
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনই নির্ধারণ করবে বাংলাদেশের ভবিষ্যতের গতিপথ।
সোমবার জাতীয় নির্বাচনে আনসার-ভিডিপির ভোটকেন্দ্র নিরাপত্তা মহড়া ও ২০২৫-২৬ সালের ৪র্থ ধাপের আনসার কোম্পানি ও প্লাটুন সদস্যদের মৌলিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিদর্শন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সিইসি বলেন, “আমরা কোন পথে এগোব—গণতন্ত্রের পথে নাকি তার বাইরে—তা নির্ভর করছে এই নির্বাচনের ওপর। আমরা চাই একটি অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে, যাতে গণতন্ত্র আরও এগিয়ে যায়। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।”
তিনি আরও বলেন, “একটি সুন্দর নির্বাচন আয়োজন করতে হলে শুধু নির্বাচন কমিশন নয়—ভোটার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক—সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সবার সহযোগিতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।”
নিজেকে শুধু প্রধান নির্বাচন কমিশনার নয়, একজন নাগরিক হিসেবেও দায়িত্ববান উল্লেখ করে সিইসি বলেন, “নাগরিক হিসেবে আমার দায়িত্ব এই নির্বাচনকে সফল করা।”
আনসার-ভিডিপির প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে ‘বিনিয়োগ’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “আসন্ন নির্বাচনে আনসার-ভিডিপি বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রশিক্ষণ যত বৃদ্ধি পাবে, দায়িত্ব পালনে দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস তত বাড়বে।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া তথ্য ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর বিষয়ে সতর্ক করে সিইসি বলেন, “যাচাই ছাড়া কোনো তথ্য শেয়ার করবেন না। আনসার সদস্যরা তৃণমূল পর্যায়ে এ বিষয়ে সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে পারেন।”
তিনি জানান, ভুয়া তথ্য যাচাই ও প্রতিরোধে নির্বাচন কমিশনে একটি বিশেষ সেল গঠন করা হয়েছে।
এবারের নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাও ভোট দিতে পারবেন উল্লেখ করে সিইসি বলেন, “১৬ নভেম্বর থেকে ‘পোস্টাল ভোটিং অ্যাপ’ চালু হচ্ছে। এর মাধ্যমে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা নিবন্ধন করে ডাক ভোটে অংশ নিতে পারবেন। ভোটের ব্যালট তাদের ঠিকানায় পৌঁছে যাবে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা ভোট দিতে পারবেন।”
তিনি আরও জানান, প্রবাসী ভোটার ও আইনি হেফাজতে থাকা নাগরিকদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতেও নির্বাচন কমিশন বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
সিইসি আশা প্রকাশ করেন, প্রশিক্ষিত আনসার-ভিডিপি সদস্যরা দায়িত্বশীলভাবে কর্তব্য পালন করে দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।
অনুষ্ঠানে আনসার ও ভিডিপি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ জানান, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় সম্পূর্ণ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহৃত হবে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত আনসার সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে ইনসিডেন্ট রিপোর্ট ও ছবি আপলোড করবেন, যা সংশ্লিষ্ট রেসপন্স টিম—সেনাবাহিনী, পুলিশ বা আনসার—তাৎক্ষণিকভাবে দেখতে পাবে এবং দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, এবারের নির্বাচনে ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী তরুণ আনসার সদস্যরাই মূল দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের উদ্যম, দক্ষতা ও দায়িত্ববোধ নির্বাচনী নিরাপত্তায় নতুন মাত্রা যোগ করবে। পুরো মোতায়েন প্রক্রিয়া হবে ডিজিটাল এভিআইএমএস সফটওয়্যারের মাধ্যমে, যেখানে শতভাগ সদস্যের ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক থাকবে। গ্রুপভিত্তিক মোতায়েনের পুরনো পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে, যা নির্বাচনী স্বচ্ছতা আরও জোরদার করবে।