![]()
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, দেশে হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার জন্য তার কাছে কোনো “ম্যাজিক” নেই। থাকলে তিনি মুহূর্তেই এমন সব ঘটনা বন্ধ করে দিতেন। দেশের জননিরাপত্তা নিয়ে সংবেদনশীল সময়ে তার এমন অকপট মন্তব্য নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
সোমবার (৮ অক্টোবর) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। সম্প্রতি রংপুরে মুক্তিযোদ্ধা দম্পতি হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলে নির্বাচনকে সামনে রেখে এমন ঘটনার মূল্যায়ন জানতে চাইলে উপদেষ্টা খোলামেলাভাবে জানান—“নির্বাচন হচ্ছে বলে হত্যা বাড়ছে—এমনটা নয়। নির্বাচনের আগেও এরকম ঘটনা ঘটেছে এবং ঘটে। এটাকে অস্বীকার করার উপায় নেই।”
অপরাধ প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সীমাবদ্ধতার বিষয়ে তিনি বলেন, “নির্বাচনের আগে সবকিছু বন্ধ হয়ে যাবে—এ প্রতিশ্রুতি দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। যদি আমার কাছে কোনো সুইচ থাকতো, যেটা অফ করলে সব কিলিং থেমে যেত—হয়তো আজই সেটা বন্ধ করে দিতাম। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমার কাছে কোনো ম্যাজিক নেই।”
তিনি আরও জানান, রংপুরে নিহত দম্পতির দুই সন্তানই দায়িত্বশীল বাহিনীতে চাকরি করছেন—একজন পুলিশে, অন্যজন র্যাবে। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনকে সামনে রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থার আপডেট জানাতে গিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে বিদ্যুতের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেখানে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে না, সেখানে বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে।”
তিনি আরও জানান, জানুয়ারির মধ্যেই নিরাপত্তা বাহিনীর সব প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হবে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
গণমাধ্যমের প্রতি আক্ষেপ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “মানুষের মনে সন্দেহ আপনারাই তৈরি করেন। মানুষকে আশ্বস্ত করতে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।”
নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা বাড়াতে নতুন উদ্যোগের কথাও জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা—“এই নির্বাচনে বডি ক্যামেরা ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের শরীরে বডি ক্যামেরা থাকবে, যাতে যে কেউ দেখতে পারে কীভাবে দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে।”
দেশের রাজনৈতিক উত্তাপ, নির্বাচনী উত্তেজনা এবং অপরাধ দমনে সীমাবদ্ধতার বাস্তবতা—সব মিলিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যে উঠে এসেছে একটি পরিষ্কার বার্তা: আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে, তবে সমাজের সম্মিলিত ভূমিকা ছাড়া নিখুঁত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন।