রাজধানী ঢাকার রাস্তায় এখন দেখা মেলে বিশ্বের নামজাদা গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলা, রোলস-রয়েস, ফেরারি, বেন্টলি ও পোরশের বিলাসবহুল গাড়ির।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন পর্যন্ত ছয়টি টেসলা গাড়ির নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, রোলস-রয়েস, ফেরারি, মার্সিডিজ, বিএমডব্লিউ ও রেঞ্জ রোভার—এসব গাড়ির ঝলক এখন নিয়মিত দৃশ্য রাজধানীর গুলশান, বনানী, বারিধারা, ধানমন্ডি ও বসুন্ধরায়।
বিলাসের শহর, আভিজাত্যের প্রতীক
ঢাকার অভিজাত এলাকায় সন্ধ্যা নামলেই শুরু হয় বিলাসের প্রদর্শনী।
যেখানে মধ্যবিত্তরা জ্বালানির দাম ও গণপরিবহনের সংকটে নাজেহাল, সেখানে এক শ্রেণির ধনী ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী মানুষ ছুটছেন কোটি টাকার গাড়িতে।
এই গাড়িগুলোর দাম ১ কোটি থেকে ১২ কোটি টাকা পর্যন্ত, যা দেশের আয় বৈষম্যের বাস্তবতাকে আরও স্পষ্ট করে তুলছে।
বিলাসবহুল গাড়ির সংখ্যা আড়াই হাজার ছাড়িয়েছে
গত এক দশকে দেশে আড়াই হাজারের বেশি বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে—
-
রোলস-রয়েস ১২টি
-
ফেরারি ৩টি
-
বেন্টলি ৩৫টি
-
পোরশে ৫৭টি
-
টেসলা ৮টি
-
রেঞ্জ রোভার ৩০৫টি
-
মার্সিডিজ বেঞ্জ ১,২৪৮টি
-
বিএমডব্লিউ ৮৯৮টি
এই গাড়িগুলোর মালিকরা মূলত দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী, পোশাক রপ্তানিকারক, বহুজাতিক কোম্পানির কর্মকর্তা, চিকিৎসক ও আইনজীবী।
বিলাসের ভিড়ে অর্থনৈতিক বাস্তবতা
২০২০ সালের পর করোনা মহামারি ও বৈশ্বিক মন্দার সময়েও এই গাড়ির আমদানি থামেনি।
যেখানে সাধারণ মানুষ নিত্যপণ্যের দামে বিপর্যস্ত, সেখানে ধনীদের বিলাসের জগতে প্রবাহিত হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
অটো মিউজিয়ামের স্বত্বাধিকারী হাবিব উল্লাহ বলেন,
“যাঁরা এসব গাড়ি ব্যবহার করেন, তাঁরা বড় ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারক পরিবার থেকে আসেন। বেশির ভাগেরই এটি দ্বিতীয় বা তৃতীয় গাড়ি।”
শুল্ক আর দাম—গাড়ির চেয়ে বেশি বিলাস
২০০০ সিসির বেশি ইঞ্জিন ক্ষমতাসম্পন্ন গাড়ির আমদানিতে শুল্কভার প্রায় ৪৪২ শতাংশ, আর ৪০০০ সিসির বেশি হলে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮২৫ শতাংশ।
উদাহরণস্বরূপ, ৩০০০ সিসির একটি গাড়ির আমদানিমূল্য যদি হয় ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা, তাহলে শুল্ক ও অন্যান্য খরচ শেষে সেটির দাম দাঁড়ায় ৬ থেকে ৭ কোটি টাকা।
এভাবেই বিলাসবহুল গাড়িগুলোর মূল্য হয় অগণন মানুষের স্বপ্নের চেয়েও অনেক বেশি।
বৈদ্যুতিক যুগের সূচনা
দেশে এখন ক্রমেই বাড়ছে বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা।
র্যানকন মোটরসের বিপণন প্রধান চৌধুরী মোহাম্মদ নাবিল হাসান জানান,
“বর্তমানে বিলাসবহুল গাড়ির ৫০ শতাংশই বৈদ্যুতিক। আমরা সারাদেশে ২১টি চার্জিং স্টেশন স্থাপন করেছি।”
বিএমডব্লিউ, আউডি ও টেসলার নতুন বৈদ্যুতিক মডেলগুলো মধ্যবিত্ত সমাজে কৌতূহল তৈরি করছে, যদিও সেগুলো এখনো নাগালের বাইরে।
ধনীদের প্রিয় ব্র্যান্ড
-
মার্সিডিজ বেঞ্জ: সবচেয়ে জনপ্রিয়, নিবন্ধন ১,০৫৭টি (গত ৫ বছরে)
-
বিএমডব্লিউ: নিবন্ধন ৪৭০টি
-
আউডি: নিবন্ধন ২৪২টি
-
বেন্টলি ও পোরশে: একাধিক উচ্চমানের মডেল
এক্সিকিউটিভ মোটরসের বিক্রয় বিভাগের কর্মকর্তা আবদুর রহমান বলেন,
“একই শক্তির বৈদ্যুতিক গাড়ির দাম পেট্রোলচালিত গাড়ির পাঁচভাগের একভাগ জ্বালানি খরচে চলে।”
যেখানে বৈষম্যই বাস্তবতা
বিলাসবহুল গাড়ির মডেল বদলাচ্ছে, কিন্তু সমাজে বৈষম্যের চিত্র অপরিবর্তিত।
একদিকে দেশের ধনী শ্রেণি কোটি টাকার গাড়িতে চড়ে ঘোরেন, অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষ।
ঢাকার আভিজাত্যের ঝলকে হারিয়ে যাচ্ছে মানবিক বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি।