আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ভুয়া সংবাদ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার ঠেকাতে সচেতনতার ওপর জোর দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন।
তিনি বলেন,
“আমাদের একটা অভ্যাস হয়ে গেছে—নেতিবাচক কোনো খবর দেখলেই যাচাই না করে শেয়ার করে দেওয়া। দয়া করে সত্য–মিথ্যা যাচাই না করে কিছু শেয়ার করবেন না। এই বার্তাটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন।”
আজ সোমবার রাজধানীর ভাটারায় আনসার গার্ড ব্যাটালিয়ন (এজিবি) প্রাঙ্গণে আনসার ভিডিপির চতুর্থ ধাপের মৌলিক প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন সিইসি।
নির্বাচনকালে ভুয়া তথ্য রোধে সতর্কতা ও দায়িত্ববোধের আহ্বান
সিইসি নাসির উদ্দীন বলেন,
“নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ভুয়া তথ্য ও গুজব ছড়ানোর প্রবণতাও তত বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব—প্রথমে যাচাই, তারপর প্রচার।”
তিনি সবাইকে আহ্বান জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো সংবাদ দেখামাত্রই তা যাচাই-বাছাই না করে শেয়ার না করতে।
তার মতে, ভিত্তিহীন তথ্য বা বিভ্রান্তিকর পোস্ট কেবল সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করে না, বরং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।
নির্বাচনে আনসার–ভিডিপির ভূমিকা: মূল শক্তি হিসেবে দায়িত্বে
সিইসি বলেন,
“জাতীয় নির্বাচনে আনসার–ভিডিপি সদস্যরাই মাঠের মূল শক্তি। এদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, এবং এদের হাতেই বাস্তবে নির্বাচন পরিচালনার মূল দায়িত্ব।”
তিনি আরও যোগ করেন, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা, ভোটারদের সারিবদ্ধভাবে ভোটদান, জাল ভোট প্রতিরোধ ও প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের সহায়তা—সব ক্ষেত্রেই আনসার বাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মহাপরিচালকের বার্তা: নির্বাচনী প্রস্তুতিতে সর্বোচ্চ তৎপরতা
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ।
তিনি বলেন,
“নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আনসার বাহিনী সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে। শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।”
তিনি আরও জানান, দেশজুড়ে প্রায় ছয় লাখ আনসার ও ভিডিপি সদস্য নির্বাচনী দায়িত্বে থাকবেন।
এরা সেনা, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে মাঠে কাজ করবে।
নিরাপত্তা মহড়া ও প্রশিক্ষণ: প্রস্তুতির বাস্তব রূপ
অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠিত মহড়ায় অংশ নেন ঢাকা মহানগর আনসারের চারটি জোনের ৩২০ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্য।
তারা ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ, ভোটার পরিচালনা, প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের সুরক্ষা, টহল ও জরুরি প্রতিক্রিয়া বিষয়ে বাস্তব অনুশীলন করেন।
এ সময় প্রশিক্ষণের প্রতিটি ধাপে নিরপেক্ষতা, মানবিক আচরণ ও দায়িত্ববোধ বজায় রাখার ওপর জোর দেওয়া হয়।
মানবিক দায়িত্ব ও তথ্যসচেতনতার আহ্বান
সিইসি নাসির উদ্দীন বলেন,
“সত্য যাচাই না করে শেয়ার করা মানে অন্যের ক্ষতি করা।
মিথ্যা তথ্য শুধু নির্বাচন নয়, মানুষের প্রতি বিশ্বাসকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। আমরা সবাই মিলে সত্য তথ্য প্রচার ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ গড়ে তুলি।”
তার এই বক্তব্যকে উপস্থিত অনেকে মানবিক নেতৃত্বের উদাহরণ হিসেবে দেখছেন—যেখানে রাজনৈতিক বা প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জনগণের সচেতনতা ও দায়িত্ববোধকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
একটি দায়িত্বশীল সমাজের দিকে পদক্ষেপ
ভুয়া তথ্যের যুগে সত্য যাচাইয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা এখন নাগরিক দায়িত্ব।
সিইসির এই আহ্বান কেবল নির্বাচনের জন্য নয়—এটি সমাজে মানবিক যোগাযোগ, তথ্যনির্ভর সচেতনতা ও সামাজিক সম্প্রীতি গড়ে তোলার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।