• হোম > বাণিজ্য > চড়া দামে দেশি মুরগি–মাছ, আশ্রয় ব্রয়লারে

চড়া দামে দেশি মুরগি–মাছ, আশ্রয় ব্রয়লারে

  • শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০
  • ৮৯

---

চড়া দামে মাছ ও দেশি মুরগি, টিকে থাকার লড়াইয়ে মানুষের একমাত্র ভরসা ব্রয়লার

রাজধানী ঢাকার বাজারগুলোতে প্রোটিনের উৎস—মাছ ও দেশি মুরগি—আজ মানুষের নাগালের বাইরে এক কঠিন দেয়াল তুলে দিয়েছে। শুক্রবারের বাজারে দেখা গেল, ৬০০ টাকা কেজি দেশি মুরগি আর ৩৫০–৭০০ টাকা কেজি মাছের দামের চাপ গরীব–মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর প্রতিদিনের খাবারের তালিকাকে নতুনভাবে সাজিয়ে দিচ্ছে। অনেকের ঘরে মাংস এখন মাসে একদিনও ওঠে না।
এই বাস্তবতায় মানুষের একমাত্র স্বস্তির জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্রয়লার মুরগি—মাত্র ১৭০ টাকার দামে পাওয়া একমাত্র সাশ্রয়ী প্রাণিজ প্রোটিন।

বাজারে প্রতিদিনের সংগ্রাম—মধ্যবিত্তের টিকে থাকার লড়াই

রাজধানীর উত্তরা সমবায় বাজারে শুক্রবার সকাল। হাটঘাটে মানুষের ভিড়, তবে এক চেনা দৃশ্য দেখা যায়—ক্রেতারা মাছ বা দেশি মুরগির দাম জিজ্ঞেস করে কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকেন, তারপর ধীরে ধীরে হাঁটা বদলে থেমে যান ব্রয়লারের দোকানে।
৬০০ টাকার দেশি মুরগির সামনে ১৭০ টাকার ব্রয়লার যেন এক প্রতীক—অর্থনৈতিক বাস্তবতায় মানিয়ে নেওয়ার, টিকে থাকার, পরিবারের মুখে প্রোটিন তুলে দেওয়ার নীরব সংগ্রামের।

জাহাঙ্গীর আলম নামের এক ক্রেতা বললেন,
“মাছ–মাংস এখন বিলাসিতা। পরিবারের জন্য সপ্তাহে একদিন মাংস লাগেই, কিন্তু দেশি মুরগি বা মাছ কেনার সামর্থ্য নেই। স্বাদ কম হলেও ব্রয়লারই ভরসা—পেট তো ভরাতে হবে।”

এই কথায় যেন ফুটে ওঠে হাজারো পরিবারের বাস্তবতা—অর্থনৈতিক চাপে খাবারের পাতে বৈচিত্র্য নয়, বেঁচে থাকার প্রয়োজনটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।


মুরগির বাজার: চড়া দাম বনাম সস্তার নির্ভরতা

উত্তরার বাজারে দেখা গেছে—

  • দেশি মুরগি: ৫৫০–৬০০ টাকা

  • সোনালি: ৩২০ টাকা

  • সোনালি ক্রস: ২৯০ টাকা

  • ব্রয়লার: মাত্র ১৭০ টাকা

দামের এই বিশাল ব্যবধানই মানুষকে বারবার ব্রয়লারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
মুরগি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন,
“ব্রয়লারের দাম কম মানে যে আমাদের লাভ বেশি তা নয়। পরিবহন খরচ ও খাদ্যমূল্য বেড়ে গেছে—লাভের মার্জিন নেই বললেই চলে। শুধু চাহিদাই এখন ব্যবসাকে ধরে রেখেছে।”

আরেক বিক্রেতা আলমগীর হোসেন জানান, সোনালি বা দেশি মুরগির উৎপাদন ব্যয় অনেক বেশি। ফলে সেগুলোর দাম কমানো সম্ভব নয়। বরং এখন অনেক উৎপাদনকারী সোনালি ফার্ম ছেড়ে ব্রয়লার উৎপাদনে চলে যাচ্ছেন।
তিনি যোগ করেন,
“সামনে শীত, ব্রয়লারের দাম আরও কমতে পারে। এতে ক্রেতারা কিছুটা স্বস্তি পাবেন—এইটাই আমাদের আশা।”


মাছের বাজার: মধ্যবিত্তের পাতে এখন বিলাসিতা

মাছের বাজারে গেলেই বোঝা যায়—মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য মাছ এখন এক দূরদেশের খাবার। প্রতিটি মাছের দামই তাদের সীমানা ছাড়িয়ে গেছে।

বাজারে দেখা গেছে—

  • বড় রুই: ৩৫০–৪০০ টাকা

  • কাতল: ৩৮০–৪৫০ টাকা

  • শিং: ৫৫০ টাকা

  • মাগুর: ৫০০ টাকা

  • বোয়াল: ৫০০–৭০০ টাকা

  • আইড়: ৬০০ টাকা

  • চাষের কৈ: ২০০–২৫০ টাকা

  • পাঙাশ/তেলাপিয়া: ১৫০–২২০ টাকা — এগুলোই এখন গরীব–মধ্যবিত্তের একমাত্র বিকল্প

ফিশারিজ মার্কেটের বিক্রেতা আব্দুস সালাম বলেন,
“দাম স্থির থাকাটা সমস্যা। পাইকারি দাম কমেনি, পরিবহন খরচ বেড়েছে। রুই ৩৫০–৪৫০ টাকা—এটা এখন মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে।”

আরেকজন বিক্রেতা রেজাউল করিম জানান,
“মানুষ মাছের স্টল ঘুরে শুধু তাকায়। শিং মাগুর দেখেই চলে যায়। এখন পাঙাশ–তেলাপিয়ার বিক্রি বেশি, কারণ সেটার দামই শুধু ২০০ টাকার মধ্যে।”

মাছ বিক্রেতাদের চোখে উদ্বেগ, আর ক্রেতাদের চোখে ক্লান্তি—এই বাজার যেন শুধু অর্থনৈতিক নয়, মানবিক সংকটেরই প্রতিচ্ছবি।


খাবারের টেবিল বদলে যাচ্ছে—মানুষ প্রোটিন নয়, সস্তা বিকল্প বেছে নিচ্ছে

প্রতিদিনের বাজারের দামে আজ মানুষ প্রোটিনের মান নয়, দাম দেখে খাবার বেছে নিচ্ছে।
এটা শুধু খাদ্য সংকট নয়—এ এক মানবিক টানাপোড়েন।
শিশুরা পুষ্টি বঞ্চিত হচ্ছে, পরিবারগুলোর স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে, মায়েরা কম খেয়ে বাচ্চাদের খাওয়াচ্ছেন—এইসব নীরব গল্পই বাজারের বেড়ে যাওয়া দাম বহন করছে।

বাংলাদেশের বাজার সংকট আজ শুধু অর্থনীতির সমস্যা নয়—এটি সামাজিক নিরাপত্তা, পরিবারিক স্বাস্থ্য এবং মানবিক টিকে থাকার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মানুষের টেবিলে খাবারের স্বাদ নয়—চিন্তার গন্ধ বেশি।
আর এই চাপে বাজারে মানুষের একমাত্র সান্ত্বনা—ব্রয়লার মুরগি, টিকে থাকার শেষ ভরসা।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/6739 ,   Print Date & Time: Wednesday, 26 November 2025, 02:31:05 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh