![]()
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর করার পাশাপাশি আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্মগুলো—সার্ক, বিমসটেক ও অন্যান্য উপ–আঞ্চলিক সহযোগিতা কাঠামোর অধীনে যৌথ উদ্যোগ শক্তিশালী করার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।
রোববার ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক শেষে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উষ্ণতা, সহযোগিতার গতি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে তুলে ধরে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়।
ঐতিহাসিক আস্থা ও বন্ধুত্বের বন্ধন পুনরুজ্জীবিত
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে তিন দিনের সফরে শনিবার বাংলাদেশে পৌঁছান। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রধান উপদেষ্টা তাকে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা জানান। দেওয়া হয় গার্ড অব অনার ও তোপধ্বনি। এরপর সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে গাছের চারা রোপণ করেন তিনি।
দুই নেতা স্মরণ করেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পরপরই প্রথম যে দেশটি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়, সেটি ছিল ভুটান—এমন ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব দুই দেশের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করেছে।
বাণিজ্য–সংযোগ–মানবিক সহযোগিতায় জোর
আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বাণিজ্য সম্প্রসারণ, আঞ্চলিক সংযোগ, বিনিয়োগ ও মানবিক সহযোগিতাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, আঞ্চলিক উন্নয়ন তখনই সর্বাধিক উপকার বয়ে আনে, যখন প্রতিবেশী দেশগুলো পারস্পরিক সমর্থন ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে এগিয়ে আসে।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে বাংলাদেশের আন্তরিক সহযোগিতা, মানবিক মূল্যবোধ ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি বাণিজ্য ও বিনিয়োগের নতুন সম্ভাবনা অনুসন্ধানে ভুটানি ব্যবসায়ীদের সক্রিয় ভূমিকার কথাও জানান।
কুড়িগ্রাম–গেলেফু সংযোগ : আঞ্চলিক অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা
বৈঠকে উভয়পক্ষ কুড়িগ্রাম–গেলেফু করিডরকে দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক প্রবাহের ‘নতুন দরজা’ হিসেবে বর্ণনা করে।
ভুটানের আসন্ন বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল “গেলেফু মাইন্ডফুলনেস সিটি” এবং বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম স্পেশাল ইকোনমিক জোন যৌথ উন্নয়নের নতুন দিগন্ত তৈরি করবে বলে দুটি দেশই আশাবাদ ব্যক্ত করে।
এছাড়া ট্রাফিক–ইন–ট্রানজিট চুক্তির অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বুড়িমারী হয়ে ভুটানে পণ্য পরিবহনের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম সফল হওয়ায় দুই দেশ সন্তোষ প্রকাশ করে।
শিক্ষা–স্বাস্থ্য–মানবসম্পদ উন্নয়নে বাড়তি সুযোগ
বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতিক সময়ে ভুটানি শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস/বিডিএস আসনের সংখ্যা ৩০-এ উন্নীত করেছে। এর জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানবিক সহায়তা ভুটানের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এক অসামান্য অবদান।
নতুন ঘোষণা অনুযায়ী:
-
বুয়েটে প্রতি বছর ১০টি নির্দিষ্ট আসন পাবে ভুটানি শিক্ষার্থীরা
-
বিকেএসপিতে ভুটানি ক্রীড়া শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বিশেষ আসন
-
ভুটানি ক্রীড়া দলের জন্য হোম-গ্রাউন্ড সুবিধা
-
ভুটানি বিশেষজ্ঞদের জন্য বাংলাদেশে বিশেষায়িত পেশাগত প্রশিক্ষণ
এছাড়া বাংলাদেশ সরকার–টু–সরকার ভিত্তিতে ভুটানে ওষুধ সরবরাহের প্রস্তাব দেয়—যা ভুটানের জনগণের জন্য সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবে।
রাজনৈতিক সৌহার্দ্য, উন্নয়ন সহযোগিতা ও ভবিষ্যৎ সফর
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে পৃথক বৈঠকে ভবিষ্যৎ সহযোগিতার দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করেন।
শেষে প্রধানমন্ত্রী তোবগে বাংলাদেশের উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে সুবিধাজনক সময়ে ভুটান সফরের আমন্ত্রণ জানান।