![]()
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে উদ্বেগজনক তথ্য— সরকারি জলবায়ু তহবিলের প্রকল্পগুলোর অর্ধেকেরও বেশি অর্থ অনিয়ম ও দুর্নীতিতে লোপাট হয়েছে, যার সঙ্গে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও ক্ষমতার অপব্যবহার সরাসরি জড়িত।
বুধবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে টিআইবি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন,
“জলবায়ু তহবিলে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ হয়েছে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে। এ খাতটি এখন রাজনৈতিক যোগসাজশে দুর্নীতির বিশেষায়িত ক্ষেত্র হিসেবে পরিণত হয়েছে।”
তিনি জানান, প্রকল্প বাস্তবায়নে বিসিসিটি বোর্ডপ্রধান, সদস্য এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী মহল ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থে প্রকল্প অনুমোদন ও অর্থ বণ্টন করেছেন। ঠিকাদার ও বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তাদের দুর্নীতিও এই প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করেছে।
???? ৫৪ শতাংশ তহবিল লোপাট
টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড (বিসিসিটি) থেকে ৪৫৮.৫ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ৫৪ শতাংশ অর্থ (২৪৮.৪ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ২,১১০ কোটি টাকা) দুর্নীতির মাধ্যমে অপচয় বা আত্মসাৎ হয়েছে।
এই সময়ের মধ্যে অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই “রাজনৈতিক বিবেচনা ও স্বজনপ্রীতি”র ভিত্তিতে অনুমোদন পেয়েছে। অথচ অনিয়ম ঠেকাতে ট্রাস্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেননি বলে টিআইবির দাবি।
???? মূল্যায়নহীন প্রকল্পের দীর্ঘ তালিকা
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ৫৮৫টি সমাপ্ত প্রকল্পের মধ্যে ৪৯৫টির (৮৪.৬%) কোনো প্রভাব মূল্যায়নই করা হয়নি। মাত্র ১৫.৪ শতাংশ প্রকল্প আংশিকভাবে মূল্যায়ন সম্পন্ন হয়েছে। এতে বোঝা যায়, প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের পর কার্যকারিতা যাচাইয়ের সংস্কৃতি এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
???? আন্তর্জাতিক সহায়তাও নগণ্য
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, উন্নত দেশগুলো বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু সহায়তার অঙ্গীকার করলেও, এখন পর্যন্ত তার খুবই সামান্য অংশ বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো পেয়েছে। ফলে বাংলাদেশের জাতীয় বাজেট থেকেই জনগণের অর্থে জলবায়ু তহবিল গঠন করতে হয়েছে—যা দুর্নীতিমুক্ত ব্যবস্থাপনার অভাবে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।
তিনি আরও বলেন,
“২০০৩ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত জলবায়ু প্রকল্পে ১০-১২ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ প্রয়োজন ছিল। কিন্তু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উৎস থেকে পাওয়া গেছে মাত্র ১.২ বিলিয়ন ডলার। অথচ এই সামান্য অর্থও স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যয় করা হয়নি।”
???? বছরে প্রয়োজন ১২,৫০০ মিলিয়ন ডলার, বরাদ্দ মাত্র ৮৬ মিলিয়ন
প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় প্রতি বছর বাংলাদেশের প্রয়োজন ১২,৫০০ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু ২০১৫ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে গড়ে বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ৮৬.২ মিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ প্রয়োজনের ০.৭ শতাংশেরও কম।
???? টিআইবির সুপারিশ
টিআইবি বলেছে, জলবায়ু অর্থায়নের সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে—
-
রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও স্বাধীন তদারকি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে,
-
বিসিসিটি ট্রাস্ট বোর্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়াতে হবে,
-
প্রকল্প মূল্যায়ন বাধ্যতামূলক করতে হবে,
-
দুর্নীতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।