• হোম > রাজনীতি > ‘শান্ত বাংলায় অশান্তি নয়’— টঙ্গীতে ছাত্রশিবিরের হুঁশিয়ারি

‘শান্ত বাংলায় অশান্তি নয়’— টঙ্গীতে ছাত্রশিবিরের হুঁশিয়ারি

  • বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৩৪
  • ৪৭

---

গাজীপুরের শিল্পাঞ্চল টঙ্গী— ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকার বাতাসে বৃহস্পতিবার ভোরে অস্বাভাবিক এক শব্দ প্রতিধ্বনিত হয়। রাত তখন প্রায় বারোটা ছুঁইছুঁই। গভীর নীরবতা ভেঙে একদল তরুণ রাস্তায় নামে হাতে ব্যানার, স্লোগান, আর প্রতিবাদের আহ্বান নিয়ে।
তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার (টঙ্গী শাখা) শহীদ নাসির গেইট থেকে শুরু হওয়া সেই মিছিল দ্রুতই মহাসড়ক ছুঁয়ে ফেলে আশপাশের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

স্থানীয়দের কেউ কেউ জানায়— “রাতের এই সময় সাধারণত টঙ্গী ঘুমিয়ে থাকে। কিন্তু হঠাৎ এত লোক একসঙ্গে বেরিয়ে এলে ভয় পাওয়া স্বাভাবিক।”
এই ভয়, এই বিস্ময়, আর এই অনিশ্চয়তাই আজকের রাজনৈতিক বাস্তবতার মানবিক চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মিছিলের ধারা ও অংশগ্রহণ

বিক্ষোভে অংশ নেয় বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের তামীরুল মিল্লাত শাখার শতাধিক নেতাকর্মী। তাদের সঙ্গে যোগ দেন স্থানীয় জামায়াতে ইসলামী নেতারাও। উপস্থিত ছিলেন টঙ্গী পূর্ব থানা জামায়াতের আমির নজরুল ইসলাম, ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী নেয়ামত উল্লাহ এবং ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা আফিফ হাসান ইয়াকুবসহ আরও অনেকে।
মিছিলটি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অতিক্রম করে টঙ্গী সরকারি কলেজ গেইট হয়ে দারুল ইসলাম ট্রাস্টের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

বক্তব্যে রাজনৈতিক বার্তা

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ছাত্রশিবির শাখার সেক্রেটারি সাঈদুল ইসলাম ও টঙ্গী পূর্ব থানা জামায়াতের আমির নজরুল ইসলাম।
সাঈদুল ইসলাম বলেন, “আওয়ামী লীগের কোনো নাশকতা সফল হতে পারবে না। লীগ পেলেই সঙ্গে সঙ্গে জেলে দেওয়া হবে। ভারতে বসে স্বাধীন শান্ত বাংলাকে অশান্ত করার সুযোগ দেওয়া হবে না।”

তার এই বক্তব্যে রাজনৈতিক বার্তার পাশাপাশি তরুণদের হতাশা, ক্ষোভ ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার প্রতিফলনও ফুটে ওঠে।

টঙ্গীর সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া

স্থানীয় ব্যবসায়ী সোহেল আহমেদ বলেন, “রাজনীতি হোক, কিন্তু রাতে এমন মিছিল মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি করে। এখানে তো পরিবার নিয়ে থাকা মানুষ।”
একজন অভিভাবক বলেন, “আমাদের ছেলেমেয়েরা যেসব মাদরাসায় পড়ে, তারা যেন রাজনীতির খেলায় না জড়ায়— এইটুকুই চাই।”

এইসব মন্তব্যে ফুটে ওঠে এক গভীর মানবিক সুর— সমাজের মানুষ রাজনীতিকে ভয় পায় না, কিন্তু রাজনৈতিক সহিংসতার পুনরাবৃত্তিকে ভয় পায়।

প্রেক্ষাপট ও বিশ্লেষণ

বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতি একসময় ছিল মতাদর্শ চর্চার ক্ষেত্র; এখন তা প্রায়শই সংঘর্ষ, নিষেধাজ্ঞা আর দলীয় টানাপোড়েনের প্রতীকে পরিণত হয়েছে।
টঙ্গীর মতো এলাকায় যেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গার্মেন্টস কারখানা ও নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠী পাশাপাশি বাস করে, সেখানে প্রতিটি রাজনৈতিক তৎপরতার মানবিক প্রভাব আরও গভীর হয়।
রাতের এই মিছিল তাই শুধু একটি রাজনৈতিক ঘটনা নয়— এটি তরুণ প্রজন্মের উদ্বেগ, আত্মপরিচয়ের সংকট ও সমাজে স্থিতিশীলতার আকাঙ্ক্ষারও প্রতিচ্ছবি।

উপসংহার

টঙ্গীর রাত পেরিয়ে ভোরে সূর্য উঠেছে ঠিকই, কিন্তু মানুষের মনে প্রশ্ন রয়ে গেছে— শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কি আবারও রাজনীতির মাঠে পরিণত হচ্ছে?
বাংলাদেশের তরুণদের রাজনীতি যদি তাদের শিক্ষার জায়গায় ছায়া ফেলে, তবে এর পরিণতি কেবল রাজনৈতিক নয়— সামাজিক ও মানবিক সংকটও বয়ে আনতে পারে।
গভীর রাতের এই মিছিল তাই দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মানবিক দায় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/6681 ,   Print Date & Time: Wednesday, 26 November 2025, 07:18:24 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh