বাংলাদেশে ইন্টারনেট এখন শুধু বিলাসিতা নয়, জীবনের প্রতিদিনের অপরিহার্য অংশ। শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা, এমনকি গ্রামীণ কৃষক পর্যন্ত আজ নির্ভর করছেন অনলাইন সংযোগের ওপর। কিন্তু নতুন টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং নীতি-২০২৫ বাস্তবায়িত হলে, এই মৌলিক সেবার দামই হয়ে উঠতে পারে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।
সোমবার (২ নভেম্বর) রাজধানীর মহাখালীতে রাওয়া ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) জানায়, নতুন খসড়া গাইডলাইন বাস্তবায়িত হলে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম বাড়বে গড়ে ২০ শতাংশ, যা গ্রামীণ এলাকাগুলোর জন্য বিশেষভাবে ক্ষতিকর হবে।
আইএসপিএবির সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন,
“এই গাইডলাইন বাস্তবায়িত হলে ঢাকায় দাম বাড়বে ১১ শতাংশ, কিন্তু গ্রামে বাড়বে প্রায় ১৮ দশমিক ৪০ শতাংশ। এতে শহর-গ্রামের ডিজিটাল বৈষম্য আরও বাড়বে।”
তিনি জানান, প্রস্তাবিত নীতিমালায় ৫ শতাংশ রেভিনিউ শেয়ার এবং ১ শতাংশ সামাজিক সুরক্ষা তহবিল জমা দিতে বাধ্য করা হবে। পাশাপাশি টেলিকম কোম্পানিগুলোর মতো আইএসপিদেরও ফ্রি ওয়াইফাই ও হটস্পট সুবিধা দিতে হবে, যা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য অসম্ভব প্রায়।
আমিনুল হাকিম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“আমরা সরকারের কাছে সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছিলাম, কিন্তু তা গুরুত্ব পায়নি। নতুন নীতিমালায় লাইসেন্স নবায়নের অ্যাকুইজিশন ফি আড়াই গুণ এবং বার্ষিক ফি সাড়ে তিন গুণ বাড়ানো হয়েছে। যেখানে স্টারলিংকের ফি ১২ লাখ টাকা, সেখানে দেশীয় আইএসপিদের দিতে হবে ২৫ লাখ টাকা। এটা অন্যায্য।”
তিনি অভিযোগ করেন, সরকার বিদেশি প্রতিষ্ঠান স্টারলিংককে (SpaceX) গুরুত্ব দিচ্ছে, অথচ দীর্ঘদিন ধরে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা স্থানীয় উদ্যোক্তাদের স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না।
“আমরা মুনাফা নয়, মানুষের সংযোগ নিশ্চিত করার লড়াই করি। অথচ নীতিমালায় আমাদের মতো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ওপর রেভিনিউ আরোপ করা মানে আমাদের বাঁচার পথ বন্ধ করে দেওয়া,” — বলেন আইএসপিএবির সভাপতি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ভূঁইয়া, সহসভাপতি নেয়ামুল হক খান, মাহবুব আলম, ফুয়াদ মুহাম্মদ শরফুদ্দিন এবং কোষাধ্যক্ষ মঈন উদ্দিন আহমেদ।
তারা একমত হয়ে বলেন, নীতিমালায় যদি সংশোধন আনা না হয়, তবে গ্রামীণ ইন্টারনেট সেবাদাতাদের টিকে থাকা কঠিন হবে এবং এর প্রভাব পড়বে শিক্ষা, ব্যবসা ও সামাজিক সংযোগে।
হিউম্যান স্পর্শে বার্তা:
একজন গ্রামীণ শিক্ষক অনলাইনে ক্লাস নিতে পারেন না, একজন শিক্ষার্থী ডিজিটাল পাঠ্যবই ডাউনলোড করতে পারেন না, কিংবা একজন কৃষক ফসলের বাজারদর জানতে পারেন না — শুধুমাত্র ইন্টারনেট ব্যয় বেড়ে যাওয়ায়।
এই বাস্তবতাই যেন নতুন নীতিমালায় আরেকবার ফিরে আসছে।