![]()
দেশজুড়ে রাজনৈতিক উত্তাপ, ভোটারদের প্রত্যাশা এবং গণতন্ত্রের নতুন যাত্রার মুহূর্তে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল চলতি সপ্তাহেই ঘোষণা করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
রবিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। দেশের প্রত্যাশিত এই ঘোষণা ঘিরে ভোটারদের মধ্যে তৈরি হয়েছে নতুন আগ্রহ, উদ্বেগ এবং আশা।
সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসির সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা, মাঠপর্যায়ের প্রস্তুতি, ভোটকর্মী নিয়োগ এবং কারিগরি–লজিস্টিক সহযোগিতা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
তফসিল ঘোষণার আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ
নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, “সপ্তাহের যেকোনো একদিন তফসিল ঘোষণা করা হবে।”
এজন্য রীতি অনুযায়ী পুরো কমিশন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। পাশাপাশি সিইসির তফসিল ঘোষণা বিষয়ক বক্তব্য রেকর্ড করতে বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভিকে সোমবার চিঠি দেবে ইসি।
তিনি আরও জানান, তফসিল ঘোষণার পূর্বের প্রায় সব কাজই সম্পন্ন হয়েছে।
ভোটের সময় এক ঘণ্টা বাড়ল
গণভোট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটগ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
এখন থেকে
ভোট শুরু: সকাল ৭টা ৩০ মিনিট
শেষ: বিকেল ৪টা ৩০ মিনিট
ভোটারদের সুবিধা, ভিড় কমানো এবং বিশেষ প্রয়োজনসম্পন্ন ভোটারদের প্রতি সহানুভূতির জায়গা থেকেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানায় ইসি।
ভোটার তালিকা, কর্মকর্তাদের নিয়োগ, লজিস্টিক—সব প্রস্তুত
নির্বাচন কমিশনার জানান:
-
ভোটার তালিকা ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
-
পোস্টাল ভোটারদের জন্য আলাদা তালিকা নতুন করে পাঠানো হবে।
-
মাঠ থেকে পাঠানো প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং পোলিং অফিসারদের তালিকা যাচাই–বাছাই করে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
-
সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তারা ভোটকর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
-
বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের আপাতত রিজার্ভ রাখা হবে; প্রয়োজনে তাদের নেওয়া হবে।
দুই নির্বাচন একসঙ্গে—অতিরিক্ত প্রস্তুতিতে জোর
জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে আয়োজন করতে সময়, নিরাপত্তা এবং ব্যবস্থাপনার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
যেসব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে—
-
আগের মতোই নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট পেপারসহ সব সামগ্রী কেন্দ্রে পৌঁছে যাবে।
-
ভোটকেন্দ্রে অতিরিক্ত লজিস্টিক, নিরাপত্তা ও পরিচালনার সরঞ্জাম পাঠানো হবে।
-
ভোটারদের সুবিধায় একাধিক সিক্রেট বুথ স্থাপন করা হবে।
-
যেখানে জায়গা সংকট, সেখানে মোবাইল/অস্থায়ী ভোট বুথ তৈরি করা হবে।
মক ভোটিংয়ের অভিজ্ঞতা এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মতামত কাজে লাগিয়ে পুরো ভোটযাত্রা আরও স্বচ্ছ ও সুগম করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
গণভোট—ভোটার সচেতনতায় বড় উদ্যোগ
গণভোটের প্রশ্ন নিয়ে যাতে কোনো বিভ্রান্তি না থাকে, সে জন্য:
-
প্রতিটি কেন্দ্রে বড় আকারে ছাপানো গণভোট ব্যালটের নমুনা টানিয়ে রাখা হবে।
-
ভোটাররা কেন্দ্রের ভেতরে ঢোকার আগেই বিষয়টি বুঝে নিতে পারবেন।
-
পঙ্গু, বয়স্ক, গর্ভবতী ও বিশেষ প্রয়োজনের ভোটারদের জন্য বিশেষ সহায়তা নির্দেশনা থাকবে।
দেশজুড়ে গণভোট প্রচারণায় সরকার ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছে, আর নির্বাচন কমিশন এই প্রচারণায় প্রযুক্তিগত ও লজিস্টিক সহায়তা দেবে।
জনগণের প্রত্যাশা—স্বচ্ছ, শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন
দেশব্যাপী উদ্বেগ–উৎকণ্ঠার মধ্যে জনগণের সবচেয়ে বড় চাওয়া—একটি নিরাপদ, সহিংসতামুক্ত ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন।
ইসির সাম্প্রতিক প্রস্তুতিগুলো ভোটারদের মনে সেই আশাটিকে বাড়িয়ে দিচ্ছে।