![]()
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ: জনগণের ক্ষমতায় নতুন অধ্যায়, বলছেন আইনজীবী শিশির মনির
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারির মধ্য দিয়ে দেশের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় সূচিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামী–ঘনিষ্ঠ শীর্ষ আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
শুক্রবার সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক বিশ্লেষণধর্মী পোস্টে তিনি বলেন,
“এটি জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতার প্রয়োগের একটি মাইলফলক সিদ্ধান্ত।”
তিনি উল্লেখ করেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের মাধ্যমে—
-
জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতার প্রত্যক্ষ প্রয়োগ
-
সংবিধান সংস্কার পরিষদ
-
উচ্চ কক্ষে পিআর (Proportional Representation) পদ্ধতি
-
রাষ্ট্রপতি–প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য
—এসব কাঠামো কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে গেল।
মানবিক দৃষ্টিকোণ: রাজনৈতিক পরিবর্তনের কেন্দ্রে জনগণ
আইনজীবী শিশির মনিরের মতে, এ বাস্তবায়ন শুধু আইন বা নীতির কাঠামোয় সীমাবদ্ধ নয়; এটি দেশের সাধারণ মানুষের দীর্ঘ প্রতীক্ষার প্রতিচ্ছবি।
দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অবিশ্বাস আর অনিশ্চয়তার মধ্যে সাধারণ নাগরিকেরা যে স্থিতিশীলতা ও স্বচ্ছতা চেয়েছেন, এ সিদ্ধান্ত সেই আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বলে তিনি মনে করেন।
তিনি আরও বলেন,
“রাষ্ট্রের চূড়ান্ত কর্তৃত্ব নাগরিকদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার যে অঙ্গীকার করা হয়েছিল, জুলাই সনদ তার বাস্তব প্রতিচ্ছবি।”
রাষ্ট্রপতির আদেশ ও অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত
এর আগে বৃহস্পতিবার জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারি করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই আদেশ ২০২৫ আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত হয়।
পরবর্তীতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বাস্তবায়নের রোডম্যাপ, গণভোট, সাংবিধানিক পরিবর্তন এবং রাজনৈতিক কাঠামোর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে
জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা করেন—
জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি জানান,
-
গণভোটে চারটি বিষয়ের ওপর একটিমাত্র প্রশ্ন থাকবে।
-
ভোটাররা ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ এর মাধ্যমে তাদের মত প্রকাশ করবেন।
-
ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে।
-
গণভোট আয়োজনে প্রয়োজনীয় আইন শিগগিরই প্রণয়ন করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন,
“এতে সংস্কারের লক্ষ্য কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত হবে না। বরং জনগণের অংশগ্রহণ আরও সুনিশ্চিত হবে।”
জুলাই সনদের চারটি প্রধান লক্ষ্য
যদিও সরকার শেষ মুহূর্তে প্রশ্নের ভাষা প্রকাশ করেনি, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন চারটি মূল বিষয় ঘিরেই গণভোট হতে পারে—
-
রাষ্ট্রব্যবস্থার ভারসাম্য পুনর্গঠন
-
নির্বাচনী সংস্কার
-
বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা
-
নাগরিক অধিকার সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য—গণভোটের মাধ্যমে জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎকে সুসংহত করবে।
গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারে নতুন বার্তা
আইনজীবী শিশির মনিরের বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনেকেই মনে করছেন, এ আদেশ দেশকে দীর্ঘমেয়াদি সাংবিধানিক সংস্কারের পথে এগিয়ে নেবে।
আলোচনায় রয়েছে—
-
নতুন রাজনৈতিক কাঠামোর অন্তর্ভুক্তিমূলকতা
-
ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ
-
দলীয় প্রভাবমুক্ত নিয়মনীতি
-
নাগরিকদের অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র
মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়, এসব পরিবর্তন দেশের তরুণ ভোটার, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, নারী ও সংখ্যালঘুদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করবে।
সামাজিক প্রভাব: আশার সুর ও সতর্কতার বার্তা
শহর-গ্রাম—সর্বত্র জনগণ পরিবর্তনের এ ধারা নিয়ে আশাবাদী।
তাদের প্রত্যাশা—
-
স্থিতিশীল রাষ্ট্র
-
দায়িত্বশীল রাজনীতি
-
দুর্নীতি কমে যাওয়া
-
সবার সমান সুযোগ
-
উন্নয়ন ও স্বাধীনতার পথ সুগম হওয়া
তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন—
সঠিক বাস্তবায়ন ছাড়া এ উদ্যোগ কাঙ্ক্ষিত ফল আনবে না।
স্বচ্ছতা, সময়মতো আইন প্রণয়ন ও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নই হবে এ পরিবর্তনের আসল পরীক্ষা।
উপসংহার
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ বাংলাদেশের গণতন্ত্রচর্চায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
আইনজীবী শিশির মনিরের মন্তব্য, রাষ্ট্রপতির আদেশ, এবং প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা—সব মিলিয়ে একটি বড় কাঠামোগত পরিবর্তন এখন বাস্তবের পথে।
দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি এখন জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে উঠছে।