![]()
একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জে প্রস্তুতির আহ্বান সেনাপ্রধানের—ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের বার্ষিক সম্মেলনে আধুনিক সক্ষমতা বৃদ্ধির বার্তা
দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী ও সক্ষম করে তুলতে সেনাবাহিনীকে আধুনিক প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ এবং পেশাগত দক্ষতায় এগিয়ে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
বৃহস্পতিবার রাজশাহী সেনানিবাসে বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টারের শহীদ কর্নেল নকীব হলে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের ২০তম বার্ষিক অধিনায়ক সম্মেলন ২০২৫–এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।
রেজিমেন্টের গৌরবময় ইতিহাস ও সেবার স্বীকৃতি
বক্তৃতায় সেনাবাহিনী প্রধান রেজিমেন্টের অসামান্য অবদান, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তাদের ভূমিকা এবং জাতীয় সংকট মুহূর্তে দায়িত্ব পালনের জায়গাগুলো গভীরভাবে স্মরণ করেন।
তিনি বলেন,
“বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্ট এই ভূখণ্ডের গর্ব—এই রেজিমেন্টের প্রতিটি সদস্য দেশমাতৃকার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছে এবং ভবিষ্যতেও সেই ঐতিহ্য ধরে রাখবে।”
তিনি রেজিমেন্টের সদস্যদের স্মরণ করিয়ে দেন, একজন সৈনিকের শক্তি শুধু অস্ত্র নয়—আধুনিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ব্যবহার, মানসিক দৃঢ়তা এবং পেশাগত শৃঙ্খলা তার মূল ভিত্তি।
আধুনিক ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের ওপর বিশেষ জোর
বর্তমান বিশ্বে যুদ্ধের ধরন, নিরাপত্তা হুমকি এবং প্রশিক্ষণের ধরনে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে—এই বাস্তবতা উল্লেখ করে সেনাপ্রধান বলেন,
“একবিংশ শতাব্দীর কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি হতে হবে সর্বাধুনিক ও সময়োপযোগী। প্রযুক্তি-নির্ভর যুদ্ধক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন এখন আর বিকল্প নয়।”
তিনি আরও বলেন, আধুনিক প্রশিক্ষণই সৈনিকদের—
-
দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা,
-
সংকট ব্যবস্থাপনা,
-
প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা,
-
মাঠ পর্যায়ে নেতৃত্ব দেওয়ার সামর্থ্য
—এসব গুণ বৃদ্ধি করে।
প্রযুক্তি, গবেষণা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা
সম্মেলনে ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সেনাবাহিনী প্রধান আলোচনায় তোলেন—
-
প্রযুক্তিগত উন্নয়ন
-
গবেষণা ও উদ্ভাবন
-
পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি
-
নেতৃত্বের আধুনিক কৌশল
-
ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য প্রস্তুতি
-
আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা মিশনে আরও শক্তিশালী অবস্থান
তিনি বলেন, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় “প্রযুক্তি-দক্ষ মানবসম্পদ” তৈরি করা এখন জরুরি, এবং ব্রিগেড থেকে ব্যাটালিয়ন—সব স্তরে এই পরিবর্তন আনার সময় এসেছে।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সামরিক বাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্ব
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন—
-
জিওসি, আর্টডক
-
কমান্ড্যান্ট, বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টার
-
জিওসি ১১ পদাতিক ডিভিশন
-
বগুড়া এরিয়ার এরিয়া কমান্ডার
-
সেনাসদরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা
-
রেজিমেন্টাল সেন্টারের বিভিন্ন ইউনিটের অধিনায়ক
-
রাজশাহী স্টেশনে কর্মরত অফিসার
-
গণমাধ্যমকর্মীরা
তাদের উপস্থিতিতে সম্মেলনটি শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক জমায়েত নয়, বরং ভবিষ্যৎ সামরিক কৌশল ও সক্ষমতা উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চে পরিণত হয়।
মানবিক দৃষ্টিকোণ: জাতির নিরাপত্তায় সৈনিকদের অবিরাম প্রস্তুতির গল্প
একটি জাতির নিরাপত্তার পেছনে প্রতিটি সৈনিকের সীমাহীন ত্যাগ, দিনরাতের প্রশিক্ষণ, পরিবার থেকে দূরে থাকা এবং দেশপ্রেমের এক অদৃশ্য শক্তি কাজ করে।
সেনাপ্রধানের আহ্বান সেই মানবিক দায়িত্ববোধকে আরও শক্তিশালী করে।
প্রতিটি সৈনিকের দায়িত্ব শুধু সীমান্তে নয়—
মানবিক সহায়তা, দুর্যোগ মোকাবিলা, শান্তিরক্ষা মিশন, জাতীয় সংকটে সহায়তা—এসব ক্ষেত্রেও তারা দেশের মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
এ কারণে আধুনিক প্রশিক্ষণ শুধু সামরিক চাহিদা নয়—এটি জনগণের নিরাপত্তা ও মানবিক সুরক্ষার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।