• হোম > Entrepreneur > দশ হাজার সফল তরুণের প্রেরণাদাতা ফারুক

দশ হাজার সফল তরুণের প্রেরণাদাতা ফারুক

  • শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮:১৫
  • ৩৬

---

বেকারত্বের অন্ধকার দূর করতে কাজ করছেন বগুড়ার তরুণ উদ্যোক্তা শেখ আবদুল্লাহ আল ফারুক। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘সোর্স অব এগ্রো’ ও ‘বিজয়ী ভেঞ্চারস লিমিটেড’ এখন দেশের হাজারো তরুণের স্বাবলম্বী হওয়ার সোপান। আধুনিক কৃষিযন্ত্র উৎপাদন, প্রশিক্ষণ এবং উদ্যোক্তা তৈরি—সব মিলিয়ে তরুণদের জন্য তিনি হয়ে উঠেছেন অনুপ্রেরণার এক প্রতীক।

আদমদীঘির চাঁপাপুরের বাসিন্দা ফারুক পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর শেষ করে প্রথমে গড়ে তোলেন একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ২০১৯ সালে চালু করেন ‘সোর্স অব এগ্রো’। প্রযুক্তিনির্ভর মৎস্যচাষ দিয়ে শুরু হলেও আজ তাঁর প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন অর্ধশত নারী-পুরুষ, আর প্রশিক্ষণ নিয়ে সফল উদ্যোক্তা হয়েছেন ১০ হাজারেরও বেশি তরুণ। জাতীয় যুব দিবসে এ বছর তিনি বগুড়ার শ্রেষ্ঠ যুব উদ্যোক্তা নির্বাচিত হয়েছেন। সম্প্রতি চীন সফর করে বিভিন্ন কারখানা ও প্রযুক্তি কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন; লক্ষ্য—দেশেই এসব প্রযুক্তি উৎপাদন করা।

বিসিকের কারখানায় প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে তিনমাথা ম্যাজিক মেশিন, ভাসমান ফিড মেশিন, ভূষি মেশিন, খড় কাটার মেশিন, সরিষার তেলের মেশিন, হান্টার মেশিন, জুতা–স্যান্ডেল তৈরির মেশিনসহ আধুনিক নানা কৃষিযন্ত্র। তাঁর উদ্ভাবিত সেগ্রিগেটর মেশিন দিয়ে বর্জ্য থেকে তৈরি হচ্ছে জৈব সার, যা ব্যবহার করছে কুষ্টিয়াসহ কয়েকটি পৌরসভা। কৃষকদের কাছে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে তাঁদের নার্সারি—মৌসুমভিত্তিক ও নতুন জাতের চারা দিয়ে চলছে পরীক্ষামূলক চাষাবাদ।

কারখানার ব্যবস্থাপক আবু শ্যামা জানান, দেশের প্রায় সব জেলায় তাঁদের মেশিন যাচ্ছে। প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক তরুণ ব্যবসা শুরু করেছেন। কৃষকরাও নতুন ফসল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন, ফলে মেশিনের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে।

হাজারো তরুণের বদলে যাওয়া জীবন

উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ, বিপণনসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করতে ফারুক প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘বিজয়ী ভেঞ্চারস লিমিটেড’। এখানে লিডার, ডিলার ও পার্টনার—তিন ক্যাটেগরিতে ব্যবসার সুযোগ রয়েছে। তরুণদের দক্ষতা বাড়াতে রয়েছে ‘বিজয়ী একাডেমি’, আর শিশুদের সৃজনশীলতা বিকাশে রয়েছে এর কিডস শাখা।

শেরপুরের ব্যবসায়ী মনোয়ার হোসেন কাগজ-কলমের হিসাব বাদ দিয়ে ব্যবহার করছেন সোর্স অব এগ্রোর ‘বিজ ব্রেইন এআই’ সফটওয়্যার—স্টক ম্যানেজমেন্ট থেকে সেলস রিপোর্ট—সবকিছু এক জায়গায়।

হরিপুরের যুবক হীরা চন্দ্র রায় চাকরি না পেয়ে হতাশ ছিলেন। সোর্স অব এগ্রো সম্পর্কে সামাজিক মাধ্যমে জানতে পেরে প্রশিক্ষণ নেন এবং নেন তিনমাথা ম্যাজিক মেশিন। এতে পশুখাদ্য, ধান থেকে চাল, আটা–মসলা গুঁড়া—সবকিছুই করা যায়। এখন তাঁর মাসিক আয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা।

গোবিন্দপুরের কৃষক দেলোয়ার হোসেন কেবল ধান চাষেই সীমাবদ্ধ ছিলেন। সোর্স অব এগ্রোর পরামর্শে তিনি এখন বারোমাসি টমেটো, পেঁপে ও ক্যাপসিকাম চাষ করছেন—যা ধানের চেয়ে অনেক বেশি লাভজনক। তাঁর কথায়, “সোর্স অব এগ্রো আমাকে নতুন ফসলের স্বপ্ন দেখিয়েছে।”

ফারুকের স্বপ্ন

ফারুক চান—দেশেই তৈরি হোক উন্নত কৃষিযন্ত্র। কৃষকরা বিদেশি যন্ত্রের ওপর নির্ভর না করে ব্যবহার করবেন ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ প্রযুক্তি। একদিন এসব যন্ত্র বিদেশেও রপ্তানি হবে—এই বিশ্বাস তাঁকে সামনে এগিয়ে নেয়।

তিনি বলেন, “জ্ঞান, নৈতিকতা ও দেশের প্রতি ভালোবাসা—এই তিন শক্তিকে নিয়েই এগোতে চাই। ব্যবসা আমার কাছে শুধু লাভ নয়—এটি মানুষের জীবন বদলের উপায়। প্রতিটি তরুণ যেন এমন কিছু তৈরি করে, যা পরিবার, সমাজ ও দেশকে বদলে দিতে পারে—এই স্বপ্নই আমার চালিকাশক্তি।”

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক তোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ফারুক নিজে যেমন সফল উদ্যোক্তা, তেমনি অন্য তরুণদেরও উদ্যোক্তা হতে সহায়তা করছেন।

বিসিকের উপমহাব্যবস্থাপক এ কে এম মাহফুজুর রহমান জানান, সোর্স অব এগ্রোর মেশিনগুলো মানসম্মত ও সাশ্রয়ী; অনেক যুবক বেকারত্ব দূর করতে এসব মেশিন ব্যবহার করছেন।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/7528 ,   Print Date & Time: Friday, 19 December 2025, 07:58:29 PM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh