• হোম > রাজনীতি > রায়ের আগে অডিও বার্তায় শেখ হাসিনা

রায়ের আগে অডিও বার্তায় শেখ হাসিনা

  • সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:৩৬
  • ৫৯

---

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার আগের রাত—দেশজুড়ে উৎকণ্ঠা, অনিশ্চয়তা আর রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝেই সমর্থকদের উদ্দেশে পাঠানো একটি অডিও বার্তা নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দৃঢ় কণ্ঠে দাবি করেছেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো “মিথ্যা” এবং এটি তাকে রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্ন করার একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা।

ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, শেখ হাসিনা রায়ের আগে কোনো ধরনের ভয় বা উদ্বেগ অনুভব করছেন না। বরং তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন—
“আল্লাহ আমাকে জীবন দিয়েছেন, তিনিই নেবেন। দেশের মানুষের জন্য কাজ করব, বাংলাদেশেই বিচার দেব।”


অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র অভিযোগ, রাজনৈতিক নিশ্চিহ্নকরণের ভয়

অডিও বার্তায় তিনি সরাসরি অভিযোগ করেন, নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার তার দলকে “শেষ করে দিতে” চায়।
তার ভাষায়—
“আওয়ামী লীগ শেকড় থেকে উঠে এসেছে, কোনো ক্ষমতাদখলকারীর পকেট থেকে না। আমাদের শেষ করা এত সহজ না।”

এই কথাগুলো ছিল শুধু রাজনৈতিক বক্তব্য নয়—একজন দীর্ঘকাল দেশ চালানো নেতার গভীর ক্ষোভ, হতাশা এবং শঙ্কার বহিঃপ্রকাশ। মানবাধিকার ইস্যু, বিচার প্রক্রিয়া, গণতান্ত্রিক নীতি—সব মিলিয়ে জাতির সামনে তিনি তুলে ধরেন তার আত্মপক্ষ সমর্থন।


বিক্ষোভ, আশ্রয়, এবং রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ—মানবিক ব্যাখ্যা তুলে ধরলেন তিনি

শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে মানবাধিকারের প্রসঙ্গও তোলেন।
তার দাবি—
“আমি ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি। আর তারা আমাকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ দেয়?”

এ বক্তব্য বিশেষজ্ঞদের কাছে শুধু রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া নয়—বরং বাংলাদেশের মানবিক ভূমিকার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা একটি গভীর বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। তিনি স্পষ্ট করে জানান, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে “রাজনৈতিকভাবে তৈরি করা একটি বর্ণনা”।


ছাত্র আন্দোলন, দাবি-দাওয়া, এবং বিশৃঙ্খলার অভিযোগ

গত বছরের ছাত্র আন্দোলন নিয়ে তিনি জানান—সরকার সব দাবিই মেনে নিয়েছিল, কিন্তু “পরিকল্পিতভাবে একের পর এক নতুন দাবি তোলা হয়”, যার উদ্দেশ্য ছিল “দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা”।

তার মতে, এ আন্দোলনকে ঘিরেই দেশের রাজনৈতিক ভারসাম্য ভেঙে পড়ে এবং পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।

তিনি বলেন—
“আমি জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হইনি, কিন্তু আমাকে বিচ্ছিন্ন দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে।”


গণভবনে হামলা—রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয়, ‘সন্ত্রাসীদের’ দোষারোপ

গণভবন ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনাকে তিনি গভীর ক্ষোভ নিয়ে উল্লেখ করেন।
তার বক্তব্য—
“গণভবন আমার সম্পত্তি না, এটা সরকারি সম্পত্তি। লুটেরা আর সন্ত্রাসীরা কোনোদিন বিপ্লব করতে পারে না।”

মানবিক, আবেগঘন মুহূর্ত আসে যখন তিনি বলেন—
“আমার বাবা-মা, ভাইবোন সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। তারা আমার ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমি থামিনি।”

এ বক্তব্য স্পর্শ করে সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের হৃদয়। এটি শুধু রাজনীতি নয়—ব্যক্তিগত ক্ষতি, ট্রমা, এবং মানুষের পাশে থাকার এক প্রতিজ্ঞার প্রতিচ্ছবি।


ক্ষমা নীতি ও ন্যায়বিচারের প্রশ্ন—ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর মন্তব্য

তিনি অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তী সরকার যাদের বিরুদ্ধে হত্যা, সন্ত্রাস, রাজনৈতিক সহিংসতার অভিযোগ ছিল, তাদের সাধারণ ক্ষমা দিয়েছে।
তার প্রশ্ন—
“এভাবে ক্ষমা দিলে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো বিচার পাবে কীভাবে?”

তিনি এটিকে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবেই দেখেন, বরং তাকে অভিযুক্ত করা বিষয়টিকে “রাজনৈতিক প্রতিহিংসা” বলে উল্লেখ করেন।


সমর্থকদের উদ্দেশে শক্ত বার্তা—‘সময় লাগবে, কিন্তু আমরা ফিরব’

অডিও বার্তায় তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আশ্বাসমূলক এবং দৃঢ় বার্তা দেন—
“চিন্তা করো না, আমরা ভুলব না। হিসাব হবে। ইনশাআল্লাহ, আমরা আবার ফিরব।”

এটি শুধু একটি রাজনৈতিক প্রতিজ্ঞা নয়—it was a call for unity during one of the most turbulent periods in Bangladesh’s political history.


অর্থনীতি, বেকারত্ব, ব্যাংক সংকট—অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরেন তিনি

তিনি অভিযোগ করেন, বর্তমানে—

  • বেকারত্ব বাড়ছে

  • আয় কমছে

  • শিল্পকারখানা বন্ধ হচ্ছে

  • ব্যাংক লুট চলছে

  • উৎপাদন কমছে

তার বক্তব্য—
“আমাদের অর্জনগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশকে এই পরিস্থিতি থেকে বের করতে হবে।”


শেষ বাক্যে আবেগ, প্রত্যয় এবং রাজনৈতিক ঘোষণা

সবশেষে তিনি বলেন—
“আমি জনগণের জন্যই বাঁচি। সবাই ভালো থেকো। জয় বাংলা, জয় বাংলাদেশ।”

তার সমগ্র বার্তা ছিল
➡ রাজনৈতিক,
➡ মানবিক,
➡ ব্যক্তিগত যন্ত্রণার প্রকাশ,
➡ এবং জনগণের ওপর আস্থার পুনর্ব্যক্তি।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/6821 ,   Print Date & Time: Wednesday, 26 November 2025, 07:12:17 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh