• হোম > বাংলাদেশ > লাভলু মোল্লাহর “আই ডোন্ট কেয়ার” পোস্ট: ঢাবি প্রশাসন নেয়া কঠোর পদক্ষেপ

লাভলু মোল্লাহর “আই ডোন্ট কেয়ার” পোস্ট: ঢাবি প্রশাসন নেয়া কঠোর পদক্ষেপ

  • মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৪:০১
  • ৪৩

---

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আবারও উত্তাপ ছড়াল মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের পরবর্তী প্রতিক্রিয়াকে ঘিরে। ফেসবুকে মন্তব্যের জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ লাভলু মোল্লাহকে সোমবার গভীর রাতে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ও কয়েকজন শিক্ষার্থী। ঘটনাটি রাতারাতি ক্যাম্পাসের আলোচিত প্রসঙ্গ হয়ে ওঠে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঘোষিত রায়ের পর লাভলু মোল্লাহ তার ফেসবুক প্রোফাইলে শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত একটি ফটো কার্ড পোস্ট করেন, যার ওপর লেখা ছিল—
“আই ডোন্ট কেয়ার।”
ফেসবুক পোস্টটি প্রকাশের পর থেকেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকের মতে, এমন সংবেদনশীল মুহূর্তে একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার প্রকাশ্য অবস্থান উত্তেজনা উসকে দিতে পারে।


থানায় সোপর্দ করার ঘটনা: ওসির বর্ণনা

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ খালিদ মনসুর দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, “প্রক্টরিয়াল টিম এবং কিছু শিক্ষার্থী লাভলুকে থানায় নিয়ে আসে। তিনি শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরোধিতা করে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। বিষয়টি আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে দেখছি।”

তিনি আরও বলেন,
“আমরা এ ধরনের মামলায় প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করছি। তাকে গ্রেপ্তার বা হেফাজতে রাখা হয়েছে কি না—এই পর্যায়ে তা বলা যাচ্ছে না। পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে।”

ওসির দাবি, লাভলু মোল্লাহ জুলাই আন্দোলনের সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন এবং অতীতে তিনি একটি নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ফলে বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টটি তদন্তের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা পেয়েছে বলে পুলিশ সূত্রগুলোর মত।

প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। তবে তদন্ত ও আইনি যাচাই-বাছাই চলছে।


শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক উত্তেজনা ও আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত। সাম্প্রতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল উত্তপ্ত ছিলই; এর মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার প্রকাশ্য পোস্ট ঘটনাটিকে আরও সংবেদনশীল করে তোলে।

শিক্ষার্থীরা মনে করেন, একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ রায় ঘোষণার পর এমন উস্কানিমূলক মন্তব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে পারে।


ডাকসু নেত্রী ফাতিমা তাসনিম জুমার প্রতিক্রিয়া

ডাকসুর মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক ফাতিমা তাসনিম জুমা তার ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে মন্তব্য করেন:

“লাভলুরে পুলিশের হাতে সোপর্দ কইরা এলাম। গণহত্যাকারী টিচারদের ব্যাপারেও আমাদের সেইম স্ট্যান্ডই থাকবে। উনাদের নিয়ে কেউ সুশীলতা করলে তাদেরও হিসাব নেওয়া হবে।”

তার এই পোস্টটি সামাজিক মাধ্যমে আরও আলোচনা-কেন্দ্রিক হয়ে ওঠে এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করে।


হিউম্যানিটারিয়ান বিশ্লেষণ: একটি জাতির মানসিক ক্ষত ও ক্যাম্পাসের স্নায়ুচাপ

এ ঘটনা শুধুই একটি পোস্ট বা একজন কর্মকর্তাকে থানায় হস্তান্তর করার সাধারণ প্রশাসনিক প্রক্রিয়া নয়—
এটি সমষ্টিগত মানসিক প্রতিক্রিয়া, একটি জাতির দীর্ঘদিনের আঘাত, এবং বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে সামাজিক বিভাজনের শিল্পসত্তা বহন করে।

  • মানবতাবিরোধী অপরাধের রায় সবসময়ই আবেগ-রাজনীতি-ন্যায়বোধের সম্মিলন ঘটায়।

  • বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সংবেদনশীল একাডেমিক পরিবেশে এমন উত্তেজক পোস্ট দ্রুত আঘাত করে শিক্ষার্থীসমাজের অনুভূতিতে।

  • প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বক্তব্য বা পোস্ট দায়িত্ব ও পেশাদারির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে তা সহজেই সংঘাত সৃষ্টি করতে পারে।

  • মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে—বিচারপ্রাপ্তির আশা, রাজনৈতিক বিভাজন, এবং সমাজের আহত স্মৃতি—সবকিছুই এমন ঘটনার পেছনে প্রভাব ফেলে।

এ ঘটনার প্রতিটি পরত আমাদের মনে করিয়ে দেয়—বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা, রাজনীতি এবং বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতি আসলে একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।


উপসংহার

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার লাভলু মোল্লাহকে সোপর্দের ঘটনা পুরো ক্যাম্পাস ও দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার একটি পোস্ট থেকে শুরু হওয়া এই উত্তেজনা এখন আইনি ও প্রশাসনিক স্তর পর্যন্ত পৌঁছেছে।
তদন্ত শেষে তার বিরুদ্ধে মামলার প্রয়োজন হবে কি না—তা নির্ভর করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরবর্তী প্রক্রিয়ার ওপর।
তবে বিষয়টি যে পরবর্তী সময়ে বৃহত্তর বিতর্ক সৃষ্টি করবে—তা এখনই স্পষ্ট।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/6896 ,   Print Date & Time: Wednesday, 26 November 2025, 09:06:45 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh