![]()
রাজধানীর মহাখালীর কড়াইল বস্তিতে লাগা ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড অবশেষে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সম্পূর্ণভাবে নির্বাপিত হয়েছে। আগুন লাগার পর টানা পাঁচ ঘণ্টার অধিক সময় ধরে চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট। মঙ্গলবার বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে আগুন লাগার খবর মিললে দ্রুতই ইউনিটগুলো ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর চেষ্টা করে। তবে তীব্র যানজট ও সরু রাস্তার কারণে তাদের সময় লাগে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি।
ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যারহাউস ইন্সপেক্টর আনোয়ারুল ইসলাম জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে শুরুতে সাতটি ইউনিট কাজ করলেও পরবর্তীতে আগুনের ভয়াবহতা দেখে আরও ইউনিট যোগ করা হয়। পানির উৎস না থাকায় আগুন নেভাতে শুরুতে বেশ বেগ পেতে হয়। পরে বস্তি লাগোয়া খাল থেকে পানি সরবরাহ করে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ চালানো হয়।
তিনি বলেন, “আগুনের কাছাকাছি জলাধার না থাকায় আমাদের পাইপ দূরত্ব পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে হয়েছে। আগুনের তীব্রতা বেশি ছিল, তবে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় লড়াই করে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই।”
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে আগুনে প্রায় দেড় হাজারের বেশি ঘর পুড়ে গেছে বলে ধারণা করছে ফায়ার সার্ভিস। হঠাৎ করে ঘর হারিয়ে বস্তির হাজারো মানুষ খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে বাধ্য হয়েছেন।
আশ্রয়হীন মানুষের কান্না ও অসহায়তা
সরেজমিন দেখা যায়, বস্তির মানুষজন মালপত্র বাঁচাতে ছুটোছুটি করছেন। কেউ শিশুদের বুকে নিয়ে নিরাপদ জায়গায় ছুটে যাচ্ছেন, কেউ আবার কাঁদতে কাঁদতে নিজের ঘরের দিকে তাকিয়ে আছেন।
বস্তির বাসিন্দা লাভলী বেগম অসহায় কণ্ঠে বলেন,
“আমার সব পুড়া শ্যাষ। কিছুই নাই। সাত বছর ধরে এখানে আছি। অনেক কষ্টে টিভি, ফ্রিজ কিনছি। কিস্তির টাকা এখনও বাকি। এখন কই যামু?”
অনেকেই জানালেন যে আগুনে তাদের কোনো কাগজপত্র, পরিচয়পত্র বা প্রয়োজনীয় নথিও আর নেই। এতে করে আগুন পরবর্তী পুনর্বাসনেও নতুন সংকট তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
তদন্ত চলছে
আগুন লাগার কারণ এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, পূর্ণাঙ্গ তদন্তের পর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণসহ আগুন লাগার উৎস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে।
মানবিক সহায়তা প্রয়োজন
হঠাৎ করে মাথার ওপরের ছাদ হারিয়ে বস্তির শত শত পরিবার এখন মানবিক সংকটে পড়েছে। শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থদের জন্য খাবার, পোশাক, পানি ও আশ্রয়ের বিশেষ প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। স্থানীয় প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি এবং মানবিক সংস্থা এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।