• হোম > বিদেশ > হাসিনার কণ্ঠে দিল্লির বার্তা

হাসিনার কণ্ঠে দিল্লির বার্তা

  • বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:২৮
  • ৪৬

---

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের জটিল কূটনৈতিক প্রেক্ষাপটে আবারও আলোচনায় উঠে এসেছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দিল্লিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বলদাস ঘোষালের মতে, “ভারতের পক্ষে সরাসরি যা বলা সম্ভব নয়, তার অনেক কথাই এখন শেখ হাসিনার মুখ দিয়ে বলা হচ্ছে।”

দিল্লির নামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) সাবেক অধ্যাপক ও বিশ্লেষক বলদাস ঘোষাল বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন,

“ভারত এখন শেখ হাসিনাকে আরও বেশি করে মুখ খুলতে দিচ্ছে, আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় কথা বলতেও উৎসাহ দিচ্ছে। এতে করে দিল্লি কিছুটা ‘আক্রমণাত্মক’ অবস্থান নিচ্ছে।”


ভারতীয় কৌশলের অন্তরালে কী আছে?

অধ্যাপক ঘোষালের মতে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাকে দিল্লি ভারত-বিরোধী ইঙ্গিত হিসেবেই দেখছে।

“পাকিস্তানের সামরিক কর্মকর্তাদের ঘন ঘন সফর, কিংবা ‘সেভেন সিস্টার্স’ নিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য—এসব দিল্লিকে অস্বস্তিতে ফেলেছে,” বলেন তিনি।

এমন পরিস্থিতিতে ভারত শেখ হাসিনার ভাষণ ও সাক্ষাৎকারগুলোকে ‘কূটনৈতিক বার্তা পাঠানোর মাধ্যম’ হিসেবে ব্যবহার করছে বলে ধারণা করছেন তিনি।

“প্রথমত, এতে বোঝা যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়। আর দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও বলা হচ্ছে—দেখো, শেখ হাসিনা এখনো প্রাসঙ্গিক এবং ভারত তাঁর পাশে আছে,”—যোগ করেন ঘোষাল।


আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারতের ‘পরোক্ষ উপস্থিতি’

গত কয়েক মাসে শেখ হাসিনাকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে দেখা যাচ্ছে একের পর এক।
দিল্লির কূটনৈতিক মহলে অনেকে মনে করছেন, এসব সাক্ষাৎকারের পেছনে ভারতের “নরম কূটনীতি” কাজ করছে—যেখানে প্রভাব খাটানো হয়, কিন্তু দায়ভার নেওয়া হয় না।

একজন ভারতীয় সাংবাদিক মন্তব্য করেন, “হাসিনার প্রতিটি বক্তব্য ভারতের ভাবমূর্তি ও অবস্থানকে পরোক্ষভাবে শক্তিশালী করছে, বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ায় চীন-পাকিস্তান জোটের প্রভাব মোকাবিলায়।”


প্রিয়জিৎ দেবসরকারের বিশ্লেষণ: ‘নিরাপত্তার লকডাউন’

লন্ডনভিত্তিক লেখক ও ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রিয়জিৎ দেবসরকার শেখ হাসিনার অবস্থানকে তুলনা করেছেন কোভিড–১৯ লকডাউনের সঙ্গে।

“যেভাবে মহামারির সময় কেউ ঘর থেকে বের হতে পারেনি, শেখ হাসিনাকেও ভারতে পৌঁছানোর পর কঠোর গোপনীয়তা ও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছিল,” বলেন তিনি।

তাঁর ভাষায়, “কিন্তু লকডাউন তো অনন্তকাল চলতে পারে না। এখন ধীরে ধীরে সীমাবদ্ধতা শিথিল হচ্ছে, ঠিক যেভাবে মহামারির পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছিল।”


‘নীরবতা থেকে লাইভ উপস্থিতি’—এক ধাপ এক ধাপ করে উন্মুক্ত হচ্ছেন শেখ হাসিনা

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পৌঁছানোর পর বেশ কিছু সপ্তাহ প্রকাশ্যে আসেননি। পরে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে রেকর্ডেড ভাষণ দেন, এরপর লন্ডনে আওয়ামী লীগের সভায় লাইভ যুক্ত হন।

ক্রমে তিনি ইউটিউব, সিগন্যাল, ও মেসেঞ্জারের মাধ্যমে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন—যা ঢাকায় রাজনৈতিক অস্বস্তির জন্ম দেয়।

অধ্যাপক ঘোষাল বলেন,

“দিল্লি এই ‘লাগাম শিথিল’ প্রক্রিয়াটিকে সচেতনভাবে পরিচালনা করছে—শেখ হাসিনাকে সীমিতভাবে কথা বলার সুযোগ দিয়ে ভারত একই সঙ্গে নিজের বার্তা ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়া দুটোই পর্যবেক্ষণ করছে।”


কূটনৈতিক বার্তার ভেতরে মানবিক বাস্তবতা

যদিও এই প্রক্রিয়াকে অনেকে রাজনৈতিক কৌশল বলে মনে করছেন, কিন্তু এর মানবিক দিকও স্পষ্ট।
একজন নারী নেতা, দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থেকে বর্তমানে কঠোর নজরদারি ও নিঃসঙ্গতার মধ্যে অবস্থান করছেন—এটিও একটি মানবিক বাস্তবতা। তাঁর কণ্ঠ এখন শুধু রাজনীতি নয়, আন্তর্জাতিক রাজনীতির হাতিয়ারও হয়ে উঠেছে।


উপসংহার

বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্ক বরাবরই সূক্ষ্ম ভারসাম্যের ওপর দাঁড়িয়ে। শেখ হাসিনার প্রতিটি বক্তব্য এখন শুধু ঢাকার রাজনীতিতে নয়, দিল্লির কৌশলগত অঙ্কেও গুরুত্বপূর্ণ।
কেউ বলছেন, তিনি এখন “ভারতের বার্তা বাহক”, আবার কেউ দেখছেন তাঁকে “রাজনৈতিক মঞ্চের পরীক্ষামূলক চরিত্র” হিসেবে।

তবে বাস্তবতা হলো—এই গল্প শুধু রাজনীতি নয়, বরং ক্ষমতা, কৌশল এবং মানবিক নিয়ন্ত্রণের এক আধুনিক অধ্যায়।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/6446 ,   Print Date & Time: Wednesday, 26 November 2025, 06:03:51 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh