• হোম > রাজনীতি > রায়ের মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচারের নতুন মাইলফলক

রায়ের মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচারের নতুন মাইলফলক

  • সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৫:৪৯
  • ৩৭

---

মানবতাবিরোধী অপরাধের রায়: ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারের জোরালো বার্তা

গত বছরের জুলাই–অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ দ্বারা। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণা করেন।

একই রায়ে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে, যিনি রাজসাক্ষী হয়ে ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন, ফাঁসির যোগ্য হলেও কম সাজা—৫ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।


আইজিপি আল-মামুনের ক্ষমা প্রার্থনা

রায়ের পর আদালতে আল-মামুন বলেন,
“আমি আদালত ও জাতির কাছে ক্ষমা চাইছি। আমি দোষ স্বীকার করেছি এবং রাজসাক্ষী হয়ে সত্য উন্মোচনে সাহায্য করেছি।”

ট্রাইব্যুনালের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, তার রাজসাক্ষী হওয়া বিচার প্রক্রিয়াকে মানবিক ও আইনগত দিক থেকে শক্তিশালী করেছে। শহিদ ও আহত পরিবারগুলো এই স্বীকারোক্তিকে ন্যায়ের প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে দেখছে।


জুলাই–অগাস্ট গণঅভ্যুত্থান: মানবতাবিরোধী অপরাধের মানবিক প্রভাব

ট্রাইব্যুনাল রায়ে বলা হয়েছে, গণঅভ্যুত্থানের সময় পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, লাশ পোড়ানো এবং সাধারণ মানুষের উপর সহিংসতা সংঘটিত হয়েছিল।

নিহত সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র মা সামছি আরা জামান, রংপুরের নিহত ছাত্র আবু সাঈদের পরিবার, চানখাঁরপুল ও আশুলিয়ার নিহতদের স্বজনরা দীর্ঘদিন ধরে এই রায়ের অপেক্ষায় ছিলেন। রায়ের মাধ্যমে তাদের দীর্ঘদিনের ক্ষতিকে স্বীকৃতি দেয়া হলো।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বড় পর্দায় রায় দেখানোর সময় হাজারো মানুষ চোখে অশ্রু নিয়ে শহিদ ও আহতদের প্রতি সম্মান জানাচ্ছেন। ছাত্র-ছাত্রীরা স্লোগান দিচ্ছেন—
“ফাঁসি চাই, হাসিনার ফাঁসি চাই”
“দুই হাজার শহীদ, শহীদ পরিবারের ন্যায়বিচার চাই”


বিএনপির প্রতিক্রিয়া

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন,
“এই রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো—ফ্যাসিবাদ যত শক্তিশালী হোক, যতই ক্ষমতা দখলে রাখুক, একদিন না একদিন আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।”
তিনি বলেন, রায়টি ন্যায়ের মাইলফলক এবং ভবিষ্যতে কোনো সরকার বা ব্যক্তি ফ্যাসিস্ট, স্বৈরাচারী বা একনায়ক হয়ে উঠতে পারবে না, তার জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।


ধানমন্ডি ৩২: উত্তেজনা ও নিরাপত্তা

রায়ের দিন ধানমন্ডি ৩২-এ বিক্ষোভকারীরা এক্সকাভেটর নিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করেন। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সাউন্ড গ্রেনেড ও ইটের আঘাতের মধ্যে কিছু আহত হয়।

রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের চারপাশে পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন,
“যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত।”


মানবিক বিশ্লেষণ

  1. শহিদ ও আহতদের জন্য ন্যায়ের স্বীকৃতি: দীর্ঘদিনের বেদনার বিরুদ্ধে একটি আইনি জবাব।

  2. রাজসাক্ষীর মানবিক দৃষ্টিকোণ: আল-মামুনের স্বীকারোক্তি বিচার প্রক্রিয়াকে মানবিক ও ন্যায়সঙ্গত করেছে।

  3. সমাজে বার্তা: ভবিষ্যতে ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সতর্কতা, এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়বদ্ধতা।


উপসংহার

এই রায় কেবল রাজনৈতিক নয়, এটি মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ন্যায়ের প্রতীক, শহিদ পরিবার ও আহতদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার ফল।
ভবিষ্যতের বাংলাদেশে এটি ন্যায়ের শিক্ষণীয় উদাহরণ হয়ে থাকবে।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/6837 ,   Print Date & Time: Wednesday, 26 November 2025, 06:52:03 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh