• হোম > বাংলাদেশ > প্রাণ হারালেন মেডিকেল শিক্ষার্থী রাফি, মর্মান্তিক আহত তাঁর মা

প্রাণ হারালেন মেডিকেল শিক্ষার্থী রাফি, মর্মান্তিক আহত তাঁর মা

  • শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ১৫:০৯
  • ৩১

---

আজ শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অনুভূত ভয়াবহ ভূমিকম্প বহু মানুষের জীবনে নিয়ে এসেছে দুর্ভাগ্য, আতঙ্ক ও অপূরণীয় শোক। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫.৭ এবং উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর মাধবদী। ভূমিকম্পের তীব্র ঝাঁকুনিতে রাজধানীর পুরান ঢাকার কসাইটুলিতে একটি পাঁচতলা ভবনের রেলিং ধসে পড়ে তিনজন পথচারী নিহত হন। তাঁদের একজন সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাফিউল ইসলাম (রাফি)।

মাত্র ২০-এর কোঠার রাফি ছিলেন বগুড়ার ছেলে। বাবা কর্মসূত্রে থাকেন দিনাজপুরে। হলে সিট পেলেও মা ও বোনের সঙ্গে ঢাকায় থাকতেন তিনি। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নে প্রতিদিনের মতো ব্যস্ততা নিয়ে দিন কাটছিল তাঁর। কিন্তু আজকের সকালটি নিয়ে আসল এক বেদনার সংবাদ—যা তাঁর পরিবারকে মুহূর্তে ভেঙে দিল।

সহপাঠী অপু জানিয়েছেন, সকালে মায়ের সঙ্গে বাজারে গিয়েছিলেন রাফি। বংশালের কসাইটুলিতে “নয়নের মাংসের দোকান”-এর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় হঠাৎ শুরু হয় ভূমিকম্প। প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে দোকানের ভবনের রেলিং ভেঙে মুহূর্তেই তাঁদের উপর এসে পড়ে। স্থানীয়রা ছুটে এসে মা-ছেলে দুজনকেই উদ্ধার করেন। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা জানান—রাফি আর নেই।

ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, রাফির মাথা ও মুখমণ্ডলের সামনের অংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাঁর মা গুরুতর আহত অবস্থায় বর্তমানে অপারেশন থিয়েটারে চিকিৎসাধীন। বিষয়টি এখনো তাকে জানানো হয়নি। তবে তিনি প্রচণ্ড মানসিক ট্রমার মধ্যে আছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

রাফির বোন হাসপাতালে পৌঁছে ভাইয়ের নিথর দেহ আর মায়ের যন্ত্রণায় ভেঙে পড়েছেন। পরিবারের একমাত্র ছেলে রাফির মৃত্যু যেন মুহূর্তে পুরো পরিবারকে শোকের স্তব্ধতায় ডুবিয়ে দিয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঢাকার পাশাপাশি নরসিংদী ও গাজীপুরেও ভূমিকম্পে আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ। কেবল নরসিংদীতেই আহত ৪৫ জনের মধ্যে ৩ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গাজীপুরের তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও ১০ জনকে ভর্তি করা হয়েছে।

সরেজমিনে কসাইটুলিতে দেখা যায়, ভেঙে পড়ে থাকা রেলিং ও রক্তের দাগ এখনো সেই ভয়াবহতার সাক্ষী। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেখানে উদ্ধার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মল্লিক আহসান উদ্দিন জানান—রেলিং বা সানসেট ভেঙে তিনজন ঘটনাস্থলেই মারা যান বা গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

আজকের এই ভূমিকম্প আবারো স্মরণ করিয়ে দিল—নির্মাণ ত্রুটি, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও অপ্রস্তুত নগরই বড় দুর্যোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। একই সঙ্গে মানবিক দিক থেকেও এই দিন হয়ে থাকল বেদনার এক অমোচনীয় স্মৃতি—মায়ের সামনে সন্তানের মৃত্যু, সন্তানের সামনে মায়ের আহাজারি, আর চারদিকে এক অস্থির সকাল।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/6990 ,   Print Date & Time: Wednesday, 26 November 2025, 06:53:03 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh