![]()
বর্তমানে সেনাবাহিনীর কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলমান থাকায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের নেতিবাচক আলোচনা ঘুরছে। এসব সমালোচনা বাহিনীর মনোবলে কিছুটা প্রভাব ফেললেও প্রথম আলোর সাম্প্রতিক জরিপ নতুন এক ইতিবাচক ধারণা দিয়েছে—জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সেনাবাহিনীর ভূমিকা এবং আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য দায়িত্ব পালনের বিষয়ে জনগণ আস্থা রেখেছে বাহিনীর প্রতি।
জনগণের এই আস্থা শুধুমাত্র রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে নয়—দীর্ঘ সময় ধরে দেশের সংকট মোকাবিলা, দুর্যোগে জনগণের পাশে থাকা, এবং স্বাধীনতার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে দায়িত্বশীল ভূমিকা সেনাবাহিনীকে মানুষের কাছাকাছি এনে দিয়েছে।
দুটি কারণে বাড়ছে সেনাবাহিনীর গ্রহণযোগ্যতা
লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহফুজুর রহমান মনে করেন, সেনাবাহিনীর প্রতি জনআস্থার পেছনে মূলত দুটি কারণ কাজ করেছে—
১. ঐতিহাসিক ভূমিকা ও দায়িত্বশীলতার ঐতিহ্য
স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে দুর্যোগে সাড়া দেওয়া, জাতীয় দায়িত্ব পালন, অবকাঠামো নির্মাণ—এসব ক্ষেত্রেই সেনাবাহিনী জনগণের বিশ্বাস অর্জন করেছে।
২. জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবিক সিদ্ধান্ত
দেড় দশক ধরে রাজনৈতিকভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দুর্বল হয়ে পড়লেও সেনাবাহিনী গণ-অভ্যুত্থানের মুহূর্তে জনগণের ওপর গুলি চালাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে মানবিকতা ও সাংগঠনিক নৈতিকতার প্রমাণ দেয়।
এই ঘটনাই নতুন করে আস্থা ফিরিয়ে আনে।
রক্ষণশীল ভূমিকা—তবুও নিয়ন্ত্রণে নিরাপত্তা পরিস্থিতি
জুলাই-পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পেলেও অত্যন্ত রক্ষণশীলভাবে দায়িত্ব পালন করছে।
অপারেশন ‘ক্লিন হার্ট’ বা ১/১১–এর মতো আগ্রাসী ভূমিকার পুনরাবৃত্তি হয়নি। কারণ, গত ১৫ বছরে বিভিন্ন বাহিনীকে রাজনৈতিক দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল—যা মানুষকে আস্থাহীন করে তোলে।
সতর্কতা ও সংযম দেখানোর ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দ্রুত স্থিতিশীল না হলেও সহনীয় পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে।
আসন্ন নির্বাচনে সেনাবাহিনীর সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন
মাহফুজুর রহমান সতর্ক করে বলেন—নির্বাচনকে ঘিরে নিরাপত্তাঝুঁকি বাড়তে পারে। তিনি সম্ভাব্য হুমকিগুলো এভাবে তুলে ধরেন—
নির্বাচন ঘিরে সম্ভাব্য নিরাপত্তাঝুঁকি
-
চলমান উত্তেজনার সঙ্গে যুক্ত হবে নির্বাচন–সম্পর্কিত সহিংসতা।
-
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে পুলিশের খোয়া যাওয়া অস্ত্র–গোলাবারুদ এখনো উদ্ধার হয়নি।
-
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো সম্পূর্ণ ঐক্যমত্য নেই।
-
কিছু নির্বাচনী এলাকায় ইতোমধ্যে প্রার্থী দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে।
-
দেশি–বিদেশি অপতথ্য, ভুয়া খবর, সংখ্যালঘু কার্ড ব্যবহার করে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার প্রচেষ্টা থাকবে।
-
দক্ষিণ–পূর্ব সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
-
সর্বোচ্চ উদ্বেগ—যদি পরিস্থিতি গুপ্তহত্যা বা বড় সহিংসতায় গড়ায়।
এ অবস্থায় সেনাবাহিনীর দায়িত্ব হবে শুধু মোতায়েন হওয়া নয়—নির্বাচন কমিশনের নেতৃত্বে স্থিতিশীল নিরাপত্তা পরিবেশ নিশ্চিত করা।
মাহফুজুর রহমানের ৫ দফা সুপারিশ
১. বেসামরিক ম্যান্ডেটের অধীনে দায়িত্ব
সেনাবাহিনী সম্পূর্ণভাবে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবে।
তাদের প্রধান দায়িত্ব—নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা।
২. বিভ্রান্তি দূর করতে কৌশলগত যোগাযোগ
ইসিকে সক্রিয়ভাবে তথ্য–ব্যবস্থাপনা ও সঠিক বার্তা ছড়িয়ে বিভ্রান্তি কমাতে হবে।
৩. জাতীয় গোয়েন্দা কমিটিকে ইসির আওতায় আনা
সব গোয়েন্দা সংস্থাকে একক কমান্ডে এনে নির্বাচন–সম্পর্কিত ঝুঁকি আগেই শনাক্ত করতে হবে।
৪. দক্ষিণ–পূর্ব সীমান্তে মোতায়েন বাহিনী না সরানো
এই অঞ্চলে নিরাপত্তা ঝুঁকি বেশি। তাই এখানকার বাহিনী অন্যত্র স্থানান্তর করা উচিত নয়।
৫. অস্ত্র উদ্ধার অভিযান
নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান ‘ডিটারেন্ট’ হিসেবে কার্যকর হতে পারে।