• হোম > দেশজুড়ে > কাঞ্চনজঙ্ঘার ঝলক দেখল লালমনিরহাটবাসী

কাঞ্চনজঙ্ঘার ঝলক দেখল লালমনিরহাটবাসী

  • শুক্রবার, ৭ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৩৭
  • ৫৯

---

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারেজ থেকে মেঘমুক্ত নীল আকাশে দেখা মিলেছে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। সকালবেলার নির্মল আলো আর শীতের আগমনী হাওয়ায় ভেসে এসেছে এক স্বপ্নিল দৃশ্য, যা মুহূর্তেই ছুঁয়ে গেছে স্থানীয়দের হৃদয়।

গত দুই দিন ধরে (বুধবার ও বৃহস্পতিবার) তিস্তা ব্যারেজ এলাকা এবং সানিয়াজান নদীর তীর থেকে স্পষ্ট দেখা গেছে কাঞ্চনজঙ্ঘার সাদা রূপালি চূড়া। টানা কয়েকদিনের মেঘলা আবহাওয়ার পর আকাশ হঠাৎ পরিষ্কার হয়ে যাওয়ায় প্রকৃতিপ্রেমী ও দর্শনার্থীরা সকাল থেকেই সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন।


ভোরের আলোয় রূপালি পাহাড়

ভোরের সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে কাঞ্চনজঙ্ঘার বরফে মোড়া চূড়ায় সূর্যের আলো পড়তেই যেন সোনালি আভায় ঝলমল করে ওঠে পুরো দিগন্ত। তিস্তা ব্যারেজের তীরে দাঁড়িয়ে মনে হয়, যেন বাংলাদেশের সীমান্তে দাঁড়িয়ে এক বিদেশি পর্বতের সৌন্দর্য দেখছে মানুষ।

স্থানীয় দর্শনার্থী মামুন হোসেন বলেন,

“১০ কিলোমিটার দূর থেকে এসে সকালে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পেয়েছি। মনে হলো যেন বরফে মোড়া কোনো স্বপ্নের রাজ্য। এমন দৃশ্য দেখতে পেরে সত্যিই হৃদয় ভরে গেছে।”


ভূগোলের ভাষায় কাঞ্চনজঙ্ঘা

ভূগোলবিদদের তথ্যমতে, কাঞ্চনজঙ্ঘা নেপাল ও ভারতের সিকিম রাজ্যের সীমান্তে অবস্থিত। এর উচ্চতা ৮ হাজার ৫৮৬ মিটার (২৮,১৬৯ ফুট), যা বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বত, এভারেস্ট ও কে-টু’র পরেই এর অবস্থান। স্বচ্ছ আবহাওয়ায় নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সময়টিতেই মূলত উত্তরবঙ্গের কয়েকটি স্থান থেকে এই পর্বতের ঝলক দেখা যায়।


পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা

প্রকৃতিপ্রেমী ও পরিবেশকর্মী আরএম রিমন বলেন,

“তিস্তা ব্যারেজ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য শীতের অল্প সময়ের জন্য হলেও, এ অঞ্চলের সৌন্দর্যকে নতুনভাবে উপস্থাপন করেছে। চাইলে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন মিলে তিস্তা ব্যারেজকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।”

তার মতে, কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শনের জন্য শীত মৌসুমে তিস্তা ব্যারেজে দর্শনার্থীদের নিরাপদ অবস্থান, তথ্যকেন্দ্র, এবং পর্যটন অবকাঠামো উন্নয়ন করলে উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।


মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তিস্তা ব্যারেজ

এই দৃশ্য শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নয়, মানুষের অনুভূতিরও প্রতিচ্ছবি। সীমান্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষ প্রতিদিনের জীবনের ব্যস্ততার মাঝে যখন হঠাৎ দূর আকাশে বরফে মোড়া পাহাড় দেখে, তখন তারা এক অজানা আনন্দে ভরে ওঠে।
প্রকৃতির এই উপহার মানুষকে মনে করিয়ে দেয়— সৌন্দর্য দেখতে কখনো পাসপোর্ট লাগে না, লাগে শুধু চোখ আর ভালোবাসা।


সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাঞ্চনজঙ্ঘা জ্বর

ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামসহ সামাজিক মাধ্যমে কাঞ্চনজঙ্ঘার ছবি ও ভিডিও এখন ভাইরাল। #Kangchenjunga, #TistaBarragescenes— এমন হ্যাশট্যাগে ভরে গেছে অনলাইন দুনিয়া। স্থানীয় যুবকেরা লাইভে গিয়ে মুহূর্তগুলো শেয়ার করছেন, অনেকেই নিজেদের ফটোগ্রাফি পেজে এ দৃশ্য তুলে ধরছেন।


শীতের আগমনী বার্তা

তিস্তা ব্যারেজের এই দৃশ্য যেন উত্তরবঙ্গের শীত আগমনের এক নীরব ঘোষণা। ভোরবেলা শিশিরভেজা ঘাস, দূর থেকে দেখা বরফে ঢাকা পাহাড় আর পাখিদের কিচিরমিচিরে ভরে ওঠে প্রকৃতি। স্থানীয়রা বলছেন, “এ যেন এক জীবন্ত পোস্টকার্ড, যেখানে প্রকৃতি নিজেই আঁকছে নিজের ছবি।”

সংক্ষেপে প্রতিবেদন:

  • স্থান: লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা, তিস্তা ব্যারেজ

  • দৃশ্য: কাঞ্চনজঙ্ঘা (৮,৫৮৬ মিটার), বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বত

  • সময়: নভেম্বরের শীতের শুরুতে সকালবেলা দৃশ্যমান

  • প্রতিক্রিয়া: স্থানীয়দের আনন্দ ও পর্যটনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি

 


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/6476 ,   Print Date & Time: Wednesday, 26 November 2025, 04:10:39 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh