![]()
নিউইয়র্ক সিটির ঐতিহাসিক দাপ্তরিক বাসভবন গ্রেসি ম্যানশন দীর্ঘদিন পর নতুন প্রাণ ফিরে পাচ্ছে—এবার সেখানে উঠছেন নতুন ফার্স্ট লেডি রামা দুয়াজি। তিনি শুধু একজন শিল্পী নন, বরং মানবতা, সংস্কৃতি এবং আত্মপরিচয়ের গভীর বার্তা বহনকারী এক কণ্ঠস্বর।
রামা দুয়াজি হচ্ছেন সিরীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক, জন্ম টেক্সাসের হিউস্টনে। অল্প বয়সেই তার পরিবার মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইয়ে চলে যায়, যেখানে কেটেছে তার শৈশব ও কৈশোর। রামা ছোটবেলায় প্রায়ই নিজের সিরীয় পরিচয় আড়াল করতেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন,
“আমি একসময় শুধু আমেরিকান হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতাম। কিন্তু বড় হতে হতে বুঝেছি—আমার শিকড়, আমার সংস্কৃতি, আমার শিল্প—সবই আমার পরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ।”
ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ দ্য আর্টস–এ পড়াশোনা করার সময়ই রামার শিল্পচেতনার জাগরণ ঘটে। তার চিত্রকর্মে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক বাস্তবতা, অভিবাসী জীবনের সংগ্রাম ও মানবতার গল্প উঠে আসে অসাধারণ সংবেদনশীলতায়।
২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে এসে রামা স্থায়ীভাবে নিউইয়র্কে বসবাস শুরু করেন। সেখানেই পরিচয় হয় তরুণ রাজনীতিক জোহরান মামদানি–র সঙ্গে, যিনি শহরের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম ও সর্বকনিষ্ঠ মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এ বছরের এপ্রিলে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
রামা দুয়াজি কেবল একজন ফার্স্ট লেডি নন, তিনি একজন মানবিক শিল্পী—যিনি তার শিল্পের মাধ্যমে বিশ্বকে প্রশ্ন করেন, চেতনায় আলো জ্বালান। তার অন্যতম আলোচিত কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিনি কৃষকদের ওপর ইসরায়েলের পরিবেশগত যুদ্ধ নিয়ে একটি আর্ট সিরিজ। সেই কাজগুলোতে তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে প্রকৃতির ওপর যুদ্ধ আসলে মানুষের অস্তিত্বের ওপরই আঘাত।
এছাড়া, আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে তার অবস্থানও স্পষ্ট ও নির্ভীক। তিনি বিশ্বাস করেন,
“শিল্পের দায়িত্ব শুধু সৌন্দর্য প্রকাশ নয়—অন্যায়ের বিরুদ্ধে কণ্ঠ তোলা।”
রামা দুয়াজি এখন শুধুই একজন শিল্পী নন, তিনি নিউইয়র্কের নতুন সাংস্কৃতিক প্রতীক, যিনি মানবতা, বৈচিত্র্য ও শান্তির পক্ষে দাঁড়িয়েছেন শিল্পের তুলি হাতে।
মানবতার বার্তা:
রামা দুয়াজির জীবনের গল্প এক প্রতীক—নিজের শিকড় খুঁজে পাওয়া, সংস্কৃতিকে ভালোবাসা, এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে শিল্পের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানোর। নিউইয়র্কের এই নতুন ফার্স্ট লেডি যেন এক আলোকবর্তিকা, যিনি মনে করিয়ে দেন—“পরিচয় কখনোই লজ্জার নয়, সেটাই আমাদের শক্তি।”