• হোম > দেশজুড়ে > মিরপুরে বাসে আগুন: ধাওয়ায় তরুণের মৃত্যু

মিরপুরে বাসে আগুন: ধাওয়ায় তরুণের মৃত্যু

  • শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৪১
  • ৪১

---

ঘটনার শুরু—বাসে আগুন, হাতে মোবাইল, সবই সাজানো ‘ভিডিও’র জন্য

ডিএমপির পাঠানো বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, রাত ১০টার পর উত্তর নবাবের বাগ এলাকায় রাস্তার পাশে স্টেশন করে থাকা একটি বাসে কয়েকজন তরুণ প্লাস্টিকের বোতলে আনা কেরোসিন ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।
আরও বিস্ময়কর হলো—তারা এই অগ্নিসংযোগের দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও করছিল।

একটি শহর, যেখানে প্রতিদিন হাজার মানুষের জীবন ঝুঁকির মধ্যে থাকে, সেখানে নিছক ‘ভিডিও’ বানাতে গিয়ে আগুন লাগানো ঘটনাটি মানবিকভাবে আরও বেদনাদায়ক করে তোলে।


ধাওয়া—ভয়, ভুল সিদ্ধান্ত, আর পানিতে মিলিয়ে যাওয়া প্রাণ

বাসে আগুন দেখে আশপাশের মানুষ আতঙ্কে ছুটে আসে। স্থানীয়রা দ্রুত আগুন নেভাতে চেষ্টা করার পাশাপাশি অভিযুক্তদের পিছু ধাওয়া করতে শুরু করে।
ধাওয়া খেয়ে নাহিয়ান আমির সানি নামে এক তরুণকে ধরে ফেলে জনতা। কিন্তু সঙ্গী ছাইয়াফ আতঙ্কে দৌড়ে গিয়ে তুরাগ নদে ঝাঁপ দেন।

সাঁতার না জানায় কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই নদীর অন্ধকার গহ্বরে তলিয়ে যান তিনি।

মানুষের চিৎকার, নদীর দিকে টর্চের আলো, তড়িঘড়ি করে উদ্ধারচেষ্টা—সবকিছুই ঘটে মাত্র কয়েক মিনিটে। কিন্তু সময় আর ফিরে আসেনি।

ছাইয়াফকে অত্যন্ত মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

একটি ভয়, একটি ভুল সিদ্ধান্ত—এত অল্প সময়ে একটি জীবন শেষ হয়ে গেল।


যে শহর তরুণদের চেনে না, বোঝেও না—সেই শহরেই আজ আবার প্রাণ গেল

এ ঘটনার মানবিক দিকটি আরও গভীর।
২২ বছরের একজন তরুণ—তার ভুল, তার অজ্ঞতা হয়তো ক্ষমাযোগ্য ছিল না, কিন্তু তার জীবন নিশ্চয়ই এর চেয়েও বড় কিছু পাওয়ার দাবিদার ছিল।

ঢাকার মতো দ্রুতগামী, চাপে ভরা শহরে তরুণদের পথ হারানোর ঘটনাই যেন এখন সাধারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কখনও রাজনীতি, কখনও হাইপ, কখনও সোশ্যাল মিডিয়ার দাপট—সব মিলিয়ে তারা কখনো ঝুঁকি বোঝে না, কখনো ভয় পায় বেশি, কখনো সিদ্ধান্ত নেয় ভুল সময়ে ভুলটা।

ছাইয়াফের মৃত্যু যেন আরেকটি সতর্কবার্তা—শহরের তরুণদের মন ও ভবিষ্যৎকে নিয়ে আরও গুরুত্বের সঙ্গে ভাবার সময় এখনই।


অপরাধ, দায়, আর পালিয়ে থাকা রুদ্র

ডিএমপির তথ্যমতে, অভিযুক্ত দলের আরেক সদস্য রুদ্র মোহাম্মদ ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। তাকে ধরতে অভিযান চলছে।

শুধু আইনি দিক থেকেই নয়—এ ঘটনা সমাজের কাছে আরও বড় প্রশ্ন তুলে দেয়:
তরুণদের এই বিপজ্জনক প্রবণতার মূল কোথায়?
ওদের মধ্যে আগুন লাগানোর মতো ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের জন্ম কীভাবে হয়?
এগুলো কি উত্তেজনা, নাকি ভুল সঙ্গ, নাকি সামাজিক অবহেলার ফল?


জনতার বিচার নয়—প্রতিটি জীবনই মূল্যবান

এই ঘটনা আবারও বুঝিয়ে দেয়—ধাওয়া, মারধর, গোষ্ঠী তাড়া কোনো সমাধান নয়। বরং তা পরিস্থিতিকে আরও ভয়ঙ্কর করে তোলে।

যদি জনতা ধাওয়া না দিত, হয়তো ছাইয়াফ পানিতে ঝাঁপ দিতেন না।
অন্যদিকে আগুন লাগানোও ভয়াবহ অপরাধ—কিন্তু প্রতিটি অপরাধের বিচার আইনের মাধ্যমেই হওয়া উচিত।


শেষ কথা—ঢাকার রাতের আরেকটি দুঃখের গল্প

আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বাসটি এখনও রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। পোড়া গন্ধ, কালো ছাপ, আর পথচারীদের বিস্মিত চোখ—সবকিছুই মনে করিয়ে দিচ্ছে, গতরাতটি কত নির্মম ছিল।

একদিকে অপরাধ, অন্যদিকে আতঙ্ক, মাঝখানে হারিয়ে যাওয়া এক তরুণের জীবন—এই সমগ্র ঘটনাটি ঢাকার নগরবাসীর কাছে বড় এক মানবিক বিপর্যয়।
জীবন কত দ্রুত বদলে যেতে পারে, আর একটি ভুল সিদ্ধান্ত কত বড় মূল্য দাবি করতে পারে—এই ঘটনাটি তার গভীর প্রতিচ্ছবি।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/6735 ,   Print Date & Time: Thursday, 27 November 2025, 08:34:35 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh