নি। তবে প্রশান্তের চিঠির একটি কপি ভারতের অন্যতম উন্নত রাজ্য গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে পাঠানো হয়। সেই চিঠিতে গুজরাটের স্বাস্থ্যখাতের সমালোচনা করা হলেও নরেন্দ্র মোদী দেখেছিলেন ভিন্ন কিছু। সেই চিঠি পাওয়ার পরই প্রশান্তের সাথে দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন মোদী। পরবর্তীতে ২০১১ সালের অক্টোবরে মোদীর সাথে প্রশান্তের সাক্ষাৎ হয়। মোদী তাকে নিজের সোশ্যাল সেক্টর পলিসি অ্যাডভাইজর হিসেবে নিয়োগ দেন।

২০১১ সালের ডিসেম্বরেই প্রশান্ত কিশোর মোদীর সরকারি বাসভবনের বাইরেও নিজের কাজ শুরু করেন। এবং খু্ব দ্রুত মোদীর ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে জায়গা করে নেন। তবে মোদীর রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং গুজরাট সরকারের কোনো পদেই ছিলেন না প্রশান্ত। কিন্তু মোদীর কাছে তার অনেক বেশি গুরুত্ব ছিল। ২০১২ সালে গুজরাটের বিধানসভার নির্বাচনের প্রচারণা ও কৌশল নির্ধারণের দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রশান্তকে। তবে তার জন্য কাজ ছিল সহজ ছিল না। ২০০১ সাল থেকে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন মোদী। তার সময়ে রাজ্যে ব্যাপক শিল্পায়ন ও উন্নতি হলেও দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে বিরোধীতাও ছিল অনেক। পাশাপাশি গুজরাট দাঙ্গার কলঙ্ক তো ছিলই। কিন্তু এসব পাশ কাটিয়ে মোদীর উন্নয়নের সাথে ঐক্যের বার্তাকে যোগ করে ব্যাপক প্রচারণার কৌশল নির্ধারণ করেন প্রশান্ত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে পুরো গুজরাটে মোদীর উন্নয়নের বার্তাকে ছড়িয়ে দেন ৩৫ বছরের এক তরুণ। তার প্রচার ও কৌশলের হাত ধরে মোদী গুজরাটে আরো একবার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন।

২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন এবং সিএজি
গুজরাটে মোদীর ধারাবাহিক সাফল্যের পর তাকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী করার কথা ভাবে বিজেপি। এর জন্য মোদী আস্থা রেখেছিলেন তার পুরনো সৈনিক প্রশান্ত কিশোরের হাতে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে সিটিজেন্স ফর অ্যাকাউন্টেবল গভর্ন্যান্স (সিএজি) নামে সংস্থা চালু করেন। সিএজি একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হলেও এতে ভারতের প্রখ্যাত আইআইটি ও আইআইএমের পেশাদার বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ দেওয়া। মোট ৬০ জন কর্মকর্তার মধ্যে বেশ কয়েকজন জেপি মর্গান চেজ ও গোল্ডম্যান সাচের মতো কোম্পানিতে চাকরি করেছেন। শুরুতে সিএজিকে একটি স্বাধীন নীতি-নির্ধারণী প্রতিষ্ঠান হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এবং দাবি করা হয় এই প্রতিষ্ঠানের সাথে মোদীর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের মোদীর ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের সকল দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়।

মোদীর নির্বাচনীর প্রচারণার জন্য সিএজি মোট পাঁচ লাখ স্বেচ্ছাসেবী সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ করে। সিএজি ভারতের মোট ১৫টি রাজ্যে সফলভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। সেখানে তাদের এক হাজারের বেশি সক্রিয় সদস্য এবং এক লাখের বেশি স্বেচ্ছাসেবী ছিল। এই বিপুল পরিমাণ জনবলকে প্রশান্ত পাঁচটি ডোমেইনের সাহায্যে পরিচালনা করতেন। ডোমেইনগুলো হলো ডেটা অ্যান্ড অ্যানালাইটিকস, মিডিয়া অ্যান্ড এক্সটার্নাল কমিউনিকেশন, রিসার্চ, ডিজিটাল কমিউনিকেশন ও ফিল্ড অপারেশন।

২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারণায় মোদী ছিলেন সবচেয়ে সৃজনশীল। আর তার পেছনে ছিলেন প্রশান্ত কিশোর তথা পিকে। সেই সময় থেকে মিডিয়াতে তিনি পিকে নামে পরিচিতি পান। তার সংগঠন সিএজি প্রথমে ‘মন্থন’ নামে একটি প্রতিযোগিতায় আয়োজন করে। এই প্রতিযোগিতায় ভারতের প্রথম সারির কলেজগুলোতে হতে ৭০০০ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। তিন মাসব্যাপী সেই প্রতিযোগিতার মূল বিষয় ছিল নির্বাচনের নীতি নির্ধারণের জন্য নতুন নতুন আইডিয়া বের করা। এরপরই তিনি ‘স্ট্যাচু অব ইউনিটি’ নামে একটি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ডাক দেন। এর অপর নাম ছিল ‘রান ফর ইউনিটি’। এর উদ্দেশ্য ছিল সরদার প্যাটেলের মূর্তি তৈরি করার জন্য ভারতের পাঁচ লাখ গ্রাম থেকে ৭০০ টন লোহা সংগ্রহ করা। এই আন্দোলন পরবর্তীতে ছয়টি গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়ে।

মোদীর নির্বাচনী প্রচারণায় বিরোধীদের প্রতিটি ভুলের সুযোগ কাজে লাগায় সিএজি। নরেন্দ্র মোদীর ছোটবেলায় রেল স্টেশনে চা বিক্রি করা নিয়ে কটাক্ষ করেন কংগ্রেস নেতা মনি শঙ্কর আয়ার। এর পরপরই প্রশান্ত কিশোর ভারতের প্রায় এক হাজার চায়ের দোকানে ‘চায় পে চর্চা’ নামে একটি অনুষ্ঠান চালু করে। যেটি খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করে। ভারতের নির্বাচনে উত্তর প্রদেশ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এখানে আসন সংখ্যা সর্বাধিক। এই অঞ্চলকে টার্গেট করে সিএজি। উত্তর প্রদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ‘মোদী আনে ওয়ালে হে’ নামে একটি ক্যাম্পেইন চালু করে। এই ক্যাম্পেইনে মোট ৪০০টি ভ্যানে করে মোদীর ভাষণের ভিডিও প্রচার করা হতো। সবশেষে পিকে’র সিএজি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারণা চালায়। এসব প্রচারণার মাধ্যমে তরুণ ভোটারসহ সকলের কাছে মোদীকে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। এবং সবশেষে প্রশান্ত কিশোরের সৃজনশীল প্রচারণার মাধ্যমে মোদী বিপুল ব্যবধানে কংগ্রেসকে পরাজিত করেন।

কিন্তু বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরপরই প্রশান্তের সাথে মোদীর দূরত্ব বাড়তে থাকে। আর এর জন্য বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ এবং আরো বেশ কয়েকজন বড় মাপের নেতাকে দায়ী করা হয়। মনোমালিন্য প্রকট আকার ধারণ করলে মোদীর সঙ্গ ছাড়েন প্রশান্ত। তখন সিএজিকে পরিবর্তন করে গড়ে তোলেন ইন্ডিয়ান পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি (আইপিএসি)। কানাডার সংস্থা পিএসি’র আদলে তিনি তার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। পিএসি মূলত যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার ভোট প্রচার ও নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণের কাজ করে।

২০১৫ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচন
২০১৫ সালে সিএজি’র বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা প্রশান্তের নেতৃত্বে আইপিএসিতে আবারো একত্রিত হন। বিজেপির ছাড়ার পর প্রশান্ত এবার বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে মনোযোগ দেন। এবার তাকে ভাড়া করেন জনতা দল (জেডিইউ) এর প্রধান এবং বিহারের দুবারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার। মোদীর সাফল্যে পেছনে কার হাত ছিল সেটা নীতিশের অজানা ছিল না। তাই তৃতীয়বারের মতো মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার জন্য প্রশান্তের দ্বারস্থ হয় জেডিইউ প্রধান। আইপিএসি নীতিশের সাথে কাজ করার আগে তার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই ছিল না। তার না ছিল ভালো কোনো কৌশল, না ছিল কোনো জোট। কিন্তু প্রশান্তের ছোঁয়ায় সবকিছু রাতারাতি বদলে যায়।

বিহারের প্রতিটি জেলায় আইপিএসির দুই থেকে তিনজন করে সদস্যকে নিয়োগ দেওয়া হয়। পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ের ২৫০ জন সদস্যকেও নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা প্রথমে বিহারের ভোটারদের দ্বারে দ্বারে, এরপর পঞ্চায়েত, ব্লক লেভেল ও সবশেষ জেলা পর্যায়ে প্রচারণা চালানো শুরু করে। পাশাপাশি ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, প্রিন্ট মিডিয়া ও টেলিভিশনে প্রচারণা চালানো হয়। এছাড়াও বিহারের বড় বড় ভবনের বিলবোর্ডগুলোকে নীতিশের ছবি জায়গা করে নেয়। শহর জুড়ে এলইডি লাইট দিয়ে তৈরি করা দলীয় প্রতীক নিয়ে দাপিয়ে বেড়াতে থাকে শত শত ট্রাক।

সেই সাথে ভাড়া করা হয় দক্ষ স্ক্রিপ্ট রাইটার। তাদের মাধ্যমে নীতিশের ভাষণ ঠিক করে দেওয়া হতো। অঞ্চলভিত্তিক সমস্যা নির্ধারণ করে সেসব নিয়ে ভাষণ লেখা হতো। ফলে বিহারের প্রতিটি অঞ্চলের মানুষই মনে করতেন নীতিশ কুমার তাদের নিয়ে ভাবছেন। তাদের সেই ভাবনা নির্বাচনের ফলাফল বদলে দেয়। নীতিশ কুমার বড় সাফল্য পান। তবে তার এই সাফল্য সরকার গঠনের জন্য যথেষ্ট ছিল না। পরবর্তীতে নীতিশ কুমারের দল জেডিইউ’র সাথে জোট গঠন করে লালু প্রসাদের আরজেডি। মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসেন নীতিশ। এবার প্রশান্ত কিশোরকে নিয়ে রীতিমতো গবেষণা শুরু করে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম। প্রশান্তকে জেডিইউ’র সহ-সভাপতির পদে বসান নীতিশ কুমার। সেই পদে তিনি এখনো আছেন।

কংগ্রেসের সাথে জোট গঠন
২০১৬ সালে পাঞ্জাব ও উত্তর প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের জন্য প্রশান্ত কিশোর ও তার দলকে ভাড়া করে কংগ্রেস। এর আগের দুটি বিধানসভা নির্বাচনে হেরে পাঞ্জাবে খাদের কিনারে চলে যায় কংগ্রেস। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য পিকে এবং অমরিন্দর সিংয়ের উপর ভরসা রাখেন রাহুল গান্ধী। প্রশান্তের সহায়তায় সাফল্য পায় কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী হন অমরিন্দর সিং। ২০১৬ সালে পাঞ্জাবে কংগ্রেসের এই সাফল্যের বড় কারিগর ছিলেন পিকে। আর এটি অমরিন্দর সিং থেকে শুরু করে ভারতের মিডিয়া সকলেই স্বীকার করেছে।

পাঞ্জাবে সাফল্য মিললেও প্রথমবারের মতো নির্বাচনে ধাক্কা খান প্রশান্ত। কংগ্রেসের জন্য তিনি নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণ করলেও সেটা কোনো কাজেই দেয়নি। বিজেপির কাছে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয় কংগ্রেস। তিনশোর বেশি আসন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হন যোগী আদিত্যনাথ। বিপরীতে কংগ্রেসের আসন ছিল মাত্র ৭টি। তবে ২০১৭ সালে উত্তর প্রদেশের নির্বাচনের সময় সোনিয়া গান্ধীর মেয়ে এবং রাহুল গান্ধীর বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে নামার কথা বলেছিলেন প্রশান্ত। কিন্তু তার সেই পরামর্শ শোনেনি কংগ্রেস। প্রিয়াঙ্কা সেই নির্বাচনে আসলে হয়তো ফলাফল বদলে যেতেও পারতো।

প্রশান্ত কিশোরের পরবর্তী লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গ
উত্তর প্রদেশে হারের পর কিছুটা ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিলেন প্রশান্ত কিশোর। কিন্তু আবারো সাফল্য পেতে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। তার সর্বশেষ পরীক্ষা ছিল অন্ধ্রপ্রদেশে। সেখানকার স্থানীয় রাজনৈতিক দল ওয়াইএসসিআরপি’র দল প্রধান জগমোহন রেড্ডির হয়ে ২০১৭ সালের মে থেকে কাজ করছেন প্রশান্ত। টানা দুই বছর ধরে কাজ করে রেড্ডিকে বিপুল সাফল্য এনে দিয়েছেন তিনি। সেখানকার বিধানসভা নির্বাচনে ১৭৫টি আসনের মধ্যে দেড়শোর বেশি আসন পেয়েছে ওয়াইএসসিআরপি। বিধানসভার পর লোকসভা নির্বাচনেও সাফল্য পেয়েছে জগমোহনের দল। সারাদেশে বিজেপি বিপুল সাফল্য পেলেও অন্ধ্রপ্রদেশে সুবিধা করতে পারেনি। সেখানকার ২৫টি আসনের মধ্যে ২৩টি আসন পেয়েছে রেড্ডি দল।

রেড্ডির সাফল্য মিললেও সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে ফলাফলে বিপর্যয় ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেসের। সেখানে উত্থান ঘটেছে বিজেপির। আগের নির্বাচনের চেয়ে ১৬টি আসন বেশি পেয়েছে বিজেপি। যার ফলে কপালে ভাঁজ পড়েছে তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জির। তাই এবার তিনিও প্রশান্ত কিশোর ও তার দলের দ্বারস্থ হয়েছেন। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে পিকে’র সাথে জোট বেঁধেছেন মমতা। লক্ষ্য বিজেপিকে আটকানো। মমতার সাথে জোট বেঁধেই তিনি পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে বড় এক পরিবর্তন এনেছেন। তার সাথে দেখা করার পরই মমতা ব্যানার্জি তার নিজ দলের নেতা-কর্মীদের কাটমানি বা ঘুষ ফেরত দিতে বলেছেন। মমতার এই সিদ্ধান্তে পেছনে যে প্রশান্ত রয়েছেন সেটা প্রায় সকলেই বুঝে গেছেন। এর মাধ্যমে তিনি মূলত তৃণমূলের প্রতি মানুষের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে চাচ্ছেন। এখন প্রশান্ত পঞ্চমবারের মতো সাফল্য পান কি না সেটাই দেখার বিষয়।

প্রশান্ত কিশোরের সাফল্যের রহস্য কী?
প্রশান্ত কিশোর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হয়ে নির্বাচনী প্রচারণার যে কাজ করেন, তার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে থাকেন। তাই এখানে সাফল্য-ব্যর্থতার হিসাব তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে তার সাফল্যের হারই বেশি। কিন্তু তার এই সাফল্যের রসায়ন কী? ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক এবং প্রশান্তের সাথে কাজ করা নেতাদের থেকে সেই সাফল্যের সূত্র সম্পর্কে জানা গেছে। পিকে’র সাফল্যের প্রথম সূত্র হলো, রিসার্চ বা গবেষণা। তিনি প্রতিটি আসনের সমস্যাগুলো আগে নির্ধারণ করেন। তারপর তিনি তার রণকৌশল সাজান। দ্বিতীয়ত, তার সাথে যারা কাজ করেন তাদের প্রায় সকলেই পেশাদার। তাদের মাধ্যমে অভিনব প্রচারণা এবং কর্মসূচি নির্ধারণের পাশাপাশি বাস্তবায়ন করেন। পক্ষে-বিপক্ষের শক্তি ও দূর্বলতা নির্ণয় করে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেন প্রশান্ত কিশোর।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/778 ,   Print Date & Time: Saturday, 7 June 2025, 11:20:22 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh