
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে শক্ত ও ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিতে হবে। তিনি দলটির সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডকে জাতির গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য ‘অস্তিত্বের হুমকি’ বলে অভিহিত করেন।
শনিবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ট্রেস কনসাল্টিং আয়োজিত ‘রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে জনগণের আকাঙ্ক্ষা নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিফলিত করতে পারে’ শীর্ষক সংলাপে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
শফিকুল আলম বলেন, “শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিষয়ে এখন সবার একটি স্পষ্ট অবস্থান নেওয়া জরুরি। তিনি এখনও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের ‘সন্ত্রাসী’ বলে আখ্যায়িত করছেন—যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।”
তিনি আরও বলেন, “শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্য আন্তর্জাতিক মহলেও সমালোচিত হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের জনগণকে ‘সন্ত্রাসী’ বলেছেন, যা দেশের রাজনীতির জন্য সরাসরি অস্তিত্বের হুমকি। কাউকে ‘সন্ত্রাসী’ বলা মানে তাকে হত্যাযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করা। তাহলে কি তিনি ১৮ কোটি মানুষকেই শত্রু ঘোষণা করে আবার ক্ষমতায় ফিরতে চান?”
এ সময় তিনি সাংবাদিক এনায়েতুল্লাহ খানের লেখা উদ্ধৃত করে বলেন, “১৯৭৪ সালে শেখ মুজিব ৬ কোটি ৫০ লাখ মানুষকে ‘কোলাবরেটর’ বলেছিলেন, আর এখন তার মেয়ে ১৮ কোটি মানুষকে ‘সন্ত্রাসী’ বলছেন—এটা কল্পনাতীত।”
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে শফিকুল আলম বলেন, “সরকার ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ নিয়ে কারও দ্বিধা থাকা উচিত নয়।”
তিনি আরও বলেন, “শাসনব্যবস্থা ও জুলাই সনদ নিয়ে বিতর্ক একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ। সারা বিশ্বেই সংবিধান সংশ্লিষ্ট আলোচনা ও মতপার্থক্য দীর্ঘ সময় ধরে চলে, কোনো সমাধান রাতারাতি চাপিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “যদি রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে, তাহলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনিশ্চয়তা দূর করতে অন্তর্বর্তী সরকার ম্যান্ডেট অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে।”
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে শফিকুল আলম বলেন, “আমরা এখন একটি বিভক্ত রাজনৈতিক বাস্তবতা দেখছি। তাই ডান, বাম ও মধ্যপন্থী সব পক্ষের অংশগ্রহণে একটি গণতান্ত্রিক সমাধান এখন সময়ের দাবি।”
প্যানেল আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ট্রেস-এর সিইও ফুয়াদ এম খালিদ হোসেন, বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এবং ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম অংশ নেন।
আলোচনার সঞ্চালনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. সাহাব এনাম খান।