• হোম > রাজনীতি > শাটডাউন ঘোষণা, রায় প্রত্যাখ্যান আ.লীগের

শাটডাউন ঘোষণা, রায় প্রত্যাখ্যান আ.লীগের

  • সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৯:২০
  • ৫৪

---

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়কে সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশে সরকারি নির্দেশে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই রায় জনমতের প্রতিফলন নয়, বরং এটি একটি রাজনৈতিক প্রতিশোধ এবং মানবাধিকারের মৌলিক নীতির পরিপন্থী সিদ্ধান্ত।

দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এক ভিডিও বার্তায় বলেন—
“আজ যে রায় ঘোষণা করেছে, এ রায় বাংলার জনগণ প্রত্যাখ্যান করে। বাংলার জনগণ এ রায় মানে না, মানবে না।”
তার কথায়, রায়টি ন্যায়বিচারের জায়গা থেকে নয়, বরং বিদ্বেষ, প্রতিহিংসা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তাড়নার ফল।

২০ দিন আদালত পরিচালনার অভিযোগ

নানক অভিযোগ করেন, বিচারকার্য তড়িঘড়ি করে শেষ করা হয়েছে। তার দাবি—

  • মামলা শুরু হয় ১৪ আগস্ট,

  • শেষ হয় ১৭ নভেম্বর,

  • প্রায় ৮৪ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৫৪ জনকে হাজির করা হয়,

  • দুই মাসের মধ্যে মাত্র ২০ দিন আদালত চলে,

  • এবং সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ বিষয়—প্রধান বিচারক এক মাস অনুপস্থিত থাকার পরও রায় ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

নানকের ভাষায়,
“এরপরও প্রতিশোধের লক্ষ্য নিয়ে মানুষের প্রিয় নেত্রীর বিরুদ্ধে যে রায় দিয়েছে, তা আইনের শাসনকে উপহাস করার সামিল।”

মানবিক সংকট–ভিত্তিক উদ্বেগ

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রায়কে ঘিরে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তা দেশের মানবিক পরিস্থিতিতে নতুন চাপ তৈরি করবে।

  • মানুষের চলাফেরা,

  • বাজার-ব্যবসা,

  • নিত্যপণ্যের বাজার,

  • এমনকি গ্রামীণ এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও
    বদ্ধ হয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

একটি মানবিক মূল্যায়নে দেখা যায়—যে কোনো শাটডাউন, হরতাল বা রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে নি¤œ-আয়ের মানুষের ওপর—দিনমজুর, শ্রমিক, পরিবহনকর্মী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রেতা—যারা প্রতিদিনের আয়ের ওপর নির্ভর করেন।

এই প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা শাটডাউন ঘোষণার মাধ্যমে দলটি বলেছে, যদি প্রয়োজন হয় আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়া হবে। এর আগেও নিষিদ্ধ থাকা দলটির যেকোনো রাজনৈতিক তৎপরতা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে—কি পরিমাণে তাদের কর্মসূচি মাঠে বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

সরকারকে ‘পদত্যাগে বাধ্য করার’ ঘোষণা

ভিডিও বার্তার শেষ দিকে নানক আরও কঠোর ভাষায় বলেন—
“অচিরেই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করবো।”
তিনি দাবি করেন, সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ তীব্র হয়ে উঠেছে এবং বর্তমান রায়ের মাধ্যমে সেই ক্ষোভ আরও বেড়েছে।
নানকের বক্তব্য অনুযায়ী, রায় ঘোষণার পদ্ধতি এবং আদালতের কাঠামো—দুটোকেই ‘অবৈধ’ এবং ‘মানবাধিকারের পরিপন্থী’ বলে উল্লেখ করেন।

হিউম্যানিটারিয়ান দৃষ্টিভঙ্গিতে ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি

মানবিক পরিস্থিতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন—

  • রাজনৈতিক সংঘাত বাড়লে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও ব্যাহত হতে পারে,

  • চিকিৎসা এবং জরুরি সেবাগুলোতে বাধা তৈরি হতে পারে,

  • নিম্নআয়ের মানুষের জীবিকা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে,

  • গ্রামীণ এলাকা থেকে শহরে পণ্য সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এ ছাড়া রায়কে কেন্দ্র করে যদি আরও বিক্ষোভ বা পাল্টা-বিক্ষোভ হয়, তবে দেশের মানবাধিকার চিত্র আরও উদ্বেগজনক হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সামাজিক মনস্তত্ত্বে প্রভাব

মাঠপর্যায়ের মানুষজনের মধ্যে আতঙ্ক, অনিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তাহীনতা বাড়তে পারে।
প্রতিটি রাজনৈতিক উত্তেজনা—হোক তা রায়ের প্রতিবাদে বা রায় সমর্থনে—সাধারণ মানুষের মানসিক চাপ বাড়িয়ে তোলে।
বিশেষ করে—মহিলা, শিশু ও প্রবীণদের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।

উপসংহার

আওয়ামী লীগের রায় প্রত্যাখ্যান, সরকারের পক্ষে অবস্থান এবং আদালতের কাঠামো নিয়ে বিতর্ক—সব মিলিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠার ঝুঁকি বাড়িয়েছে।
এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন—
রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা নয়, মানবিক মূল্যবোধকে অগ্রাধিকার দিয়েই পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে।
কারণ রাজনৈতিক সংঘাতের সবচেয়ে বড় মূল্য দেয় সাধারণ মানুষ, যারা প্রতিদিন তাদের ন্যূনতম চাহিদা পূরণে সংগ্রাম করে।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/6871 ,   Print Date & Time: Wednesday, 26 November 2025, 03:37:58 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh