![]()
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে:
-
তিনটি অভিযোগে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড
-
দুটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড
-
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও মৃত্যুদণ্ড
-
রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড
এ রায় শুধু মামলার আইনি দিক নয়, আন্দোলনের সময় নিহত-আহত মানুষের পরিবারের জন্য একটি মানবিক স্বস্তি সৃষ্টি করেছে।
বিএনপির প্রতিক্রিয়া: “স্বৈরশাসনের কবর রচনা”
রায় ঘোষণার পরপরই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুকে লিখেছেন—
“আজকের রায় শুধু শেখ হাসিনার অপরাধের বিচার নয়, বরং দেশের মাটিতে সবধরনের স্বৈরশাসনের কবর রচনা।”
তার মতে, এটি বাংলাদেশের দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রাপথে এক নতুন গণতান্ত্রিক অধ্যায়ের সূচনা।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, এটি শুধু একটি ব্যক্তি বা সরকারের বিচার নয়—এটি বাংলাদেশের মানুষকে decades ধরে আটকে রাখা ভয়, দমন, নির্যাতনের প্রতিটি ক্ষতের প্রতি স্বীকৃতি।
ন্যায়বিচারের মাইলফলক’: সালাহউদ্দিন আহমেদের প্রতিক্রিয়া
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন—
“ফ্যাসিস্ট যত শক্তিশালীই হোক, একদিন আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবেই।”
তিনি এই রায়কে বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য একটি মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেন।
তাঁর বক্তব্যে মূল তিনটি দিক উঠে আসে:
-
ন্যায়বিচারের প্রতিষ্ঠা
-
আইনের শাসনের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরে আসা
-
ভবিষ্যতে স্বৈরাচার রোধে কঠিন উদাহরণ তৈরি
তিনি আরও বলেন,
“অপরাধের তুলনায় এই বিচার যথেষ্ট নয়, তবে এটি ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা—কেউ যেন আর ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র গড়ার সাহস না পায়।”
হিউম্যানিটারিয়ান দৃষ্টিকোণ: রায়ের মানে কী?
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময়:
-
শত শত মানুষের মৃত্যু,
-
হাজারো মানুষ আহত,
-
যুবসমাজের ওপর ভয়াবহ দমন-পীড়ন,
-
গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ,
-
রাতের বেলায় ধরপাকড় ও গুমের অভিযোগ—
এই সবকিছুই অনেক পরিবারের জীবনকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে।
এই রায় সেই ক্ষতবিক্ষত পরিবারগুলোর জন্য এক ধরনের মানবিক স্বীকৃতি, যেন রাষ্ট্র স্বীকার করছে—
“তোমরা যে অন্যায়ের শিকার হয়েছিলে, আমরা তা অস্বীকার করছি না।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থাকে বিশ্বদরবারে আবারও মানুষের জন্য আশার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরতে পারে।
দেশজুড়ে প্রতিক্রিয়া: নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার সূচনা
রায় ঘোষণার পর ঢাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি—সব বাহিনীই উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে।
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া মিশ্র:
-
কেউ বলছেন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হলো,
-
কেউ মনে করছেন রায় আরও কঠোর হওয়া উচিত ছিল,
-
আবার অনেকেই বলছেন রাজনীতি এখন নতুন দিকে যাবে।
দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, নীতিনির্ধারণ, ভবিষ্যৎ নির্বাচন, শাসনব্যবস্থা—সবকিছুতেই বড় প্রভাব ফেলবে এই রায়।
আইনি প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপ
যদিও রায় ঘোষণা হয়েছে, এটি এখনও চূড়ান্ত নয়।
শেখ হাসিনা আপিল বিভাগে আপিল করার সুযোগ পাবেন।
এরপর:
-
আপিল শুনানি,
-
রায় বহাল/পরিবর্তন/বাতিল,
-
রিভিউ আবেদন,
-
এবং সর্বশেষ
-
রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগ।
সব মিলিয়ে আইনি প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ হবে।
শেষকথা
জুলাই গণঅভ্যুত্থান মামলা শুধু একটি রাজনৈতিক বিচার নয়—এটি বাংলাদেশের জনগণের দীর্ঘদিনের দমিত যন্ত্রণার একটি মানবিক উন্মোচন।
বিএনপির বক্তব্যে যেমন উঠে এসেছে—
এই রায় অতীতের বিচার হলেও, ভবিষ্যতের জন্য একটি ভয়ঙ্কর সতর্কবার্তা:
কেউ যেন আর ক্ষমতার নামে জনগণের ওপর নিষ্ঠুরতা চাপিয়ে দিতে সাহস না পায়।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি নিঃসন্দেহে একটি নতুন অধ্যায়।