
গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলায় বুধবার ২৭ জন নিহত হয়েছেন বলে উপত্যকার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ইসরাইল ও হামাস—উভয় পক্ষই ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জন্য পরস্পরকে দোষারোপ করছে।
গাজা সিটি থেকে এএফপি জানায়, গত মাসে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর এটি ছিল গাজায় সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলাগুলোর একটি। প্রায় এক বছর ধরে চলমান যুদ্ধবিরতির মধ্যেই লেবাননে হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে ধারাবাহিক হামলার ঘোষণা দেওয়ার পর ইসরাইল বুধবারের এই হামলা চালায়।
হামাস কর্তৃপক্ষ পরিচালিত সিভিল ডিফেন্স এবং দুটি হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, গাজা সিটির উত্তরে ১৬ জন এবং দক্ষিণের খান ইউনিসে ১৩ জন নিহত হয়েছেন।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, দক্ষিণ গাজায় তাদের টহলরত সেনাদের ওপর হামাস গুলি চালানোর পর ‘যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন’ করে তারা পাল্টা হামলা চালিয়েছে। তবে হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং এসব হামলাকে যুদ্ধবিরতি বিপন্নকারী ‘বিপজ্জনক বৃদ্ধি’ বলে নিন্দা জানিয়েছে। ১০ অক্টোবর থেকে যুদ্ধবিরতি বহাল থাকলেও হামলা অব্যাহত রয়েছে।
এএফপিকে ৫০ বছর বয়সী আহরাফ আবু সুলতান বলেন, দীর্ঘ এক বছর দক্ষিণে বাস্তুচ্যুত থাকার পর গত রোববার তিনি পরিবারসহ গাজা সিটির নিজ বাড়িতে ফিরেছেন।
ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা
গাজায় গণমাধ্যম নিষেধাজ্ঞা ও প্রবেশের সীমাবদ্ধতার কারণে উভয় পক্ষের দেওয়া মৃতের সংখ্যা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি এএফপি।
গাজার সিভিল ডিফেন্স ও পাঁচটি হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে দৈনিক সর্বাধিক প্রাণহানি ঘটে ২৯ অক্টোবর, যেদিন ইসরাইলি হামলায় শতাধিক মানুষ নিহত হয়।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, যুদ্ধবিরতির মধ্যে ইসরাইল হামাসকে লক্ষ্য করে দাবি করা স্থানে বারবার হামলা চালিয়েছে, এতে এখন পর্যন্ত ২৮০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
মার্কিন মধ্যস্থতায় হওয়া একটি চুক্তির ভিত্তিতে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এতে হামাসের হাতে থাকা শেষ ৪৮ জন জিম্মিকে ইসরাইলে ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল। যুদ্ধবিরতির শুরুতে জীবিত সব জিম্মিকে ফেরত দেওয়া হলেও মৃতদের হস্তান্তর প্রক্রিয়া ধীরগতিতে চলছে; এখনো তিনজনের মৃতদেহ গাজায় রয়ে গেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার দ্বিতীয় পর্যায়ের লক্ষ্য—হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ, অন্তর্বর্তীকালীন কর্তৃপক্ষ গঠন এবং একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীল বাহিনী মোতায়েন—এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সোমবার ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে সমর্থন জানিয়ে মার্কিন-খসড়া প্রস্তাবে ভোট দিয়েছে। তবে হামাস এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, এটি ফিলিস্তিনিদের ‘রাজনৈতিক ও মানবিক দাবি’ পূরণে ব্যর্থ।