• হোম > বিদেশ > যুক্তরাষ্ট্র চীনের জন্য যে সুযোগ তৈরি করেছে

যুক্তরাষ্ট্র চীনের জন্য যে সুযোগ তৈরি করেছে

  • রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫, ১২:১২
  • ৪৯

---

১৭৯৩ সালে ব্রিটেন থেকে লর্ড ম্যাকার্টনির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল চীনে পাঠানো হয়। প্রতিনিধি দলের একজন সদস্য পরবর্তীতে সফরটির সমালোচনা করে লিখেছিলেন—চীনে তাদের রাজকীয়ভাবে স্বাগত জানানো হয়েছিল, চিয়েনলুং সম্রাট তাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের ফিরতে হয়েছিল শূন্য হাতে। এটি সম্ভবত প্রমাণ করে যে চীনের সঙ্গে ব্যবসা করা সব সময়ই কঠিন ছিল। একই ধরনের অভিজ্ঞতা হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পেরও হয়েছে, যিনি গত বৃহস্পতিবার বুসানে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বহুল প্রত্যাশিত বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন। বৈঠক শেষে ট্রাম্প পুরোপুরি খালি হাতে ফিরেননি, তবে প্রত্যাশিত “বড় সুন্দর চুক্তি”ও স্বাক্ষরিত হয়নি। বেইজিং প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তারা ফেন্টানিল নামের কৃত্রিম মাদকের ওপর নিয়ন্ত্রণ কঠোর করবে। এর বিনিময়ে ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন যে চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক কমানো হবে। পাশাপাশি চীন জানিয়েছে, তারা চলতি বছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১ কোটি ২০ লাখ মেট্রিক টন সয়াবিন কিনবে এবং বিরল খনিজ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ শিথিল করবে।

তবে, এত কিছু সত্ত্বেও প্রত্যাশিত চুক্তি হয়নি। ট্রাম্প নিজেই বৈঠকটিকে সফল বলে দাবি করে বলেছেন, “শূন্য থেকে ১০-এর মধ্যে ১২ নাম্বার দেওয়া যায়।” বাস্তবে এই বৈঠকের মাধ্যমে দুই পরাশক্তি অন্তত সাময়িকভাবে বাণিজ্যযুদ্ধ থেকে বিরতি নিয়েছে, যা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। ট্রাম্প সম্প্রতি তাঁর প্রশাসনের চীনবিরোধী কঠোর নীতির পক্ষে থাকা ব্যক্তিদের সরিয়ে দিয়েছেন, যা দ্বন্দ্ব প্রশমনে সহায়ক হতে পারে। অন্যদিকে, এ বছরের শুরুর দিকে ট্রাম্প যখন চীনকে কঠোর সমালোচনা করেছিলেন, তা সি চিন পিংয়ের জন্য বরং অভ্যন্তরীণভাবে রাজনৈতিক সুবিধা বয়ে এনেছে। দীর্ঘদিন ধরে চীনের জনগণ তাদের নেতাদের সমালোচনা করে আসছিলেন, কারণ তারা যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরাশক্তির সঙ্গে সমানভাবে দাঁড়াতে পারছিলেন না। কিন্তু সি চিন পিং দেখাতে পেরেছেন, চীন এখন সত্যিকারের এক বৈশ্বিক শক্তি।

তবুও স্পষ্ট ও সার্বিক কোনো চুক্তির অভাব একটি বড় সমস্যা। চীন বিশ্বের অন্যতম কঠিন দর-কষাকষিকারী দেশ, যারা নিজেদের সময় ও কৌশলে আলোচনার পথ নির্ধারণ করে। বেইজিং কখনও তাদের “লাল সীমারেখা” অতিক্রম করে না, বরং যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ সৃষ্টি করে শুল্ক ও বাণিজ্যবিধি সহজ করার চেষ্টা করে। এরই মধ্যে চীন আমেরিকান সয়াবিনের বিকল্প বাজার খুঁজে পেয়েছে এবং নিজেদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াতে বড় উদ্যোগ নিয়েছে, যা সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কমিউনিস্ট পার্টির চতুর্থ প্লেনামেও পুনর্ব্যক্ত হয়েছে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, চীন এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত দুর্বলতা চিহ্নিত করতে পেরেছে এবং তা দর–কষাকষির টেবিলে কাজে লাগাচ্ছে। বিরল খনিজ এখন তাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। কয়েক বছর আগে জাপানের সঙ্গে দ্বন্দ্বে তারা এটি ব্যবহার করেছিল, আর এখন আরও ব্যাপকভাবে তা প্রয়োগ করছে। বিরল খনিজ আসলে খুব বেশি বিরল নয়, কিন্তু এর খনন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ অত্যন্ত কঠিন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এর বিকল্প উৎস সীমিত, এবং নিজেদের উৎপাদনক্ষমতা বাড়াতে তাদের বহু বছর সময় লাগবে।

সি চিন পিং যে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে অনেক দেরিতে সাক্ষাতে রাজি হয়েছেন, সেটিও এক প্রতীকী ইঙ্গিত বহন করে। এটি দেখায়, যুক্তরাষ্ট্র এখনো বড় শক্তি হলেও একতরফাভাবে সময় ও শর্ত নির্ধারণ করতে পারে না। চীন এখন সময়মতো ও কৌশলে খেলে নিজের অবস্থান মজবুত করছে। এ বছরের শুরুতে ট্রাম্পের চীনবিরোধী মন্তব্য আসলে সি চিন পিংয়ের জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়েছে, কারণ এটি দেশটির জনগণকে বিশ্বাস করিয়েছে যে চীন এখন যুক্তরাষ্ট্রের সমান পর্যায়ে পৌঁছেছে।

বেইজিংয়ের কৌশলগত আত্মবিশ্বাস এখন এতটাই দৃঢ় যে তাদের নীতিনির্ধারকরা ট্রাম্প–সি বৈঠক নিয়ে কোনো উদ্বেগই দেখাননি। তারা বিশ্বাস করছিলেন, বৈঠক থেকে একটি যৌক্তিক ফল আসবেই—শেষ পর্যন্ত সেটিই ঘটেছে। যদিও বাণিজ্যযুদ্ধবিরতি আবারও ভেঙে যেতে পারে, তবু চীনা নেতারা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার এখন এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রায় সমান হওয়ায় ভয়াবহ ক্ষতির সম্ভাবনা কম। ট্রাম্প কঠোর বক্তব্য দিলেও, বাস্তবে তিনি চীনের হাতে আন্তর্জাতিক পরিসরে মর্যাদা ও কৌশলগত শক্তি বাড়ানোর এক ঐতিহাসিক সুযোগ তুলে দিয়েছেন।


This page has been printed from Entrepreneur Bangladesh - https://www.entrepreneurbd.com/6229 ,   Print Date & Time: Wednesday, 26 November 2025, 07:30:43 AM
Developed by: Dotsilicon [www.dotsilicon.com]
© 2025 Entrepreneur Bangladesh