• হোম > বিদেশ > নিঠারি মামলার নতুন প্রশ্ন: তাহলে কারা হত্যা করল শিশুদের?

নিঠারি মামলার নতুন প্রশ্ন: তাহলে কারা হত্যা করল শিশুদের?

  • বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৩০
  • ২৯

---

ভারতের ইতিহাসে অন্যতম হৃদয়বিদারক নিঠারি হত্যাকাণ্ডের প্রায় দুই দশক পর আবারও আলোচনায় এসেছে সেই রোমহর্ষক অধ্যায়। কারণ, দীর্ঘ বিচারিক লড়াই শেষে মামলার শেষ দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সুরেন্দ্র কোলিকেও সম্প্রতি খালাস দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। আর এতে শোকের ছায়া আবারও নেমে এসেছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর ওপর—যাদের কাছে সময় যেন আবার পিছিয়ে গেছে ২০০৬ সালের সেই বিভীষিকাময় ডিসেম্বর মাসে।


“তাহলে কারা আমাদের সন্তানদের হত্যা করল?” — নিঠারির বেদনাহত পরিবারগুলো

ঝাব্বু কানৌজিয়া, পাপ্পু লাল, সুনীতা কানৌজিয়া — এ নামগুলো নিঠারির সেই দিনগুলোর স্মৃতিতে আজও দগদগে ক্ষতের মতো।
যাদের চোখের সামনে সময়ের পর সময় কেটে গেছে, কিন্তু ফিরেনি হারিয়ে যাওয়া সন্তানরা।

সুপ্রিম কোর্টে বহুল আলোচিত মামলার সর্বশেষ রায়ে সুরেন্দ্র কোলিকে খালাস দেওয়ার খবর পেয়ে তাঁদের প্রশ্ন একটাই—

“দুইজন যদি দোষী না হয়, তাহলে আমাদের শিশুদের হত্যা করল কে?”

২০০৫ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত নিখোঁজ হওয়া শিশুদের অনেক বাবা–মা নিয়মিত পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু অভিযোগ, পুলিশ তাঁদের কথাকে গুরুত্বই দেয়নি। অভিজাত এলাকায় ঘটনার সূত্রপাত হওয়ায়, বস্তিবাসীদের আর্তি যেন কেউ শুনতেই চায়নি।


অবহেলা, ক্ষোভ ও দীর্ঘ অপেক্ষা — নিঠারি মামলার পটভূমি

২০০৬ সালের ডিসেম্বরে নয়ডার আরামদায়ক, সুশৃঙ্খল বাড়ির সারির মাঝে ডি–৫ নম্বর বাংলো—যা পরে ‘হরর হাউস’ নামে কুখ্যাত হয়—তার আশপাশের নর্দমা থেকে উদ্ধার হয় মানব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, হাড়, খুলি এবং নিখোঁজ শিশুদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র।

তদন্তে উঠে আসে, নিঠারি বস্তির শিশু ও নারীদের অপহরণ, নির্যাতন, হত্যা ও অঙ্গহানি করা হয়েছে।
এই ঘটনায় গ্রেপ্তার হয় ব্যবসায়ী মণীন্দ্র সিং পান্ধের এবং তাঁর গৃহসহকারী সুরেন্দ্র কোলি।

প্রাথমিক তদন্তে কোলির কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায়ের অভিযোগ ওঠে। পরে আদালত স্বীকার করে—নির্যাতনের মুখে নেওয়া স্বীকারোক্তি গ্রহণযোগ্য নয়।


ভুক্তভোগীরা মানতে পারছেন না আদালতের সিদ্ধান্ত

জ্যোতি নামে ১০ বছরের একটি শিশুর মা সুনীতা বলেন—
“তারা যদি দোষী না হয়, তাহলে ১৮ বছর ধরে জেলে ছিল কেন? আর আমাদের সন্তানেরা কোথায়? কীভাবে মরল?”
তার কণ্ঠে ক্ষোভ, অসহায়ত্ব আর এক অপার শূন্যতা।

ঝাব্বু কানৌজিয়া, যিনি নিজেই পয়ঃনিষ্কাশন নালায় নেমে উদ্ধার করেছিলেন খুলি ও হাড়, বলেন—
“আমি যে খুলিগুলো দেখেছিলাম, সংখ্যা ১৯–এর চেয়ে অনেক বেশি ছিল। আজও সেই গন্ধ ভুলতে পারি না।”

রায়ের পর হতাশায় তিনি মামলার পুরোনো নথি নিজের হাতে পুড়িয়ে ফেলেছেন।
তিনি বলেন—
“আমি আর লড়বার মতো শক্তি রাখি না।”


আইনজীবীদের দাবি বনাম পরিবারগুলোর কান্না

সুরেন্দ্র কোলির আইনজীবী বলেন—
“তার বিরুদ্ধে আনা সাক্ষ্যপ্রমাণ সবই বানোয়াট।”
তিনি ১৩টির মধ্যে ১২টি মামলায় পূর্বেই খালাস পেয়েছিলেন, শেষটিতেও এখন মুক্ত।

কিন্তু নিঠারির পরিবারগুলো এ রায় মানতে পারছেন না।

পাপ্পু লাল বলেন—
“আমরা আদালতের ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে আমাদের লড়াই নতুন করে শুরু হলো। প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করব।”


“আমাদের শিশুরা কি ভারতের সন্তান নয়?” — নিঠারির পিতা–মাতাদের আর্তি

বাড়িটির আজও পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা, আগুনে পোড়া দেয়াল, নর্দমার দুর্গন্ধ—সবকিছু যেন স্মরণ করিয়ে দেয় ভয়াবহ দিনগুলোর কথা। পরিবারগুলো আজও মনে করে—

তাদের সন্তানদের ন্যায়বিচার হয়নি।

প্রকৃত অপরাধীরা এখনও ধরা–ছোঁয়ার বাইরে।

আইনগতভাবে তাঁরা সুপ্রিম কোর্টে পুনঃতদন্তের আবেদন করতে পারেন, কিন্তু অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।

অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মদন লোকুরের মতে—
“পুনরায় তদন্ত হলেও ফল পাওয়ার সম্ভাবনা কম।”

কিন্তু শোকগ্রস্ত পরিবারগুলোর কাছে—

ন্যায়বিচার চাওয়াই এখন শেষ আশ্রয়।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/7205 ,   Print Date & Time: Thursday, 27 November 2025, 10:01:03 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh