![]()
বিশ্বজুড়ে লাখো মানুষ আজও এইচআইভি/এইডসের সঙ্গে লড়াই করছেন। এটি এমন একটি রোগ, যার পুরোপুরি চিকিৎসা এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। শরীরে ভাইরাস ধরা পড়ার পর রোগীকে জীবনভর ওষুধ নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়—প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি (এআরটি) গ্রহণ, নিয়ম মেনে ফলো-আপ, আর নানা জটিলতা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে চলা। সব মিলিয়ে অনেক রোগীর জীবন হয়ে ওঠে মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত ও ক্লান্তিকর।
তবে সম্প্রতি একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে নতুন আশার আলো—যা হয়তো একদিন এই রোগের চিকিৎসা পদ্ধতিতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষকরা একদল রোগীর ওপর একটি পরীক্ষামূলক থেরাপি প্রয়োগ করেছেন, যেখানে রোগীদের প্রতিদিনের এআরটির জায়গায় ব্যবহার করা হয়েছে বিশেষ ‘কম্বিনেশন থেরাপি’।
এই থেরাপির অংশ হিসেবে রোগীদের দেওয়া হয়েছে—
-
প্রতিষেধক,
-
ইমিউন-অ্যাকটিভ ওষুধ,
-
এবং এমন কিছু অ্যান্টিবডি, যা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে বিশেষভাবে কাজ করে।
মাত্র ১০ জন রোগীর ওপর পরীক্ষাটি চালালেও এর ফল চিকিৎসা জগতে আলোড়ন তুলেছে। দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারী কেউই পরবর্তী ১৮ মাস এআরটি ছাড়া ছিলেন—তবুও ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে ছিল, এবং রোগীরা সুস্থ ছিলেন। আশার বিষয়, যাদের অবস্থা শুরুতেই খারাপ ছিল, তারাও আলাদা চিকিৎসা ছাড়াই ভালো ছিলেন।
এইচআইভি এমনভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আক্রমণ করে যে মানুষ সহজেই সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। যক্ষ্মা, ছত্রাক সংক্রমণ, স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতা, এমনকি কিছু ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকিও থাকে। প্রথমদিকে সর্দি–কাশির মতো সামান্য উপসর্গ দেখা দিলেও ধীরে ধীরে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। শেষ পর্যায়ে রোগীর জীবন সম্পূর্ণই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়।
এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে রোগীদের ভরসা একটাই—এআরটি। এ থেরাপি ভাইরাসকে পুরোপুরি নির্মূল করতে না পারলেও শরীরের ভেতরে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখে, রোগীকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে এবং দীর্ঘায়ু বাড়ায়।
কিন্তু কম্বিনেশন থেরাপির এই ফলাফল দেখাচ্ছে, ভবিষ্যতে হয়তো আর প্রতিদিন ওষুধ খেতে হবে না। যদি গবেষণাটি আরও বড় পরিসরে সফল হয়, তবে এইডস চিকিৎসা একেবারে নতুন দিগন্তে পৌঁছাতে পারে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, এটি মানুষকে শুধু শারীরিক নয়, মানসিক মুক্তিও দিতে পারে—ওষুধনির্ভর জীবনযাপন থেকে বের করে এনে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ তৈরি করতে পারে।
যদিও এটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ের গবেষণা, তবু এর মধ্যেই বিশ্বজুড়ে এইডস বিশেষজ্ঞরা বলছেন—এটা হতে পারে ভবিষ্যতের যুগান্তকারী চিকিৎসা, যা মানবজাতিকে একদিন সম্পূর্ণ এইডসমুক্ত বিশ্বের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।