• হোম > রাজনীতি > জামায়াত: ‘আজকের রায় নিরপেক্ষ ও প্রশ্নাতীত’

জামায়াত: ‘আজকের রায় নিরপেক্ষ ও প্রশ্নাতীত’

  • সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৯:০৮
  • ৪৫

---

মানবতাবিরোধী অপরাধের দীর্ঘ ইতিহাস ও সেই অপরাধের বেদনাবহ স্মৃতি আজ আবারও সামনে উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঘোষিত মৃত্যুদণ্ডের রায়কে ঘিরে। রায় ঘোষণার পর দেশে রাজনৈতিক অঙ্গন যেমন আলোড়িত হয়েছে, তেমনি মানবিকভাবে ক্ষতবিক্ষত অসংখ্য মানুষের হৃদয়ে ভেসে উঠেছে তাদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনা, অপেক্ষা ও ন্যায়বিচারের আর্তি। এই মুহূর্তে দলীয় প্রতিক্রিয়া জানাতে এসে জামায়াতে ইসলামীর নেতারা তাদের বক্তব্যে ফুটিয়ে তুলেছেন সেই ইতিহাস, সেই বেদনা এবং বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের বহু বছরের আস্থাহীনতার পরিবর্তনের আশা।

“ইতিহাসে প্রথম—একজন সরকার প্রধানের সর্বোচ্চ শাস্তি”

জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন—
“একজন সরকার প্রধানের সর্বোচ্চ শাস্তি দেশের ইতিহাসে প্রথম। এই রায় তাই স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”

তার ভাষায়, এই রায়ে বিচারকের সিদ্ধান্তে ফুটে উঠেছে সেই নিষ্ঠুর ও ঘৃণ্য অপরাধের চিত্র, যা বহু বছর ধরে শুধুই গুঞ্জন, অভিযোগ এবং নিপীড়িত মানুষের কান্নায় সীমাবদ্ধ ছিল। আজ তা আইনি স্বীকৃতি পেল।

আগের ট্রাইব্যুনাল ও আজকের তুলনা—এক বেদনাবহ ইতিহাস

পরওয়ার বলেন,
“আগের ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতাদের মামলাগুলো ছিল সাজানো। সে বিচার ছিল ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মিথ্যাচার।”

তার বক্তব্য শুধু রাজনৈতিক সমালোচনা নয়—এটি মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সাবেক সরকারের অধীনে পরিচালিত বিচারগুলিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, নির্যাতনমূলক এবং মানবাধিকারের পরিপন্থী বলে উল্লেখ করেন।

কিন্তু আজকের রায়কে তিনি ভিন্নভাবে দেখেন—
“আজকের বিচার হলো যথার্থ, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও প্রশ্নাতীত।”

এই মন্তব্যে ফুটে ওঠে বহু পরিবারের দীর্ঘ দিনের ক্ষোভ, হতাশা এবং ন্যায়বিচারের তীব্র চাহিদা, যেটি তারা জোরালোভাবে অনুভব করেছিলেন সেই সময়গুলোতে, যখন বিচার ব্যবস্থার উপর রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ ছিল প্রবল।

১৮ কোটি মানুষের আকাঙ্ক্ষা—মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার

মিয়া গোলাম পরওয়ার দাবি করেন—
“এদেশের ১৮ কোটি মানুষের আকাঙ্ক্ষা ছিল ঘৃণ্য মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার দৃশ্যমান করা। আজ আংশিক হলেও সেই আশা পূর্ণ হলো।”

মানবাধিকার সংগঠন, ভুক্তভোগী পরিবার, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্বজন—সবাই বহুদিন ধরে বলে আসছিলেন যে মানবতাবিরোধী অপরাধগুলো বিচার না হলে সমাজে ন্যায় ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে না।

আজকের রায় তাদের কাছে তাই শুধু রাজনৈতিক বিচার নয়—এটি একটি মানবিক স্বস্তি, একটি নৈতিক বিজয়।

বিচারের নতুন অধ্যায়—মানবাধিকারের বিজয়?

জামায়াতের বক্তব্য অনুযায়ী, এই রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থায় একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো।

দলের নেতা বলেন—
“বাংলাদেশের রাজনীতি, আইনের শাসন এবং বিচারের ইতিহাসে এই দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

তার বক্তব্যে ফুটে ওঠে—এই রায় শুধু একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ নয়; এটি একটি সমাজের আত্মশুদ্ধির ও মানবিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাইলফলক।

মানুষের দীর্ঘ শোকের প্রতি সমবেদনা

হিউম্যানিটারিয়ান দৃষ্টিকোণ থেকে এই রায় বহু মানুষের কাছে ফিরে আসা ন্যায়ের আলো।
অনেক পরিবার সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন—
“আজকের রায় আমাদের চোখের জলকে স্বীকৃতি দিল।”
“আমাদের যন্ত্রণার ওপর কেউ যে দাঁড়িয়েছিল, আজ তারিই বিচার হলো।”

এই অশ্রু শুধু ন্যায়বিচারের জন্য নয়—এটি বছরজুড়ে সহ্য করা ভয়, অত্যাচার, নিপীড়ন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে মানবিক প্রতিবাদ।

আইন, রাজনীতি ও মানবতার সংযোগস্থল

জামায়াত নেতাদের ভাষ্য রাজনৈতিক হলেও, এর মধ্যেই মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানের প্রতিফলন দেখা যায়।
রায়টি সমাজে যে ধরনের আলোচনার জন্ম দিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে আগামী বহু বছর জুড়ে মানবাধিকার, ন্যায়বিচার ও রাষ্ট্রীয় নীতি নিয়ে ভবিষ্যত প্রজন্মকে ভাবতে বাধ্য করবে।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/6864 ,   Print Date & Time: Thursday, 27 November 2025, 08:35:25 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh