• হোম > রাজনীতি > নিষিদ্ধ দলের লকডাউন কর্মসূচি ঘিরে সহিংস ছায়া

নিষিদ্ধ দলের লকডাউন কর্মসূচি ঘিরে সহিংস ছায়া

  • বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৪১
  • ৬০

---

ভোরের আলো ফোটেনি তখনও। ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আকাশে হালকা কুয়াশা, অথচ নিচে জ্বলছে আগুন। টায়ার জ্বালানো, রাস্তায় ছড়িয়ে থাকা বাঁশ, আর ঢাল–তলোয়ার হাতে একদল মানুষের স্লোগান— এই চিত্রেই শুরু হয় বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকাল।
কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগের ঘোষিত লকডাউন কর্মসূচি ঘিরে ঢাকা–খুলনা মহাসড়ক ও বরিশাল মহাসড়কের একাধিক স্থানে অবরোধ সৃষ্টি করা হয়।

সুয়াদি, পুখুরিয়া ও পুলিয়া এলাকাগুলোতে ভোর থেকেই দলের নেতাকর্মীরা টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। ঢাল, তলোয়ার, শরকি, রামদা, কাটরা, টেটা— দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত এ কর্মীরা স্লোগান দিতে দিতে মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে।
ফলস্বরূপ, ভাঙ্গা ঢাকা এক্সপ্রেসওয়ে ও ফরিদপুর–বরিশাল মহাসড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

“সড়ক আমাদের, প্রতিবাদও আমাদের”— স্থানীয়ের অভিব্যক্তি

পুখুরিয়া এলাকার এক পরিবহন শ্রমিক বলেন, “রাত থেকে রাস্তায় গাড়ি আটকিয়ে রেখেছে। যাত্রী আছে, কিন্তু গাড়ি ছাড়তে পারছি না। ভয় হচ্ছে, কখন কী হয়।”
আরেক স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম বলেন, “রাজনীতির জন্য যদি রাস্তায় আগুন লাগে, তাহলে ক্ষতি তো আমাদেরই। দোকান খুলতে পারি না, গাড়ি আসে না, দিন মজুর খেতে পায় না।”

এই কথাগুলোই বোঝায়— রাজনীতির উত্তাপ শেষ পর্যন্ত গিয়ে আঘাত করে সাধারণ মানুষের জীবনে, যাদের কাছে সড়ক মানে শুধু কর্মজীবনের পথ, দলীয় মিছিলের রণক্ষেত্র নয়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান

ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাকিবুজ্জামান বলেন,

“তিনটি স্থানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন। আমরা ঘটনাস্থলে রয়েছি, অবরোধ সরানোর চেষ্টা চলছে। আপাতত যান চলাচল বন্ধ।”

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ থামেনি। সড়ক অবরোধের কারণে বাস, ট্রাক ও পণ্যবাহী যান দীর্ঘ লাইনে আটকে থাকে, ফলে সারা অঞ্চলে যানজট ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

প্রেক্ষাপট ও বিশ্লেষণ

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘লকডাউন’ শব্দটি এখন আর জনস্বাস্থ্য নয়, বরং রাজনৈতিক প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
ভাঙ্গার এই ঘটনাটি শুধুমাত্র একটি স্থানীয় অবরোধ নয়— এটি দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক টানাপোড়েনের প্রতিচ্ছবি। যখন নিষিদ্ধ ঘোষিত দলীয় কর্মকাণ্ড আবারও রাস্তায় ফিরে আসে, তখন প্রশ্ন ওঠে— সমাজে রাজনৈতিক সহনশীলতার স্থান কোথায়?

এই ঘটনার মানবিক দিক হলো— যাদের রাজনীতিতে অংশ নেই, তারাই এর সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী।
একজন নারী যাত্রী বললেন, “আমার বাচ্চা স্কুলে যাবে, সকাল থেকে গাড়ি পাচ্ছি না। এ কেমন দেশ, যেখানে সবকিছু রাজনীতির নামে বন্ধ হয়ে যায়?”

সমাজ ও মানবিক প্রভাব

এমন অবরোধ শুধুমাত্র যান চলাচল নয়, মানুষের মানসিক স্থিতিও নষ্ট করে।
শ্রমিকদের আয় থেমে যায়, শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় যেতে পারে না, অসুস্থ রোগীরা হাসপাতালে পৌঁছাতে দেরি করে। রাজনীতির ভাষা যখন সহিংসতায় রূপ নেয়, তখন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ জনগণ— যাদের কণ্ঠ সাধারণত শোনা যায় না।

উপসংহার

ভাঙ্গার এই লকডাউন কেবল একটি দিনের ঘটনা নয়; এটি দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতিফলন, যেখানে দলীয় আনুগত্য কখনও মানবিক মূল্যবোধকে ছাপিয়ে যায়।
রাস্তা দখল হয়, আগুন জ্বলে, কিন্তু শান্তি কোথাও দেখা যায় না।
প্রশ্ন রয়ে যায়— এই দেশ কি কখনও এমন রাজনীতি পাবে, যেখানে প্রতিবাদ মানে অস্ত্র নয়, সংলাপ?


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/6683 ,   Print Date & Time: Wednesday, 26 November 2025, 06:39:56 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh