• হোম > বিদেশ > বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর নিয়ে রাজনৈতিক তোলপাড়

বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর নিয়ে রাজনৈতিক তোলপাড়

  • মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:১৬
  • ৩২

---

 

পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের শান্ত–নিরিবিলি বেলডাঙা হঠাৎই উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ৬ ডিসেম্বর, অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভাঙার ঐতিহাসিক ঘটনার তিন দশক পর একই তারিখে সেখানে বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এক দিনের একটি অনুষ্ঠান যেন পুরো রাজ্যকে নতুন করে এক আবেগ, উত্তেজনা ও রাজনৈতিক ঝড়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।

ঘটনাটির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবির। তাঁর দাবি—এটা কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকারের প্রতিফলন। অন্যদিকে, বিজেপি অভিযোগ তুলেছে—এই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের নেপথ্যে নাকি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের “সুঁচভেদ্য পরিকল্পনা” রয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং সরাসরি অভিযোগ করেছেন—“হুমায়ুন নয়, বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর রেখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন তিনি নাটক করছেন এবং তাঁর দলীয় নেতাদের দিয়ে ভিন্ন পথে দোষ চাপাচ্ছেন।”

মানুষের ভিড়, মানুষের আবেগ–মানবিক দৃশ্যপট

বেলডাঙার মাঠে দিনভর যে দৃশ্য দেখা গেছে, তা শুধু রাজনৈতিক নয়—মানুষের আবেগের উথাল–পাতালও ছিল সেখানে। বহু মানুষ মাথায় ইট নিয়ে দীর্ঘ পথ হেঁটে এসে অংশ নিয়েছেন ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠানে। কেউ বলেছেন, “এটা শুধু ইট নয়, আমাদের বিশ্বাসের প্রতীক।”।

অনুষ্ঠানে সৌদি আরব থেকেও একজন ধর্মগুরু উপস্থিত ছিলেন—যা এই অনুষ্ঠানকে আরও আলোচিত করে তোলে। রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়, জাতীয় সড়কে থেমে যায় গাড়ির চলাচল। শিশু থেকে বৃদ্ধ—অনেকেই এসে দাঁড়ান অনুষ্ঠানের আশপাশে। কারও হাতে দোয়ার তসবিহ, কারও চোখে কৌতূহল, কারও মনে সংশয়—সবকিছু মিলিয়ে ঘটনাটি মানুষের ভেতরে গভীর আবেগের জন্ম দেয়।

তৃণমূলের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ও হুমায়ুনের যুক্তি

ঘটনার পর তৃণমূল কংগ্রেস হুমায়ুন কবিরকে সাসপেন্ড করে। কিন্তু তাঁর ভাষ্য—
“যে দেশে মন্দির, গির্জা, গুরুদ্বারা নির্মাণের স্বাধীনতা আছে, সেখানে মসজিদ নির্মাণ কি অপরাধ? সংবিধানই আমাদের অধিকার দিয়েছে।”

হুমায়ুন আরও বলেন, সুপ্রিম কোর্টও স্বীকার করেছে যে অযোধ্যার মসজিদটি ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। তাই ধর্মীয় সমতার ভিত্তিতে মসজিদ নির্মাণেও বাধা থাকার কথা নয়। তাঁর মতে, ভিন্নমত থাকতেই পারে—কিন্তু মানুষের অনুভূতি কোনোভাবেই অবহেলিত হতে পারে না।

অর্থস্রোতের ব্যতিক্রমী দৃশ্য—১১ ট্রাঙ্ক ভর্তি টাকা

বাবরি মসজিদ নির্মাণের জন্য অর্থসংগ্রহকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে বিস্ময়কর আরেক ছবি। হুমায়ুন কবিরের বাড়িতে ১১টি লোহার ট্রাঙ্ক ভর্তি নগদ টাকা এসে পৌঁছেছে। ৩০ জন মানুষ গুনছেন সেই টাকা। কে কতো দিলেন—সব রেকর্ড রাখা হচ্ছে।

দাবি করা হয়েছে—
—একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি একাই ৮০ কোটি টাকা অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
—কিউআর কোডে জমা পড়েছে ৯৩ লাখ টাকা।
—মোট অর্থ এখনো গণনায়, তবে পরিমাণ নাকি “কোটি ছাড়িয়েছে বহু আগেই”।

এই দৃশ্যও মানবিকভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করে—ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি মানুষের আস্থা তাঁদের শেষ সম্বলটুকুও উৎসর্গ করতে উদ্বুদ্ধ করে।

রাজনৈতিক তরঙ্গ—অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ

বিজেপির দাবি—মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগিয়ে রাজ্যকে বিভক্ত করার পরিকল্পনা করছেন।
তৃণমূল বলছে—এটা দলের সিদ্ধান্ত নয়, ব্যক্তিগত উদ্যোগ।
হুমায়ুন বলছেন—এটা মানুষের অধিকার।

এই ত্রিমুখী অবস্থান রাজনীতিকে আরও জটিল করছে। সবচেয়ে বড় কথা, সাধারণ মানুষ আবারও ধর্মীয় আবেগের কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের সুখ–দুঃখ, জীবনের নিরাপত্তা—সবকিছুই রাজনীতির এই প্রবল ঢেউয়ে বিধ্বস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

কেন হিউম্যানিটারিয়ান দৃষ্টিকোণ গুরুত্বপূর্ণ?

কারণ, যে ঘটনাই ঘটুক—রাজনীতি সবসময় মানুষের জীবনের ওপরে নয়।
বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর হোক বা তাকে ঘিরে বিতর্ক—সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে সাধারণ মানুষের আবেগ, শান্তি ও সহাবস্থানের ওপর।
একজন মা তাঁর ছেলেকে নিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে বলছিলেন—
“আমরা শুধু শান্তি চাই। কে মসজিদ বানাবে, কে মন্দির—এ নিয়ে লড়াই করতে চাই না।”

এই একটাই বাক্য পুরো ঘটনার মানবিক সারমর্ম তুলে ধরে।

আগামী দিনের প্রশ্ন

এখন প্রশ্ন হলো—এই বিতর্ক কি কেবল রাজনৈতিক?
নাকি সামাজিক বিভাজন আরও তীব্র করার আশঙ্কা রয়েছে?
রাজ্য সরকার, বিরোধী দল এবং ধর্মীয় নেতাদের দায়িত্ব হবে—মানুষের নিরাপত্তা ও শান্তিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া।

বেলডাঙার এই ঘটনা হয়তো রাজনৈতিক আঙিনায় সাময়িক উত্তাপ ছড়াবে। কিন্তু মানবিক দৃষ্টিতে দেখা যায়—মানুষ আবারও ধর্মীয় আবেগ, রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ও সামাজিক স্থিতির মাঝখানে আটকে পড়েছে।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/7612 ,   Print Date & Time: Wednesday, 17 December 2025, 08:42:24 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh