• হোম > অর্থনীতি > চলতি ২০২৫–২৬ মৌসুমে চায়ের নিলামে প্রতি কেজিতে গড় দাম প্রায় ২৬ টাকা বেড়েছে।

চলতি ২০২৫–২৬ মৌসুমে চায়ের নিলামে প্রতি কেজিতে গড় দাম প্রায় ২৬ টাকা বেড়েছে।

  • রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫, ১৬:০৮
  • ৩৫

---

উৎপাদন খরচের তুলনায় দীর্ঘদিন নিলামে কম দামে চা বিক্রি হওয়ায় কয়েক বছর ধরে লোকসানে ছিল দেশের চা বাগানগুলো। ২০২৪ সালে প্রথমবারের মতো নিলামে চা বিক্রির ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করে বাংলাদেশ চা বোর্ড। তবে তাতেও সংকট কাটেনি। এ কারণেই চলতি ২০২৫–২৬ মৌসুমে আবারও ন্যূনতম দর বাড়ানো হয়। ফলে এবার নিলামে প্রতি কেজি চায়ের গড় দাম আগের মৌসুমের তুলনায় প্রায় ২৬ টাকা বেড়েছে।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫–২৬ মৌসুমের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিলামে বিক্রি হয়েছে ৪ কোটি ১৭ লাখ ৪৬ হাজার কেজি চা, যার মোট মূল্য (শুল্ক ও মাশুল ব্যতীত) ৯৮৩ কোটি ১১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এ হিসাবে প্রতি কেজি চায়ের গড় মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৩৬ টাকা। তুলনামূলকভাবে ২০২৪–২৫ মৌসুমে একই সময়ে ৩ কোটি ৫৭ লাখ ৮১ হাজার কেজি চা বিক্রি হয়েছিল ৭৫৩ কোটি ৯৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকায়, যেখানে প্রতি কেজির গড় মূল্য ছিল ২১০ টাকার বেশি। অর্থাৎ, চলতি মৌসুমে গড় মূল্য বেড়েছে প্রায় ২৬ টাকা।

চট্টগ্রামে সর্বশেষ ২৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নিলামে প্রতি কেজি চায়ের গড় দাম ছিল ২৫৩ টাকা ২৬ পয়সা। তার আগে ২৪তম নিলামে গড় মূল্য ছিল ২৫৪ টাকা ৩৩ পয়সা। ধারাবাহিকভাবে ৭০ থেকে ৭৭ শতাংশ চা বিক্রি হওয়ায় বাগান মালিকরা আশা করছেন, নিলাম মৌসুমের শেষ পর্যন্ত ভালো দাম পাওয়া যাবে।

তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুনে চায়ের মানভেদে ন্যূনতম দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ৮৫ টাকা পর্যন্ত বাড়ায় চা বোর্ড। অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের চায়ের ন্যূনতম দাম নির্ধারণ করা হয় কেজিপ্রতি ২৪৫ টাকা এবং উত্তরাঞ্চলের বটলিফ চায়ের দাম ১৭০ টাকা। এই নতুন দর ১৪ মে বাণিজ্য উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঈদুল আজহার পর থেকে কার্যকর হয়।

চা বোর্ডের নথি অনুযায়ী, বাগান থেকে সরবরাহের পর ব্রোকার প্রতিষ্ঠানগুলো সাতটি গ্রেডে লিকার রেটিং নির্ধারণ করে। ৪ ও ৪ প্লাস মানের সিলেট ও চট্টগ্রামের চায়ের দাম কেজিপ্রতি ৩০০ থেকে বেড়ে ৩১৫ টাকা করা হয়েছে, বটলিফের দাম ২৯০ টাকা। ৪ মাইনাস চায়ের দাম ২৮০ থেকে বেড়ে ৩০৫ টাকা (বটলিফে ২৬০ টাকা), ৩ প্লাস প্লাস ও ৩ প্লাস মানের চায়ের দাম যথাক্রমে ২৯৫ ও ২৮৫ টাকা (বটলিফে ২৪০ ও ২৩০ টাকা) নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ৩ মানের চায়ের দাম বেড়ে ২৭৫ ও ২১০ টাকা হয়েছে, ৩ মাইনাসের দাম ২৬৫ ও ১৯৫ টাকা, ২ প্লাস চায়ের দাম ২৫৫ ও ১৭৫ টাকা, এবং ২ মানের চায়ের দাম ২৪৫ ও ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ চা সংসদের সভাপতি কামরান তানভিরুর ইসলাম বলেন, “চায়ের ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণের ফলে নিলামে দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল কৃষিনির্ভর এই শিল্প বৃহৎ শিল্পের মতো ১৪–১৫ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে টিকে থাকতে পারে না। নিলামনির্ভর এই ব্যবসায় ৩১টি বাগান এখনো লোকসানে রয়েছে। নগদ অর্থপ্রবাহ না থাকায় ঋণ পেতে উদ্যোক্তারা নানা জটিলতায় পড়ছেন। দ্রুত সমাধান না হলে আরও বাগান বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা আছে।”

তিনি আরও বলেন, “বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের আইসিআরআর সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা দূর না করে, তাহলে চা শিল্প নতুন অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে।”

বাজারসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নিলামে দাম বাড়ার প্রভাব ইতিমধ্যে খুচরা বাজারেও পড়েছে। মানভেদে দেশে চায়ের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে সর্বনিম্ন ৩০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা পর্যন্ত।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/6233 ,   Print Date & Time: Wednesday, 26 November 2025, 04:08:53 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh