
পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহানা এবং ভাগ্নি ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিককে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪–এর বিচারক মো. রবিউল আলম রায়ে শেখ হাসিনাকে ৫ বছর, রেহানাকে ৭ বছর এবং টিউলিপ সিদ্দিককে ২ বছরের কারাদণ্ড দেন।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন—টিউলিপকে নিয়ে কী লিখেছে
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, দুর্নীতির অভিযোগে টিউলিপ সিদ্দিককে তার অনুপস্থিতিতেই দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টিউলিপ অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন কারণ তিনি নাকি তাঁর খালা শেখ হাসিনাকে পরিবারের সদস্যদের জন্য প্লট বরাদ্দে প্রভাবিত করেছিলেন। এ কারণে তাঁকে মামলার প্রধান আসামি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। প্রসিকিউশন তাঁর বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন দণ্ডও চেয়েছিল।
রায় ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন না কেউ
গার্ডিয়ানের ভাষ্য অনুযায়ী, রায় ঘোষণার সময় টিউলিপ ও অভিযুক্ত পরিবারের সদস্যরা কেউই আদালতে ছিলেন না।
প্রসিকিউশন দাবি করে, টিউলিপ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ফোন ও বার্তা পাঠিয়েছিলেন এবং ঢাকায় এসে পরিবারের জন্য জমি নিশ্চিত করতে চেষ্টা করেছিলেন। তবে এসবের কোনো প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করা যায়নি, বলে উল্লেখ করেছে গার্ডিয়ান।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অভিযোগের ভিত্তি মূলত দুই সাক্ষীর জবানবন্দি, যারা তখন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে কর্মরত ছিলেন। দুদক জানিয়েছে, টিউলিপের বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা ঠিকানায় চিঠি পাঠানো হয়েছিল।
গার্ডিয়ানকে টিউলিপের বক্তব্য
গার্ডিয়ানকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় টিউলিপ সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, প্রসিকিউশনের অনেক প্রমাণই ‘জাল’।
তিনি বলেন—
-
মামলার বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি
-
আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়নি
-
পুরো প্রক্রিয়াটি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’
-
আদালতের রায় ‘ক্যাঙ্গারু কোর্টের অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত’
তিনি আরও বলেন, শৈশবের পর তিনি কখনো বাংলাদেশি পাসপোর্ট রাখেননি এবং সরকারের দেখানো নথি জাল। তাঁর অগ্রাধিকার সবসময় তাঁর নির্বাচনী এলাকা হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেট—বাংলাদেশের ‘নোংরা রাজনীতি’ তাঁকে বিচলিত করবে না।
ব্রিটিশ আইনজীবী ও লেবার পার্টির সমালোচনা
গার্ডিয়ান লিখেছে, যুক্তরাজ্যের একদল শীর্ষ আইনজীবী, যাদের মধ্যে কনজারভেটিভ পার্টির সাবেক আইনমন্ত্রীও আছেন, তাঁরা একে ‘কৃত্রিম ও অন্যায্য বিচার’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
তাদের দাবি—টিউলিপ অভিযোগ জানার অধিকার, আইনজীবী পাওয়ার অধিকার—কিছুই পাননি।
লেবার পার্টিও জানিয়েছে, ন্যায়সংগত শুনানির সুযোগ না থাকায় তারা এই রায় স্বীকৃতি দিতে পারে না। তাদের এক মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে অভিযোগের বিবরণ দিতে অনুরোধ জানানো হলেও তা দেওয়া হয়নি।
গার্ডিয়ান আরও জানিয়েছে, টিউলিপের নিয়োগ করা আইনজীবীকে ঢাকায় গৃহবন্দি করা হয়।
গার্ডিয়ানের বর্ণনায় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
প্রতিবেদন মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অগ্রাধিকারগুলোর একটি হলো শেখ হাসিনার আমলে সংঘটিত দুর্নীতি ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা। গত সপ্তাহেই আরেক মামলায় হাসিনাকে ২১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
টিউলিপের দাবি, তিনি তাঁর খালাকে কেন্দ্র করে তৈরি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার।
যুক্তরাজ্যের সীমাবদ্ধতা
বাংলাদেশ–যুক্তরাজ্যের মধ্যে কোনো প্রত্যার্পণ চুক্তি নেই, তাই টিউলিপের বাংলাদেশে এসে সাজা ভোগের সম্ভাবনা কম—লিখেছে গার্ডিয়ান।
তবে এই রায় তাঁর বাংলাদেশ ভ্রমণে বাধা তৈরি করতে পারে এবং বাংলাদেশের মিত্রদেশগুলোতেও ভ্রমণে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
গার্ডিয়ান আরও উল্লেখ করেছে, টিউলিপের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে আরেকটি তদন্ত হয়েছিল তাঁর খালার সমর্থকদের সঙ্গে আর্থিক সম্পর্ক নিয়ে, যদিও তাতে নিয়মভঙ্গের প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তবুও তিনি মন্ত্রিত্ব ছেড়েছিলেন।