![]()
ব্রিটিশ পাবলিক ব্রডকাস্টার বিবিসির বিরুদ্ধে ১ বিলিয়ন ডলারের মানহানির মামলা করার হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অভিযোগ, একটি তথ্যচিত্রে তার বক্তব্য ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃতভাবে সম্পাদনা করে প্রচার করা হয়েছে, যা তার ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে।
এই অভিযোগ ঘিরে বিবিসিতে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে সংস্থাটির মহাপরিচালক ও বার্তাপ্রধান পদত্যাগ করেছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, ঘটনাটি শুধু বিবিসির নিরপেক্ষতা নয়, তাদের আর্থিক ভবিষ্যত নিয়েও বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
ট্রাম্পের আইনজীবীদের অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বিবিসির ডকুমেন্টারি ‘Trump: A Second Chance?’, যা ২০২৪ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে প্রচারিত হয়। ট্রাম্পের দলের দাবি, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল দাঙ্গার আগে তার দেয়া ভাষণের একটি অংশ “ইচ্ছাকৃতভাবে ও প্রতারণামূলকভাবে” এমনভাবে সম্পাদনা করা হয় যাতে মনে হয়, তিনি তার সমর্থকদের সহিংসতায় উসকে দিচ্ছেন।
ব্যাপক সমালোচনার মুখে বিবিসির চেয়ারম্যান সামির শাহ মার্কিন পার্লামেন্টারি কমিটিকে পাঠানো এক চিঠিতে স্বীকার করেন, সম্পাদনার সেই ভুল দর্শকদের কাছে “সহিংসতার সরাসরি আহ্বান” হিসেবে ভুল বার্তা দিয়েছে। এ জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।
ট্রাম্পের আইনজীবীরা বিবিসির কাছে তিনটি দাবি জানিয়েছেন—
১️⃣ তথ্যচিত্রটি সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করা,
২️⃣ প্রকাশ্যে এবং উপযুক্তভাবে ক্ষমা চাওয়া,
৩️⃣ অন্যথায় কমপক্ষে ১ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণের মামলা ফ্লোরিডায় দায়ের করা হবে।
তাদের দাবি, ফ্লোরিডায় মানহানির মামলা করার সময়সীমা যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য রাজ্যের চেয়ে বেশি হওয়ায় এটি কৌশলগতভাবে সুবিধাজনক।
এই হুমকি বিবিসিকে গভীর সংকটে ফেলেছে। সংস্থাটি গত বছর লাইসেন্স ফি ও বাণিজ্যিক আয়ে প্রায় ৭.৮ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব অর্জন করলেও, ট্রাম্পের দাবিকৃত ক্ষতিপূরণ তাদের আর্থিক স্থিতি নড়বড়ে করে দিতে পারে।
বিবিসির নিরপেক্ষতা নিয়ে যুক্তরাজ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলছে। অনেক ডানপন্থী রাজনীতিক ও বাণিজ্যিক মিডিয়া প্রতিষ্ঠান বাধ্যতামূলক লাইসেন্স ফি বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নতুন বিতর্ক বিবিসির ‘রয়্যাল চার্টার’ নবায়ন প্রক্রিয়ায় (যার মেয়াদ শেষ হবে ২০২৭ সালে) বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
উল্লেখ্য, এটি কোনো গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের প্রথম আইনি হুমকি নয়। গত বছর তিনি এবিসি ও সিবিএস নিউজের বিরুদ্ধে মামলা করে বিশাল অঙ্কের ক্ষতিপূরণ আদায় করেছিলেন। ট্রাম্প সাধারণত বড় করপোরেশনগুলোর ওপর দ্রুত সমঝোতার চাপ সৃষ্টি করতে এই কৌশল ব্যবহার করেন। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, লাইসেন্স ফি-নির্ভর বিবিসির ক্ষেত্রে এই কৌশল কার্যকর করা ট্রাম্পের জন্য কঠিন হবে।