• হোম > রাজনীতি > ‘বিদেশ থেকে নেতৃত্ব পরিবর্তনের খেলা’, অভিযোগ সজীব ওয়াজেদের

‘বিদেশ থেকে নেতৃত্ব পরিবর্তনের খেলা’, অভিযোগ সজীব ওয়াজেদের

  • শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৩০
  • ৫৪

---

বাংলাদেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল—আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্ব পরিবর্তন নিয়ে একটি অগণতান্ত্রিক ও গোপন তৎপরতা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ও দলের অন্যতম প্রভাবশালী মুখ সজীব ওয়াজেদ জয়। বিবিসি বাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি অভিযোগ করেন, দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণে বিদেশি শক্তি ও কিছু অভ্যন্তরীণ মহল যৌথভাবে ‘নেতৃত্ব পরিবর্তনের খেলা’ চালাচ্ছে।

জয়ের দাবি অনুযায়ী, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান–পরবর্তী অস্থিরতা, ব্যাপক গ্রেফতার ও দমনপীড়ন শুধু আওয়ামী লীগ বা বিএনপির ওপর নয়—বরং পুরো জাতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। তিনি মনে করেন, দেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া এই পরিস্থিতি গণতন্ত্রকে দুর্বল করে দিচ্ছে এবং মানুষের মৌলিক রাজনৈতিক অধিকারকে সংকুচিত করছে।

‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’—একটি পুরোনো ধারণার পুনরাবৃত্তি

আলোচনায় উঠে আসে ‘রিফাইন্ড’ বা ‘পরিশুদ্ধ আওয়ামী লীগ’-এর ধারণা, যা ওয়ান-ইলেভেনের সময়ও আলোচিত হয়েছিল। সজীব ওয়াজেদ এই ধারণাকে তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করেন। তার মতে, বাইরে থেকে একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব বেছে দেওয়া গণতন্ত্রের পরিপন্থী এবং জনগণের অধিকারের প্রতি অবমাননাকর।

তিনি বলেন, “আমাদের দেশে কারা নেতৃত্ব দেবে, সেটি দেশের মানুষ এবং দলের হাজারো কর্মীই নির্ধারণ করবে। বিদেশি শক্তি বা সুশীল সমাজের কয়েকজন মিলে একটি দলকে ‘ফিল্টার’ করে নতুন নেতৃত্ব বসানোর চেষ্টা করা গণতান্ত্রিক নয়—এটি ষড়যন্ত্র।”

মায়ের পরে নেতৃত্ব নেওয়ার সম্ভাবনা নাকচ

দলীয় নেতৃত্বের প্রশ্নে সজীব ওয়াজেদ বলেন, শেখ হাসিনার পরে নেতৃত্ব নেবেন কি না—এ সিদ্ধান্ত তার ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা নয়। সিদ্ধান্ত নিবে দল, আর তা হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়। তিনি জানিয়েছেন, পরিবার হিসেবে তারা বরাবরই বিদেশে স্থায়ী জীবনযাপনে অভ্যস্ত এবং রাজনীতিতে আসা তাদের ‘ইচ্ছার জায়গা’ নয়।

তার ভাষায়, “আমরা রাজত্ব করি না। দলের সভাপতি কে হবে, তা নির্ধারণের একমাত্র অধিকার দলীয় কাউন্সিল এবং দলের কর্মীদের। নেতৃত্ব চাপিয়ে দেওয়া বা পরিবারে বংশানুক্রমিকভাবে নেতৃত্ব গ্রহণ—এগুলো আওয়ামী লীগের চরিত্র নয়।”

রাজনৈতিক দমন-পীড়নের মধ্যেও ‘ঐক্যবদ্ধ দল’

বর্তমানে দেশে আওয়ামী লীগের সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি নিষিদ্ধ। অধিকাংশ নেতা-নেত্রী কারাগারে বা আত্মগোপনে। তবুও জয় বিশ্বাস করেন, আওয়ামী লীগ ভেঙে যায়নি—বরং নিষেধাজ্ঞার ভেতরেও তারা ঐক্যবদ্ধ।

তিনি বলেন, “দল নিষিদ্ধ। কোনো সমাবেশ নেই, কোনো সংগঠনিক কাজ নেই। তারপরেও দল এক আছে, নেতাকর্মীরা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সাধারণ মানুষের সমর্থন এখনো আওয়ামী লীগের সাথে আছে।”

জুলাই আন্দোলনের সময় ‘ভুল’ হয়েছে, কিন্তু দায় কার?

জয় স্বীকার করেন, জুলাই আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগের সরকার ভুল করেছে। তবে তিনি প্রশ্ন তোলেন—পরবর্তী সহিংসতার দায় কেন শুধু এক পক্ষের ওপরই চাপানো হচ্ছে?

তার মতে, “৫ আগস্টের পর থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর যেসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে, তা বর্তমান সরকার ইনডেমনিটি দিয়ে রক্ষা করেছে। তাহলে বিচার কোথায়? ন্যায়বিচার কি একপাক্ষিক হতে পারে?”

তিনি জানান, তার মা শেখ হাসিনা আন্দোলনের সময় একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলেন, যাতে সব হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত হয়। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর সেই তদন্ত থেমে যায়।

নির্বাচনে ‘সাজানো চিত্রনাট্য’ মেনে নেবে না আওয়ামী লীগ

২০২৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বাইরে রাখার সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন জয়। তিনি বলেন, “দেশের অর্ধেক ভোটারকে বাদ দিয়ে সাজানো নির্বাচন আমরা স্বীকার করব না। আমাদের আন্দোলন করার ছাড়া কোনো পথ রাখা হয়নি।”

তার দাবি, আওয়ামী লীগকে দুর্বল করতে এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে মুছে ফেলতে একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা চলছে। একইসঙ্গে দলের সম্ভাব্য নেতৃত্ব—শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ ও সায়মা ওয়াজেদসহ পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে নির্বাচন অযোগ্য করার চেষ্টা চলছে।

দেশের ভবিষ্যৎ কে ঠিক করবে?

সাক্ষাৎকার শেষে সজীব ওয়াজেদ স্পষ্ট করেন—বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে এ দেশের মানুষ। বিদেশি শক্তি নয়, স্বার্থান্বেষী মহল নয়, বরং নির্বাচনে জনগণের ভোটই হবে দেশের নেতৃত্ব নির্বাচন করার একমাত্র পথ।

তার ভাষায়, “বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হলে দেশের জনগণকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নেতৃত্বে কে আসবে বা যাবে—এটা জনগণের এবং দলের কর্মীদের সিদ্ধান্ত, বিদেশের নয়।”


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/7243 ,   Print Date & Time: Thursday, 18 December 2025, 02:53:18 PM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh