বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় এখন বলটি রাজনৈতিক দলগুলোর কোর্টে ছুঁড়ে দিয়েছে। সরকার বলছে— এ দেশের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্র, সংবিধান সংস্কার ও নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার পথ কোনদিকে যাবে, তা ঠিক করতে হলে এখন রাজনৈতিক দলগুলোকেই দায়িত্ব নিতে হবে।
সোমবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। পরে ‘করবী হলে’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন,
“রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে মতভেদ দেখা দিয়েছে। তাই আমরা মনে করেছি, এখন সময় এসেছে তারা নিজেরা বসে আলোচনা করুক এবং ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা দিক। সরকার সেই নির্দেশনাকেই গুরুত্ব দেবে।”
তিনি আরও বলেন,
“আমরা কোনো আল্টিমেটাম দিইনি। আমরা আহ্বান জানিয়েছি, অপেক্ষা করবো। তারপরও যদি দলগুলো ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, তাহলে সরকার সরকারের মতো সিদ্ধান্ত নেবে।”
এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হলো যে, জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়নে আর কোনো বিলম্ব করা হবে না।
‘ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলোকে সময় দিচ্ছি’
ড. আসিফ নজরুল বলেন,
“ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো গত ১৫ বছরে বহু প্রতিকূল সময়ে একসঙ্গে আন্দোলন করেছে, নির্যাতন সহ্য করেছে, সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, তারা আবারও আলোচনায় বসে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দিতে পারবে। সেটিই দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে।”
সরকারের প্রত্যাশা, এক সপ্তাহের মধ্যেই দলগুলো আলোচনায় বসে একটি স্পষ্ট ও ঐক্যবদ্ধ প্রস্তাবনা দেবে, যা জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পথ সুগম করবে।
সরকারের অবস্থান: সময় নষ্টের সুযোগ নেই
আইন উপদেষ্টা জানান, সরকার বহু পর্যায়ের আলোচনা করেছে এবং এখন আর নতুন করে কোনো উদ্যোগ নেবে না।
“বর্তমান পরিস্থিতিতে কালক্ষেপণের কোনো সুযোগ নেই,” — বলেন তিনি।
তিনি আরও জানান, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে সরকার অটল অবস্থানে রয়েছে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আদিলুর রহমান খান এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
তারা একমত হন, এখন দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকেই জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থেকে গণতান্ত্রিক ঐকমত্য তৈরি করতে হবে।
মানবিক বিশ্লেষণ:
জুলাই সনদ কেবল একটি আইনগত প্রস্তাব নয়— এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্থিতি, নাগরিক স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতিফলন।
এখন দলগুলোর সামনে দুটি পথ— হয় ঐক্যবদ্ধ হয়ে নতুন সূচনার দরজা খুলে দেওয়া, নয়তো নিজেদের বিভাজনের কারণে আরেকটি রাজনৈতিক অচলাবস্থার দিকে যাওয়া।